সিভিল সার্জন পরিক্ষার্থীরা গভীর রাতে চিকিৎসকের বাসায়, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ

Post Image



কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসে নিয়োগ প্রত্যাশী প্রায় ৪০ জন পরিক্ষার্থীকে গভীর রাতে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসাপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. হোসেন ইমামের নিউ সান ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও পাশের একটি চারতলা ভবন এবং তার বাসায় নিয়ে প্রশ্নফাঁস করে পড়িয়ে পরীক্ষা দেওয়ানোর অভিযোগ উঠেছে। 


গভীর রাতে তিনটি ভাড়াকৃত এ্যাম্বুলেন্স, সিএনজি ও মোটর সাইকেলে করে এনে এসব পরীক্ষার্থীকে নিউ সান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পাশের চারতলা ভবনটিতে রাখা হয়। পরে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে ওইসব পরীক্ষার্থীকে তার মাগুর মাছের পুকুর এলাকার বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরীক্ষার্থীদের নিয়ে আসার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি ডা. ইমামের বড়ো ভাই নান্নু উপস্থিত থেকে নিউ সান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম ও বিশ্বস্ত কর্মচারী সুরুজের মাধ্যমে করা হয়। এভাবে নিয়োগ বাণিজ্য করতে পরীক্ষার্থী প্রতি সাথে ১৬-২২ লক্ষ টাকায় চুক্তি করা হয়। দুইটা ব্যাংক চেক ও তিনটা ১০০ টাকার স্টাম্প জিম্মি রেখে এসব পরীক্ষার্থীকে ফাঁসকৃত প্রশ্ন পড়ানো হয় বলে নাম পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেন।


শুক্রবার (২৪ অক্টোবর )  সকাল ১০ টায় সিভিল সার্জনের নির্ধারিত শহরের কেন্দ্র গুলোতে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ১১৫ টি পদে কর্মচারী নিয়োগের এ বিতর্কিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। 


গোপন সূত্রের মাধ্যমে এ্যাম্বুলেন্স যোগে কুষ্টিয়ার  দৌলতপুর উপজেলার কুচিয়ামোড়া ও ভেড়ামারা উপজেলার পরানপুর এলাকা থেকে সিভিল সার্জন অফিসে বিভিন্ন পদে নিয়োগ প্রত্যাশী পরিক্ষার্থীদের এনে ফাঁসকৃত প্রশ্ন পড়ানো অথবা গোপনে পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে তথ্য পায় টিম 'আপডেট কুষ্টিয়া'। এর প্রেক্ষিতে টিম 'আপডেট কুষ্টিয়া'র সদস্যরা দৌলতপুর, ভেড়ামারা, মিরপুর, ত্রিমোহনী, মঙ্গলবাড়িয়া, মজমপুর, বটতৈল মোড় হাসপাতাল সহ বেশ কয়েকটি স্থানে অবস্থান নেয়। 


সূত্রের তথ্যানুযায়ী এ্যাম্বুলেন্স এসে থামে নিউসান ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও পার্শ্ববর্তী নিউরন কোচিং সেন্টারের গলির মধ্যে। প্রথমে সেখানেই ১০/১২ জন পরীক্ষার্থী খুব নীরবে নামিয়ে পাশের চারতলা ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে সকাল ৬:১০টা  থেকে ৬:২০ টার দিকে তাদের ডা. ইমামের বাড়ির উদ্দেশ্যে বের করে দেওয়া হয়। নিউসান ডায়াগনস্টিকের ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম এক নারী পরীক্ষার্থীকে তার বাইকে করে নিয়ে যান। বাকিরা পায়ে হেঁটে যান। 


এর কিছুক্ষণ পরে পরীক্ষার্থী বহনকারী আরেকটি এ্যাম্বুলেন্স এসে হাজির হয়। কিন্তু প্রতিবেদকদের চোখ ফাঁকি দিতে ওই এ্যাম্বুলেন্সের পরীক্ষার্থীর নিউসানে না নামিয়ে কলেজ মোড়-পুরাতন কাটাইখানা মোড়-জামতলা মোড় ঘুরিয়ে মাগুর মাছের পুকুর এলাকায় ডা. ইমামের বাড়ির সামনে আনা হয়। জামতলা মোড় থেকে একজন পরীক্ষার্থীকে এ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়। এরপর ডা. ইমামের বাড়ির প্রধান ফটক (গেট) খুলে এ্যাম্বুলেন্স থেকে প্রবেশপত্র হাতে বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থীকে তার বাসায় ঢুকতে দেখা যায়। এসময় ডা. ইমামের বড়ো ভাই নান্নু ওই শিক্ষার্থীদের সাথে উপস্থিত ছিলেন। এ দৃশ্যটি টিম 'আপডেট কুষ্টিয়া' গোপন ক্যামেরায় ধারণ করেন। 


