ঢাকা ০৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বড় প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও অজানা আতঙ্কে বিএনপি

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান বিএনপির জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনীতির মাঠে বিএনপির দৃশ্যমান শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। আগামী দিনে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ রয়েছে দলটির। কিন্তু নিজ দলের নেতাকর্মীদের দখল, চাঁদাবাজি ও ১/১১ কেন্দ্রিক কিছু কুশীলবের সক্রিয় হওয়া নিয়ে অজানা আতঙ্ক ভর করছে দলটিতে।

গত কিছুদিন ধরে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যেও আতঙ্কের বিষয়টি উঠে এসেছে। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলের সুযোগ-সন্ধানী নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বে মেতেছে। তাদের কারণে দলের ভাবমূর্তি যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি গত ১৭ বছরে বিএনপির ওপর জুলুম-নিপীড়নের মধ্য দিয়ে যে ইতিবাচক ইমেজ তৈরি হয়েছিল, সেটিও ম্লান হচ্ছে।

তাদের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে আমাদের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল। তাদের মোকাবিলায় বিভিন্ন সময় নানা কৌশল গ্রহণ করতে হয়েছে। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে রাজনীতিতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা পূরণে অদৃশ্য এক শক্তি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তৎকালীন ১/১১ সরকারের কিছু কুশীলব। যারা বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরণ করতে চেয়েছিল। এখন ওই ধরনের একটি গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এছাড়া স্বৈরাচারের পতন হলেও তাদের সুবিধাভোগীরা এখনও রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছেন। সবমিলিয়ে অদৃশ্য শক্তির অজানা আতঙ্ক ভর করেছে বিএনপি শীর্ষ নেতাদের মনোজগতে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘বিএনপির মধ্যে কোনো আতঙ্ক নেই। তবে, আওয়ামী লীগ ঘেঁষা কিছু বুদ্ধিজীবী, যাদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য জনগণের মধ্য থেকে চাপ তৈরি হচ্ছে, তারা বিএনপিকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ চলে গেলেও, তাদের দোসররা এখনও রয়ে গেছে। তাদের কাছে এখনও বৈধ-অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। তারা দেশকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘হঠাৎ করে যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হবে, এটি কারও মাথায় আসেনি। ফলে, গত ১৫ বছরে নানাভাবে নিপীড়নের শিকার নেতাকর্মীদের একটি ক্ষুদ্র অংশ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে। যদিও দল তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। তারপরও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার কারণে দল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজি এবং নিজেদের মধ্যে খুনাখুনিতে জড়িত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। রাজনৈতিকভাবে এখন বিএনপির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে জামায়াত। যারা বিগত দিনগুলোতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে রাজনীতি করে গেছে। অথচ তারা (বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী) সবচেয়ে বেশি সুবিধা নিয়েছে বিএনপির কাছ থেকে। তাদের জন্য বিএনপি অতীতে দেশে-বিদেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হয়েছে দুর্নামের ভাগীদার। এখন তারাই আমাদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে।’

নাম প্রকাশ না করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগ পতন হলেও গত ১৫ বছরে তাদের সুবিধাভোগী পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবিসহ আমলাদের অনেকে এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন নানা জায়গায়। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগীরা এখনও বিভিন্ন জায়গায় নিয়োগ পাচ্ছেন। তাদের পাশাপাশি ১/১১ সরকারের কুশীলবদের এখন আবার সক্রিয় হতে দেখতে পাচ্ছি। যাদের প্রধান এজেন্ডা হলো বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করা। এখানে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা। এজন্য বিএনপির শীর্ষ-পর্যায় থেকে সবাইকে অদৃশ্য এ শক্তির বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এরই অংশ হিসেবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময় সভায় অংশ নিচ্ছেন। গত ২ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, ‘নিকট অতীতে স্বৈরাচার ছিল দৃশ্যমান। এখন স্বৈরাচারের দোসররা অদৃশ্য শক্তিরূপে জনতার বিজয় ও অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। আগামীতে দেশে যাতে কোনো স্বৈরাচারের উত্থান হতে না পারে সে বিষয়েও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। দৃশ্যমান প্রতিপক্ষের চেয়ে অদৃশ্য শত্রু অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। কারণ দৃশ্যমান প্রতিপক্ষকে আমরা চিনি, তাদের আক্রমণের ধরনও আমাদের পরিচিত। কিন্তু অদৃশ্য শত্রুরা অচেনা, তারা আছে সর্বত্র। তাদের অবস্থান অন্ধকারে আর তাদের কৌশল চোরাগোপ্তা।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক নেতা বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মী অনেকের শরীরে ক্ষমতায় চলে আসার ভাব এসেছে। তারা মনে করে বিএনপি ক্ষমতায় আছে। তাদের এ মনোভাব দলকে ডোবাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুর্বল করে দিয়ে নিজেরা খুনোখুনিতে লিপ্ত ছিল। একই অবস্থা এখন আমাদের মধ্যে বিরাজ করছে। যেহেতু মাঠে আওয়ামী লীগ নেই, এখন বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি নিজেরাই নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। আর এ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে অন্যরা।’

