ঢাকা ০২:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এম আর লিটন

বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণের পথে

  • ফখরুল ইসলাম
  • আপডেট সময় ০৫:১৩:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • 47

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ছিল আমাদের জাতিগত পরিচয়ের প্রথম বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। এ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছিলাম মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা। ওই আন্দোলন পরবর্তী সময় আমাদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চেতনায় গভীরভাবে প্রভাব ফেলে।

এর ধারাবাহিকতায়, একাত্তরের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীন বাংলাদেশ, একটি মানচিত্র ও লাল-সবুজের পতাকা। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান লক্ষ্য ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের মর্যাদা এবং অধিকার সংরক্ষিত থাকবে।

স্বাধীনতার পর, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করা হয়, যেখানে রাষ্ট্র পরিচালনার চারটি মূলনীতি নির্ধারণ করা হয়েছিল—জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। ওই সংবিধানটি ছিল এক অসাধারণ দলিল।

ওই চার মূলনীতি একটি উন্নত, সমৃদ্ধশালী ও সমতাভিত্তিক বাংলাদেশের রূপরেখা নির্দেশ করে। কিন্তু স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়ে যাওয়ার পরও আমরা ওই নীতিমালা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারিনি। আজও সমাজে বৈষম্য, দারিদ্র্য ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজমান। আমরা ধীরে ধীরে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে যাচ্ছি।

সম্প্রতি দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়েছে। জুলাইয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে বিক্ষোভ দমনে সরকারের সহিংস ভূমিকার কারণে কয়েকশ নিরস্ত্র নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন হাজারো ছাত্র-জনতা। এক মাসের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এতে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।

ছাত্র-জনতার এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে দেশে বিভিন্ন ধরনের সংস্কারের প্রস্তাব উঠে আসছে। তবে এই সংস্কারের প্রকৃত দিকনির্দেশনা কিংবা মূলনীতি এখনো স্পষ্টভাবে নির্ধারিত হয়নি। এর মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু মূল প্রশ্ন হচ্ছে—মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত লক্ষ্যগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে?

আমাদের বিশ্বাস, যদি দেশ সংস্কারের উদ্যোগ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি—সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার—বাস্তবায়ন করা যায়, তবে দেশে আর কোনো নতুন সংস্কারের প্রয়োজন হবে না। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ভিত্তিতে যদি আমরা একটি সুষ্ঠু ও স্থিতিশীল সমাজ গড়ে তুলতে পারি, তবে আমাদের ভবিষ্যৎ হবে আরও উজ্জ্বল এবং স্থায়ী উন্নয়ন সম্ভব হবে।

মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত স্বপ্ন ছিল একটি বৈষম্যহীন, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। ওই স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রয়োজন সঠিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। যার মাধ্যমে একটি সাম্যভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। স্বাধীনতা ‘অর্জন করার চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন’—এ সত্য আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রেখে দেশের উন্নয়নের পথে অগ্রসর হওয়াই হবে প্রকৃত দেশ সংস্কার। এতেই একটি সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত থাকবে।

দেশের সমৃদ্ধি ও প্রকৃত উন্নয়ন মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত লক্ষ্যগুলোর বাস্তবায়নের মধ্যেই নিহিত। দেশকে সংস্কার করতে হলে আগে আমাদের সংবিধানের মূলনীতিগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। তখনই আমরা সত্যিকার অর্থে একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো। আর এটিই হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রকৃত প্রতিফলন।

এম আর লিটন।। গণমাধ্যমকর্মী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট

মাহমুদ উল্লাহর বিদায়ী ম্যাচে বড় হার টাইগারদের

এম আর লিটন

বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণের পথে

আপডেট সময় ০৫:১৩:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ছিল আমাদের জাতিগত পরিচয়ের প্রথম বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। এ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছিলাম মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা। ওই আন্দোলন পরবর্তী সময় আমাদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চেতনায় গভীরভাবে প্রভাব ফেলে।

এর ধারাবাহিকতায়, একাত্তরের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীন বাংলাদেশ, একটি মানচিত্র ও লাল-সবুজের পতাকা। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান লক্ষ্য ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের মর্যাদা এবং অধিকার সংরক্ষিত থাকবে।

স্বাধীনতার পর, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করা হয়, যেখানে রাষ্ট্র পরিচালনার চারটি মূলনীতি নির্ধারণ করা হয়েছিল—জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। ওই সংবিধানটি ছিল এক অসাধারণ দলিল।

ওই চার মূলনীতি একটি উন্নত, সমৃদ্ধশালী ও সমতাভিত্তিক বাংলাদেশের রূপরেখা নির্দেশ করে। কিন্তু স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়ে যাওয়ার পরও আমরা ওই নীতিমালা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারিনি। আজও সমাজে বৈষম্য, দারিদ্র্য ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজমান। আমরা ধীরে ধীরে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে যাচ্ছি।

সম্প্রতি দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়েছে। জুলাইয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে বিক্ষোভ দমনে সরকারের সহিংস ভূমিকার কারণে কয়েকশ নিরস্ত্র নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন হাজারো ছাত্র-জনতা। এক মাসের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এতে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।

ছাত্র-জনতার এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে দেশে বিভিন্ন ধরনের সংস্কারের প্রস্তাব উঠে আসছে। তবে এই সংস্কারের প্রকৃত দিকনির্দেশনা কিংবা মূলনীতি এখনো স্পষ্টভাবে নির্ধারিত হয়নি। এর মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু মূল প্রশ্ন হচ্ছে—মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত লক্ষ্যগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে?

আমাদের বিশ্বাস, যদি দেশ সংস্কারের উদ্যোগ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি—সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার—বাস্তবায়ন করা যায়, তবে দেশে আর কোনো নতুন সংস্কারের প্রয়োজন হবে না। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ভিত্তিতে যদি আমরা একটি সুষ্ঠু ও স্থিতিশীল সমাজ গড়ে তুলতে পারি, তবে আমাদের ভবিষ্যৎ হবে আরও উজ্জ্বল এবং স্থায়ী উন্নয়ন সম্ভব হবে।

মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত স্বপ্ন ছিল একটি বৈষম্যহীন, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। ওই স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রয়োজন সঠিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। যার মাধ্যমে একটি সাম্যভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। স্বাধীনতা ‘অর্জন করার চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন’—এ সত্য আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রেখে দেশের উন্নয়নের পথে অগ্রসর হওয়াই হবে প্রকৃত দেশ সংস্কার। এতেই একটি সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত থাকবে।

দেশের সমৃদ্ধি ও প্রকৃত উন্নয়ন মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত লক্ষ্যগুলোর বাস্তবায়নের মধ্যেই নিহিত। দেশকে সংস্কার করতে হলে আগে আমাদের সংবিধানের মূলনীতিগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। তখনই আমরা সত্যিকার অর্থে একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো। আর এটিই হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রকৃত প্রতিফলন।

এম আর লিটন।। গণমাধ্যমকর্মী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট