ঢাকা ০৭:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

বছর শেষে রিজার্ভে আইএমএফের শর্ত পূরণ হয়নি বাংলাদেশের

বছর শেষে রিজার্ভে আইএমএফের শর্ত পূরণ হয়নি বাংলাদেশের

সদ্য বিদায়ী বছর শেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী নিট বা প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। আইএমএফ বাংলাদেশকে যে ঋণ দিয়েছে সেই নথিপত্র অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে প্রকৃত রিজার্ভ থাকার কথা ছিল ১ হাজার ৭৭৮ কোটি মার্কিন ডলার। তবে বছর শেষে প্রকৃত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার ৬৭৫ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রকৃত রিজার্ভ হলো দায়হীন রিজার্ভ। প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব কীভাবে হবে, সেই সূত্রও ঋণ দেওয়ার সময় বাংলাদেশকে জানিয়ে দিয়েছিল আইএমএফ। সংস্থাটি ঋণের শর্ত হিসেবে নির্দিষ্ট সময় পরপর কী পরিমাণ প্রকৃত রিজার্ভ রাখতে হবে, তা-ও ঠিক করে দেয়। সেই অনুযায়ী, প্রতি তিন মাস পরপর আইএমএফের শর্ত মেনে রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে হচ্ছে।

এর আগে গত সেপ্টেম্বরেও আইএমএফ শর্ত অনুযায়ী রিজার্ভের লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে বাংলাদেশের অনুরোধে রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্য কমিয়ে দেয় সংস্থাটি। ডিসেম্বর শেষে সংশোধিত লক্ষ্যও অর্জন করা সম্ভব হয়নি।

আইএমএফ ঋণের শর্ত হিসেবে ডিসেম্বর শেষে প্রকৃত রিজার্ভ ধারণের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু বছর শেষে প্রকৃত রিজার্ভ তার কম।

প্রকৃত রিজার্ভ হলো আইএমএফের এসডিআর খাত, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে রাখা ডলার ও এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকুর বিলের জন্য জমা থাকা ডলার বাদ দিয়ে যে হিসাব হয়, সেই রিজার্ভ। এর বাইরে রিজার্ভের আরও দুটি হিসাব রয়েছে। তার একটি হলো মোট রিজার্ভ। আরেকটি আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রক্ষিত রিজার্ভ। গত বছর শেষে মোট রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। তবে আইএমএফের চাওয়া শুধু নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ কত হবে, সেটা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি রিজার্ভ ১৭ বিলিয়নের ওপর রাখতে। সেটা সম্ভব হয়েছে। নিট রিজার্ভ এখন ১৭ বিলিয়নের ওপরেই রয়েছে। আইএমএফ যেটা বলেছে সেটা সময়ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা। রিজার্ভ এর কম বা বেশি হতেই পারে। লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ ব্যাংকের যত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন ছিল, তা নিয়েছে।’

ডলার-সংকটের মধ্যে আর্থিক হিসাব ও চলতি হিসাবে ঘাটতি হলে ২০২২ সালের জুলাইয়ে আইএমএফের কাছে ঋণ চায় বাংলাদেশ। ছয় মাস পর সংস্থাটি গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ও গত মাসে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।

ঋণ দেওয়ার সময় আর্থিক খাতে নানা সংস্কারের পাশাপাশি বেশ কিছু শর্তও জুড়ে দেয় আইএমএফ। শর্ত অনুযায়ী গত জুন শেষে নিট রিজার্ভ থাকার কথা ছিল ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার। কিন্তু ওই সময় তা ছিল ২ হাজার ৪৭ কোটি ডলার। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সংস্থাটিকে জানানো হয়, আগামী সংসদ নির্বাচনের পর রিজার্ভ ও রাজস্ব আয় অর্জনের শর্ত পূরণ সম্ভব হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আইএমএফ রিজার্ভ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে শর্ত কিছুটা শিথিল করে।

আইএমএফের নতুন শর্ত অনুযায়ী, ডিসেম্বরে প্রকৃত রিজার্ভ রাখার কথা ১ হাজার ৭৭৮ কোটি ডলার। আগামী মার্চে তা ১ হাজার ৯২৬ কোটি ডলার ও জুনে ২ হাজার ১০ কোটি ডলারে উন্নীত করতে হবে। তবে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান আর্থিক খাতসংশ্লিষ্টরা।

এদিকে দেড় বছর ধরে চলা ডলার-সংকট এখনো কাটেনি। ব্যাংকে প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কেনায় ডলারের দাম এখন ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা ও আমদানিতে ১১০ টাকা। তবে বাস্তবতা হলো ব্যাংকগুলো এখন ১২২-১২৩ টাকা দামে ডলার কিনছে। বিক্রি করছে আরও বেশি দামে।

