চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) চলমান পরিস্থিতি নিয়ে পাল্টাপাল্টা বিবৃতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও চবি ছাত্রদল। চাকসুর বিবৃতিতে ভিপিকে হামলা ও গালিগালাজের নিন্দা জানানো হয়েছে। অন্যদিকে ছাত্রদল তাদের যৌক্তিক আন্দোলনে ছাত্রশিবিরের হামলার অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে চাকসুর জিএস সাঈদ বিন হাবিব ও শাখা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক আবু হাসনাত মো. রুকনুদ্দিনের স্বাক্ষরিত পৃথক বিবৃতিতে বিষয়টি জানানো হয়।
চাকসুর বিবৃতিতে বলা হয়, সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) ছাত্রদল কর্তৃক প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝোলানো ইস্যুর সমাধান করার লক্ষ্যে চাকসু নেতৃবৃন্দ প্রশাসনিক ভবনের সামনে গেলে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা বাগ্বিতণ্ডায় লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে ছাত্রদল সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ আল নোমান চাকসু ভিপিকে উদ্দেশ্য করে অশ্রাব্য বাক্য ব্যবহার করে গালি দেয়। এমন অশ্রাব্য বাক্য ব্যবহার দেশের ছাত্ররাজনীতির জন্য চরম লজ্জার। ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর নির্বাচিত প্রতিনিধির সঙ্গে এমন অবমাননাকর ও ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছে এবং এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ওই ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানানোর পরও মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদানকালে চাকসুর ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনির দিকে শাখা ছাত্রদল সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন খুবই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে তেড়ে আসেন এবং অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। একটি ছাত্রসংগঠনের শীর্ষ নেতার কাছ থেকে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ অত্যন্ত নিন্দনীয়।
অপরদিকে, ছাত্রদলের বিবৃতিতে বলা হয়, উপ-উপাচার্যের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা প্রত্যাশা করেছিল, চাকসু সরাসরি বিবৃতি দিয়ে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ঘটনার ৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও চাকসুর পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য প্রদান করা হয়নি। বরং প্রশাসনের মদদে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে ছাত্রলীগীয় কায়দায় বাধা প্রদান করতে দেখা যায়। আন্দোলনকারীদের চাপের মুখে চাকসু নেতৃবৃন্দ প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। পরে তারা ছাত্রশিবির নেতাকর্মীদের নিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় প্রশাসনিক ভবনের উভয় পাশের সড়ক অবরোধ করেন। সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যুক্ত হতে চাইলে তাদের পথরোধ ও শারীরিকভাবে হামলা করা হয়। এ সময় নারী সাংবাদিকদেরও হেনস্তার ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি ও উসকানিমূলক স্লোগান দিতে থাকে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সুস্পষ্ট দাবি ছিল, সহ-উপাচার্য তার এই মন্তব্যের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইবেন এবং পদত্যাগ না করা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় দিবসের কোনো আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করবেন না। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও শহীদদের আত্মত্যাগ অবমাননাকারী সহ-উপাচার্যকে আলোচনা সভায় উপস্থিত থাকতে দেখে বাংলাদেশপন্থি শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা সভাস্থলে প্রবেশের চেষ্টা করলে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা তাতে বাধা দেন। এ সময় ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ-উপাচার্যকে মঞ্চ ত্যাগের অনুরোধ জানালেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে ছাত্রদলসহ বিভিন্ন বাংলাদেশপন্থি সংগঠন আলোচনা সভা বর্জন করতে বাধ্য হয়। দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় রাজনীতি করার ফলে ছাত্রশিবির তাদের পুরোনো লেজুড়বৃত্তি রাজনীতির স্বভাব পরিহার করতে পারেনি। অতীতে যেমন ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের বিপক্ষে প্রশাসনিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে হামলা ও সন্ত্রাস চালাত, বর্তমানে সেই একই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে ছাত্রশিবির। ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের রাজনীতি ধ্বংস করে তারা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
উপ-উপাচার্যের ক্ষমা প্রার্থনা ও পদত্যাগ দাবি করে ছাত্রদলের বিবৃতিতে বলা হয়, সহ-উপাচার্যের এই মন্তব্য ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে তার নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা ও পদত্যাগ দাবি করা হয়। পাশাপাশি তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সন্ত্রাসী কায়দায় শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন ও ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের রাজনীতিতে বাধা সৃষ্টি করলে ছাত্রশিবিরকেও ছাত্রলীগের পরিণতি ভোগ করতে হবে।







