ঢাকা ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ময়মনসিংহে পরকিয়ার জেরে ছেলের হাতে যুবলীগ নেতা খুন

ময়মনসিংহের ভালুকায় সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক রাখার জেরে কলেজ পড়ুয়া ছেলের হাতে বাবা মজিবুর রহমান পান্না (৪৯) নামে এক যুবলীগ নেতা খুন হয়েছেন।

পুলিশ রাতেই অভিযুক্ত ছেলে মারুফ আহম্মেদ রাব্বিকে (১৮) আটক করেছে। নিহত পান্না মিরকা হাসিনা বানু উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। তিনি ৬ নম্বর ভালুকা ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক ছিলেন।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উপজেলার পূর্ব ভালুকা কোনাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, মজিবুর রহমান পান্না গত দুদিন বাড়িতে আসেননি। শুক্রবার সকালে তিনি বাড়িতে এলেও পরিবারের সঙ্গে তেমন কথা হয়নি। সন্ধ্যায় পাঞ্জাবি-পাজামা পরে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তার স্ত্রী রোকসানা বেগমকে কিছু টাকা দিতে বলেন। কিন্তু টাকা না দিয়ে দুদিন অন্যত্র রাতযাপন নিয়ে পান্না ও তার স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া হয়।

এ সময় পান্নার ছেলে ভালুকা সরকারি ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পড়ুয়া ছাত্র মারুফ আহম্মেদ রাব্বিও মায়ের সঙ্গে ঝগড়ায় শামিল হয়। একপর্যায়ে রাব্বির হাতে থাকা কাটাকম্পাস দিয়ে বুকে ও পিঠে বেশ কয়েকটি আঘাত করে। এতে পান্না মাটিতে লুটে পড়েন। তাকে উদ্ধার করে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মোহাইমিনুল ইসলাম তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অপর এক সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ৫-৬ বছর আগে থেকেই উপজেলার কাঁঠালি গ্রামের বাসিন্দা সূর্যত আলীর মেয়ে আছমা আক্তারের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন মজিবুর রহমান পান্না। পরকীয়া সম্পর্কের সূত্র ধরে দুই সন্তানের জননী আছমার বাসায় প্রায়ই আসা-যাওয়া করতেন পান্না। একসময় তারা গোপনে বিয়ে করেন এবং আছমার স্বামী শামছুল আলম গার্মেন্টসে চাকরি করার কারণে কোনো সপ্তাহে বাসায় না আসার সুযোগে পান্না ওই বাসায় আসা-যাওয়া করতেন।

একদিন আছমার স্বামী শামছুল আলমের হাতে তাদের অবৈধ সম্পর্ক ধরাও পড়ে। এ নিয়ে পান্নার সঙ্গে আছমার স্বামীর ঝগড়া হলে পান্না তাদের একটি কাবিননামা প্রদর্শন করেন। এর পর আছমাকে পান্না তার গ্রামের বাড়ি ভালুকা কোনাপাড়া নিয়ে যান। ওখানে দুই সতীনের মাঝে প্রায় সময় ঝগড়া হতো। তিন বছর পূর্বে আছমা আমগাছে ফাঁসিতে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে আছমাকে পান্না তালাক দিয়ে দেন। পরে আছমা ছেলে অয়নকে (২২) তার পূর্বের স্বামী শামছুলের কাছে ও মেয়ে অর্পাকে (১২) তার বড় বোনের কাছে রেখে ময়মনসিংহে বাসা ভাড়া নিয়ে এক আইনজীবীর সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন।

বেশ কয়েক মাস ধরে পান্না ও আছমার মাঝে আবারও সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং পান্না তার স্ত্রীকে নানা অজুহাত দেখিয়ে সুযোগ বুঝে আছমার বাসায় চলে যেতেন। এসব ঘটনায় আছমার ছেলে অয়ন ক্ষিপ্ত হয়ে গত দুই মাস পূর্বে ভালুকা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড মেজরভিটা এলাকায় পান্নাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে বামহাত গুরুতর আহত করে। দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে পান্না কিছুটা সুস্থ হন। ওই ঘটনায় পান্না বাদী হয়ে অয়নকে আসামি করে ভালুকা থানায় হত্যার চেষ্টায় একটি মামলা করেন।

ভালুকা মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) শাহ্ কামাল আকন্দ জানান, নিহতের লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। নিহতের ছেলে অভিযুক্ত মারুফ আহম্মেদ রাব্বিকে আটক করা হয়েছে।

ট্যাগস :

