ফিলিপিন্সের মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ‘কালমেগি’ আঘাতে অন্তত ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, নিখোঁজ রয়েছেন আরও ২৬ জন। দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তরের বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ে কয়েক লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যাদের অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ভোরে আঘাত হানে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়টি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দেশটির জনবহুল কেন্দ্রীয় দ্বীপ সেবুতে, যেখানে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, অনেকে ছাদের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন। রাস্তায় ভেসে গেছে গাড়ি ও বড় বড় কনটেইনার।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তরের উপ-প্রশাসক রাফায়েলিতো আলেহান্দ্রো স্থানীয় একটি রেডিও সাক্ষাৎকারে বুধবার সর্বশেষ হতাহতের তথ্য দেন।
অন্যদিকে, সেবু থেকে দক্ষিণে মিন্ডানাও দ্বীপে ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেওয়া একটি সামরিক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় পড়ে ছয় ক্রু সদস্য নিহত হয়েছেন।
দেশটির বিমানবাহিনী জানিয়েছে, মঙ্গলবার আগুসান দেল সুর এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। পরবর্তীতে উদ্ধারকারী দল ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করে।
স্থানীয়ভাবে ‘টিনো’ নামে পরিচিত কালমেগি বর্তমানে কিছুটা দুর্বল হলেও এখনো ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছে। বুধবারের মধ্যে এটি ভিসায়াস অঞ্চল পেরিয়ে দক্ষিণ চীন সাগরের দিকে অগ্রসর হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া দপ্তর।
সেবু প্রদেশের গভর্নর পামেলা বারিকুয়াত্রো বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম ঝড়ের হাওয়া হবে সবচেয়ে বিপজ্জনক অংশ, কিন্তু প্রকৃত বিপদ এসেছে পানির দিক থেকে। এই বন্যা এক কথায় বিধ্বংসী।’ তিনি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেবু প্রদেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, অধিকাংশ মৃত্যুর কারণ ডুবে যাওয়া। প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢল নেমে এসেছে, যা গ্রাম ও শহর প্লাবিত করেছে।
সেবু শহরে বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, ছোট ছোট ভবন ভেসে গেছে, রাস্তায় জমেছে পুরু কাদার স্তর। উদ্ধারকর্মীরা নৌকা নিয়ে ঘরে আটকে পড়াদের সরিয়ে নিচ্ছেন।
সেবু সিটির ২৮ বছর বয়সী ডন দেল রোসারিও বলেন, ‘আমি সারা জীবন এখানে আছি, কিন্তু এমন ভয়াবহ ঝড় কখনো দেখিনি।’
জাতীয় দুর্যোগ সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত ৪ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
প্রতিবছর গড়ে ২০টি টাইফুন আঘাত হানে ফিলিপিন্সে। মাত্র এক মাস আগেই ‘রাগাসা’ (স্থানীয় নাম নান্দো) এবং ‘বুয়ালয়’ (স্থানীয় নাম ওপং) নামের দুটি টাইফুন আঘাত হেনে অন্তত এক ডজন মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় এবং কৃষি ও অবকাঠামোতে বড় ধরণের ক্ষতি করে।
এর আগে দীর্ঘ বর্ষা মৌসুমে দেশজুড়ে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। অপরিকল্পিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত অবকাঠামো নির্মাণকে দায়ী করে তখন সরকারবিরোধী বিক্ষোভও হয়েছিল।
সেপ্টেম্বরের শেষে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে মধ্য ফিলিপিন্সে অন্তত ৬৯ জন নিহত হন, যার প্রভাবও সবচেয়ে বেশি পড়ে সেবুতে।