পরে আরও কয়েকটি সুনামধন্য গণমাধ্যমের কর্মীরা ওই বাড়ির সামনের গলিতে মারুফ হোসেন (রোল: ২৪১৭১১০০০৩৫) নামে একজন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রবেশ পত্র, আবেদনপত্র  সহ অন্যান্য কাগজপত্র নেওয়ার সময় নান্নু ধরা পড়ে। এসময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আত্মীয় বলে পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিচয় দেন। এরপর থেকে টিম 'আপডেট কুষ্টিয়া' সহ অন্যান্য গণমাধ্যম কর্মীরা অভিযুক্তদের বাড়ির সামনে অবস্থান নেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্ত নান্নু প্রতিবেদকদের সাথে তর্কে জড়ানোর চেষ্টা করেন। এবং বিভিন্ন লোকজন ডেকে আনাগোনা করাতে থাকে। তবে প্রতিবেদকরা সকল বাঁধা অতিক্রম করে সেখানেই অবস্থান করেন। এক পর্যায়ে পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে আসলে একজন,দুইজন করে পরীক্ষার্থীদের বাইরে বের করতে থাকেন। প্রতিবেদকরা তাদের সাথে কথা বলে পরীক্ষার্থী বলে নিশ্চিত হন। এর প্রায় ১৫ মিনিট পরে প্রায় এক ডজন পরীক্ষার্থীকে একসাথে বের করে দেন। পরীক্ষার্থীরা বের হয়ে সাংবাদিক দেখে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। কেউ কেউ দৌড়ে পালিয়ে যায়। তারপরও প্রতিবেদকরা কয়েকজন পরীক্ষার্থীর সাথে কথা বলতে সক্ষম হয়।


এবং সবাই সিভিল সার্জন অফিসে নিয়োগ প্রত্যাশী পরিক্ষার্থী বলে নিশ্চিত হয়। তবে ভেতরে তাদের ফাঁসকৃত প্রশ্ন পড়ানো হয়েছে বলে নাম,পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদককে জানান এক পরিক্ষার্থী।


এছাড়াও বেশ কয়েকটি বিশ্বস্ত গোপন সূত্রে জানা যায়, অনেক রুমে পরিক্ষার্থীরা অস্বাভাবিকভাবে কম সময়ের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করেছেন। কেউ কেউ প্রশ্ন ফেলে শুধুমাত্র উত্তরপত্রের বৃত্ত ভরাট করছিলেন। বেশকিছু পরিক্ষার্থী দেড় ঘন্টার পরীক্ষা আধা ঘন্টায় শেষ করেছেন বলেও সূত্রগুলো জানায়।


অভিযুক্ত নান্নু প্রতিবেদককে জানান, তার আত্মীয় স্বজনরা তার বাসায় থেকে  পরীক্ষা দিতে এসেছেন। কিন্তু এতো আত্মীয়-স্বজন একই চাকরির ক্যান্ডিডেট হলো কিভাবে সে প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।


এবিষয়ে জানতে প্রতিবেদক কুষ্টিয়া' ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসাপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. হোসেন ইমামের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকার কল দিয়ে চেষ্টা করলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।


এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন(,সিএস) শেখ মুহাম্মদ কামাল হোসেন এর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

সর্বাধিক পঠিত

সিভিল সার্জন পরিক্ষার্থীরা গভীর রাতে চিকিৎসকের বাসায়, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ

মির্জা ফখরুলের গণসমাবেশে যোগ দিচ্ছেন না জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ

চট্টগ্রামে বিএনপির প্রচারণায় গুলি, নিহত ১

রাবির তিন শিক্ষক বরখাস্ত, দুই শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিলসহ তিন জন বহিষ্কার‎‎

খাগড়াছড়িতে ছাত্রশিবির নেতা-কর্মীদের বিএনপিতে যোগদানের মিথ্যা তথ্যের প্রতিবাদ

বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ ছাত্রদল নেতা আটক

রামগতিতে চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রদল নেতাসহ কোস্ট গার্ডের হাতে ৩ জন আটক

নারীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কোনো দয়া নয়, এটা অধিকার

শাহবাগ ব্লকেড করেছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা , যান চলাচল বন্ধ

নির্বাচনের আগে গণভোট করার যৌক্তিকতা নেই, প্রয়োজনও নেই: সালাহউদ্দিন