তেজগাঁও কলেজের ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে আজ দুপুর ১টায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মূল ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি কলেজ গেট পর্যন্ত পৌঁছায়। বিভিন্ন চিত্র অঙ্কন, পোস্টার ও স্লোগানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান।
এ সময় শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ছাত্রদলের কর্মীরা বিভিন্ন কৌশলে আন্দোলনকারীদের ওপর ভয়-ভীতি প্রদর্শন করছে এবং তাদের নিয়ন্ত্রিত কিছু গণমাধ্যম শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। তবুও শিক্ষার্থীরা দুঃসাহসিকভাবে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
তেজগাঁও কলেজের ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থীদের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে আজ দুপুর ১টা থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়ে বলেন
১. এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের পেছনে যারা দায়ী তাদেরকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
২. অপরাজনীতি চর্চায় মনোনিবেশ নেতাদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করতে হবে।
৩.সাকিবসহ যতজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে তাদের সকলের চিকিৎসা খরচ কলেজ কর্তৃপক্ষের বহন করতে হবে।
৪. ছাত্রাবাসে রাজনৈতিক ছাত্র ছায়ায় যত অবৈধ আছে সেগুলো চিহ্নিত করে হোস্টেল থেকে বের করতে হবে এবং এর পূর্ণ জবাব ছাত্রাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক জহির স্যার সহ প্রশাসনকে দিতে হবে।
৫.তেজগাঁও কলেজের মাদকমুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা। সন্ত্রাসমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে হবে। কারন আমরা নিজ অর্থায়নে কলেজে পড়ালেখা করি এরপরেও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে আমাদের জীবন রক্ত কেন দিতে হবে?
প্রসঙ্গত, গতকাল গভীর রাতে তেজগাঁও কলেজ ছাত্রাবাসে একটি ছোট্ট তর্ক-বিতর্ক দ্রুত রূপ নেয় ভয়াবহ সংঘর্ষে।
ছাত্রদল সভাপতি তরুণের সমর্থক মোমেন ও তার সঙ্গীরা ছাত্রাবাসের ভিতরে নেশাজাত দ্রব্য (গাঁজা) সেবন করছিল বলে অভিযোগ উঠে। বিষয়টি দেখে সুইডেন আসলাম গ্রুপের সদস্য সিয়াম, ছোয়াদ, রাহাত ও নিলয় তাদের বাধা দেয় এবং জানায়—হলের ভেতরে নেশা সেবন কোনোভাবেই চলবে না।
এই সতর্কতার পর মোমেনের গ্রুপ বাইরে গিয়ে নিলয়কে মারধর করে। এর পরপরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে দুই গ্রুপের মধ্যে। আসলামের গ্রুপের কাছে তরুণ সেলিম, পিয়াস, রবিনসহ অনেকে মারধরের শিকার হন।
কিছুক্ষণ পর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে যখন ছাত্রদল সভাপতি তরুণ ও তার অনুসারীরা দলবল নিয়ে হলে হামলা চালায়। এতে অন্তত দুই থেকে তিনজন গুরুতর আহত হন।
সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে দুইজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের একজন তেজগাঁও কলেজের ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাকিব এবং অন্যজন ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাত, যিনি আসলামের গ্রুপের সদস্য।
রাত ১২টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ছাত্রাবাসে প্রবেশ করে এবং ভোর পর্যন্ত অবস্থান করে। তবুও কয়েকজন আহত শিক্ষার্থীর এখনো সঠিক খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে।
হলের নিয়মিত শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের অনুসারী আব্দুর রহমান আলী রাফি বলেন, “আমি ছাত্রদল করি, কিন্তু কারোর দালালি করি না। নিজেদের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানো রাজনীতির কাজ নয়। সাধারণ শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা যেখানে নেই, সে সংগঠন সুসংগঠিত হতে পারে না। আজকে কারো ওপর সন্ত্রাসের ট্যাগ দিতে গিয়ে নিজেরাই সন্ত্রাস হয়ে উঠেছেন। ইন্টারমিডিয়েটের একটি শিক্ষার্থী সন্ত্রাসী বলতে কী বোঝে? দুইজন হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর লড়াই করছে—এটা কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের কাজ হতে পারে না।”