বড় প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও অজানা আতঙ্কে বিএনপি

আপডেট সময় ০১:৩৪:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান বিএনপির জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনীতির মাঠে বিএনপির দৃশ্যমান শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। আগামী দিনে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ রয়েছে দলটির। কিন্তু নিজ দলের নেতাকর্মীদের দখল, চাঁদাবাজি ও ১/১১ কেন্দ্রিক কিছু কুশীলবের সক্রিয় হওয়া নিয়ে অজানা আতঙ্ক ভর করছে দলটিতে।

গত কিছুদিন ধরে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যেও আতঙ্কের বিষয়টি উঠে এসেছে। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলের সুযোগ-সন্ধানী নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বে মেতেছে। তাদের কারণে দলের ভাবমূর্তি যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি গত ১৭ বছরে বিএনপির ওপর জুলুম-নিপীড়নের মধ্য দিয়ে যে ইতিবাচক ইমেজ তৈরি হয়েছিল, সেটিও ম্লান হচ্ছে।

তাদের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে আমাদের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল। তাদের মোকাবিলায় বিভিন্ন সময় নানা কৌশল গ্রহণ করতে হয়েছে। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে রাজনীতিতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা পূরণে অদৃশ্য এক শক্তি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তৎকালীন ১/১১ সরকারের কিছু কুশীলব। যারা বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরণ করতে চেয়েছিল। এখন ওই ধরনের একটি গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এছাড়া স্বৈরাচারের পতন হলেও তাদের সুবিধাভোগীরা এখনও রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছেন। সবমিলিয়ে অদৃশ্য শক্তির অজানা আতঙ্ক ভর করেছে বিএনপি শীর্ষ নেতাদের মনোজগতে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘বিএনপির মধ্যে কোনো আতঙ্ক নেই। তবে, আওয়ামী লীগ ঘেঁষা কিছু বুদ্ধিজীবী, যাদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য জনগণের মধ্য থেকে চাপ তৈরি হচ্ছে, তারা বিএনপিকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ চলে গেলেও, তাদের দোসররা এখনও রয়ে গেছে। তাদের কাছে এখনও বৈধ-অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। তারা দেশকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘হঠাৎ করে যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হবে, এটি কারও মাথায় আসেনি। ফলে, গত ১৫ বছরে নানাভাবে নিপীড়নের শিকার নেতাকর্মীদের একটি ক্ষুদ্র অংশ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে। যদিও দল তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। তারপরও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার কারণে দল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজি এবং নিজেদের মধ্যে খুনাখুনিতে জড়িত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। রাজনৈতিকভাবে এখন বিএনপির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে জামায়াত। যারা বিগত দিনগুলোতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে রাজনীতি করে গেছে। অথচ তারা (বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী) সবচেয়ে বেশি সুবিধা নিয়েছে বিএনপির কাছ থেকে। তাদের জন্য বিএনপি অতীতে দেশে-বিদেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হয়েছে দুর্নামের ভাগীদার। এখন তারাই আমাদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে।’

নাম প্রকাশ না করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগ পতন হলেও গত ১৫ বছরে তাদের সুবিধাভোগী পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবিসহ আমলাদের অনেকে এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন নানা জায়গায়। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগীরা এখনও বিভিন্ন জায়গায় নিয়োগ পাচ্ছেন। তাদের পাশাপাশি ১/১১ সরকারের কুশীলবদের এখন আবার সক্রিয় হতে দেখতে পাচ্ছি। যাদের প্রধান এজেন্ডা হলো বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করা। এখানে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা। এজন্য বিএনপির শীর্ষ-পর্যায় থেকে সবাইকে অদৃশ্য এ শক্তির বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এরই অংশ হিসেবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময় সভায় অংশ নিচ্ছেন। গত ২ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, ‘নিকট অতীতে স্বৈরাচার ছিল দৃশ্যমান। এখন স্বৈরাচারের দোসররা অদৃশ্য শক্তিরূপে জনতার বিজয় ও অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। আগামীতে দেশে যাতে কোনো স্বৈরাচারের উত্থান হতে না পারে সে বিষয়েও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। দৃশ্যমান প্রতিপক্ষের চেয়ে অদৃশ্য শত্রু অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। কারণ দৃশ্যমান প্রতিপক্ষকে আমরা চিনি, তাদের আক্রমণের ধরনও আমাদের পরিচিত। কিন্তু অদৃশ্য শত্রুরা অচেনা, তারা আছে সর্বত্র। তাদের অবস্থান অন্ধকারে আর তাদের কৌশল চোরাগোপ্তা।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক নেতা বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মী অনেকের শরীরে ক্ষমতায় চলে আসার ভাব এসেছে। তারা মনে করে বিএনপি ক্ষমতায় আছে। তাদের এ মনোভাব দলকে ডোবাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুর্বল করে দিয়ে নিজেরা খুনোখুনিতে লিপ্ত ছিল। একই অবস্থা এখন আমাদের মধ্যে বিরাজ করছে। যেহেতু মাঠে আওয়ামী লীগ নেই, এখন বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি নিজেরাই নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। আর এ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে অন্যরা।’