ময়মনসিংহে পরকিয়ার জেরে ছেলের হাতে যুবলীগ নেতা খুন

আপডেট সময় ০৩:১৮:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

ময়মনসিংহের ভালুকায় সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক রাখার জেরে কলেজ পড়ুয়া ছেলের হাতে বাবা মজিবুর রহমান পান্না (৪৯) নামে এক যুবলীগ নেতা খুন হয়েছেন।

পুলিশ রাতেই অভিযুক্ত ছেলে মারুফ আহম্মেদ রাব্বিকে (১৮) আটক করেছে। নিহত পান্না মিরকা হাসিনা বানু উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। তিনি ৬ নম্বর ভালুকা ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক ছিলেন।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উপজেলার পূর্ব ভালুকা কোনাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, মজিবুর রহমান পান্না গত দুদিন বাড়িতে আসেননি। শুক্রবার সকালে তিনি বাড়িতে এলেও পরিবারের সঙ্গে তেমন কথা হয়নি। সন্ধ্যায় পাঞ্জাবি-পাজামা পরে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তার স্ত্রী রোকসানা বেগমকে কিছু টাকা দিতে বলেন। কিন্তু টাকা না দিয়ে দুদিন অন্যত্র রাতযাপন নিয়ে পান্না ও তার স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া হয়।

এ সময় পান্নার ছেলে ভালুকা সরকারি ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পড়ুয়া ছাত্র মারুফ আহম্মেদ রাব্বিও মায়ের সঙ্গে ঝগড়ায় শামিল হয়। একপর্যায়ে রাব্বির হাতে থাকা কাটাকম্পাস দিয়ে বুকে ও পিঠে বেশ কয়েকটি আঘাত করে। এতে পান্না মাটিতে লুটে পড়েন। তাকে উদ্ধার করে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মোহাইমিনুল ইসলাম তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অপর এক সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ৫-৬ বছর আগে থেকেই উপজেলার কাঁঠালি গ্রামের বাসিন্দা সূর্যত আলীর মেয়ে আছমা আক্তারের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন মজিবুর রহমান পান্না। পরকীয়া সম্পর্কের সূত্র ধরে দুই সন্তানের জননী আছমার বাসায় প্রায়ই আসা-যাওয়া করতেন পান্না। একসময় তারা গোপনে বিয়ে করেন এবং আছমার স্বামী শামছুল আলম গার্মেন্টসে চাকরি করার কারণে কোনো সপ্তাহে বাসায় না আসার সুযোগে পান্না ওই বাসায় আসা-যাওয়া করতেন।

একদিন আছমার স্বামী শামছুল আলমের হাতে তাদের অবৈধ সম্পর্ক ধরাও পড়ে। এ নিয়ে পান্নার সঙ্গে আছমার স্বামীর ঝগড়া হলে পান্না তাদের একটি কাবিননামা প্রদর্শন করেন। এর পর আছমাকে পান্না তার গ্রামের বাড়ি ভালুকা কোনাপাড়া নিয়ে যান। ওখানে দুই সতীনের মাঝে প্রায় সময় ঝগড়া হতো। তিন বছর পূর্বে আছমা আমগাছে ফাঁসিতে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে আছমাকে পান্না তালাক দিয়ে দেন। পরে আছমা ছেলে অয়নকে (২২) তার পূর্বের স্বামী শামছুলের কাছে ও মেয়ে অর্পাকে (১২) তার বড় বোনের কাছে রেখে ময়মনসিংহে বাসা ভাড়া নিয়ে এক আইনজীবীর সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন।

বেশ কয়েক মাস ধরে পান্না ও আছমার মাঝে আবারও সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং পান্না তার স্ত্রীকে নানা অজুহাত দেখিয়ে সুযোগ বুঝে আছমার বাসায় চলে যেতেন। এসব ঘটনায় আছমার ছেলে অয়ন ক্ষিপ্ত হয়ে গত দুই মাস পূর্বে ভালুকা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড মেজরভিটা এলাকায় পান্নাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে বামহাত গুরুতর আহত করে। দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে পান্না কিছুটা সুস্থ হন। ওই ঘটনায় পান্না বাদী হয়ে অয়নকে আসামি করে ভালুকা থানায় হত্যার চেষ্টায় একটি মামলা করেন।

ভালুকা মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) শাহ্ কামাল আকন্দ জানান, নিহতের লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। নিহতের ছেলে অভিযুক্ত মারুফ আহম্মেদ রাব্বিকে আটক করা হয়েছে।