বিদ্যালয়ের মাঠে ঘুরছে শিক্ষার্থীরা। কেউ ভবনের উপর নিচে উঠছে নামছে। সকাল সাড়ে ৯টার পরেও কোনো শিক্ষক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেননি। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক চলে আসলেও কোনো কথা বলছেন না।
এমন ঘটনা দেখা যায় ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের বড়হিত ইউনিয়নের জুগিয়াখালি মনির উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
এভাবে চলছে উপজেলার আরেকটি বিদ্যালয়। এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে গতকাল রবিবার (৩০ নভেম্বর) মো. নাজির হোসেন রনি নামে একজন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
জানা গেছে, রূপসী বাংলা টেকনিক্যাল সেন্টারের ব্যানারে ঈশ্বরগঞ্জের বড়হিত ইউনিয়নের জুগিয়াখালি মনির উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাইজবাগ ইউনিয়নের উত্তর মাইজবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাসরুম দখল করে অবৈধভাবে দর্জি প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। গত ২১ নভেম্বর থেকে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে।
প্রথম দিনে ১০০ টাকার আবেদনপত্র দিয়ে দুই মাস মেয়াদী দর্জি প্রশিক্ষণ শুরু করা হয়। পরে ধাপে ধাপে ট্রেইনাররা প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা উঠাবেন এবং অনেক প্রশিক্ষণার্থী ইতোমধ্যে টাকাও দিয়েছেন।
অভিযোগ করে নাজির হোসেন রনি বলেন,পাশে গৌরীপুর উপজেলার পশ্চিম কাওরাট গ্রামের মো. মাহবুবুর রহমান ফয়সাল তার দলবল নিয়ে রূপসী বাংলা টেকনিক্যাল সেন্টারের ব্যানারে ঈশ্বরগঞ্জের বড়হিত ইউনিয়নের জুগিয়াখালি মনির উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাইজবাগ ইউনিয়নের উত্তর মাইজবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দখল করে অবৈধভাবে দর্জি প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে শিক্ষার্থীরা ক্লাস থেকে বঞ্চিত হয়ে এলোমেলোভাবে বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় ও রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা সকাল বিকাল দুই শিফটে ট্রেনিং কার্যক্রম পরিচালনা করে।
সম্প্রতি বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, একই পোশাক পরা দুইজন সকাল পৌনে দশটার দিকে ক্লাসরুম থেকে বের হচ্ছেন। সেই সঙ্গে বের হয়ে চলে যাচ্ছেন বেশ কয়েকজন নারী ও কিশোরী। তারা জানান, দুই মাসের চুক্তিতে তারা এখানে এসে সেলাই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। বিনিময়ে টাকা দিতে হবে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, রূপসী বাংলা ট্রেনিং সেন্টার যেহেতু সরকার কর্তৃক অনুমোদিত কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, তাহলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কীভাবে সরকারি স্কুলে এমন প্রশিক্ষণ পরিচালিত হচ্ছে? ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, সামনে বার্ষিক পরীক্ষা। এই সময়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসের ব্যাঘাত সৃষ্টি করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এতে ফলাফলে প্রভাব পড়বে।
প্রথম শ্রেণির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, কয়েক দিন ধরে তারা সময়মতো স্কুলে এলেও নিজেদের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করতে পারে না। এই জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা বাইরে ঘোরাফেরা করে চলে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান ফয়সাল নামে একজন বলেন, আমরা প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করেছি। স্কুল শুরু হওয়ার আগেই আমরা চলে যাই।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জুগিয়াখালী মনির উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আমিরুল হক বলেন, আমার কাছ থেকে অফ টাইমে প্রশিক্ষণ ক্লাস চালু করার অনুমতি নিয়েই স্কুলে দর্জি প্রশিক্ষণ হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আহমেদ বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাহিরের কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ চালু করার নিয়ম নেই। এ নিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্ট স্কুলপ্রধানদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা বিষয়টি অস্বীকার করে। তবে আমরা বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) সানজিদা রহমান বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। (নিউজ ও ছবি কালের কণ্ঠ)