এই সরকার ভুলে গেছে, তারা বিপ্লবী সরকার: হাসনাত

বছর শেষে রিজার্ভে আইএমএফের শর্ত পূরণ হয়নি বাংলাদেশের

আপডেট সময় ০১:২৭:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারী ২০২৪

সদ্য বিদায়ী বছর শেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী নিট বা প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। আইএমএফ বাংলাদেশকে যে ঋণ দিয়েছে সেই নথিপত্র অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে প্রকৃত রিজার্ভ থাকার কথা ছিল ১ হাজার ৭৭৮ কোটি মার্কিন ডলার। তবে বছর শেষে প্রকৃত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার ৬৭৫ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রকৃত রিজার্ভ হলো দায়হীন রিজার্ভ। প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব কীভাবে হবে, সেই সূত্রও ঋণ দেওয়ার সময় বাংলাদেশকে জানিয়ে দিয়েছিল আইএমএফ। সংস্থাটি ঋণের শর্ত হিসেবে নির্দিষ্ট সময় পরপর কী পরিমাণ প্রকৃত রিজার্ভ রাখতে হবে, তা-ও ঠিক করে দেয়। সেই অনুযায়ী, প্রতি তিন মাস পরপর আইএমএফের শর্ত মেনে রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে হচ্ছে।

এর আগে গত সেপ্টেম্বরেও আইএমএফ শর্ত অনুযায়ী রিজার্ভের লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে বাংলাদেশের অনুরোধে রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্য কমিয়ে দেয় সংস্থাটি। ডিসেম্বর শেষে সংশোধিত লক্ষ্যও অর্জন করা সম্ভব হয়নি।

আইএমএফ ঋণের শর্ত হিসেবে ডিসেম্বর শেষে প্রকৃত রিজার্ভ ধারণের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু বছর শেষে প্রকৃত রিজার্ভ তার কম।

প্রকৃত রিজার্ভ হলো আইএমএফের এসডিআর খাত, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে রাখা ডলার ও এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকুর বিলের জন্য জমা থাকা ডলার বাদ দিয়ে যে হিসাব হয়, সেই রিজার্ভ। এর বাইরে রিজার্ভের আরও দুটি হিসাব রয়েছে। তার একটি হলো মোট রিজার্ভ। আরেকটি আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রক্ষিত রিজার্ভ। গত বছর শেষে মোট রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। তবে আইএমএফের চাওয়া শুধু নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ কত হবে, সেটা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি রিজার্ভ ১৭ বিলিয়নের ওপর রাখতে। সেটা সম্ভব হয়েছে। নিট রিজার্ভ এখন ১৭ বিলিয়নের ওপরেই রয়েছে। আইএমএফ যেটা বলেছে সেটা সময়ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা। রিজার্ভ এর কম বা বেশি হতেই পারে। লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ ব্যাংকের যত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন ছিল, তা নিয়েছে।’

ডলার-সংকটের মধ্যে আর্থিক হিসাব ও চলতি হিসাবে ঘাটতি হলে ২০২২ সালের জুলাইয়ে আইএমএফের কাছে ঋণ চায় বাংলাদেশ। ছয় মাস পর সংস্থাটি গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ও গত মাসে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।

ঋণ দেওয়ার সময় আর্থিক খাতে নানা সংস্কারের পাশাপাশি বেশ কিছু শর্তও জুড়ে দেয় আইএমএফ। শর্ত অনুযায়ী গত জুন শেষে নিট রিজার্ভ থাকার কথা ছিল ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার। কিন্তু ওই সময় তা ছিল ২ হাজার ৪৭ কোটি ডলার। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সংস্থাটিকে জানানো হয়, আগামী সংসদ নির্বাচনের পর রিজার্ভ ও রাজস্ব আয় অর্জনের শর্ত পূরণ সম্ভব হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আইএমএফ রিজার্ভ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে শর্ত কিছুটা শিথিল করে।

আইএমএফের নতুন শর্ত অনুযায়ী, ডিসেম্বরে প্রকৃত রিজার্ভ রাখার কথা ১ হাজার ৭৭৮ কোটি ডলার। আগামী মার্চে তা ১ হাজার ৯২৬ কোটি ডলার ও জুনে ২ হাজার ১০ কোটি ডলারে উন্নীত করতে হবে। তবে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান আর্থিক খাতসংশ্লিষ্টরা।

এদিকে দেড় বছর ধরে চলা ডলার-সংকট এখনো কাটেনি। ব্যাংকে প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কেনায় ডলারের দাম এখন ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা ও আমদানিতে ১১০ টাকা। তবে বাস্তবতা হলো ব্যাংকগুলো এখন ১২২-১২৩ টাকা দামে ডলার কিনছে। বিক্রি করছে আরও বেশি দামে।