ঢাকা ০৯:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo পাকিস্তান ৩০০-৪০০ ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে: ভারত Logo কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ Logo ‘আমার বিরুদ্ধে কিছু মানুষ মিথ্যাচার ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য প্রচার করছে’ Logo গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় নোসক শিবিরের সহযোগিতা Logo এআই হ্যাকাথন ২০২৫: রুয়েটের ‘বুরাক’ টিমের চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন Logo আমিরাতে আইপিএলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, পিএসএল পেল অগ্রাধিকার Logo আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ Logo রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে জবি শিক্ষার্থী ৩ দিনের রিমান্ডে Logo আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে জয়পুরহাটে বিক্ষোভ Logo ভারতের ৭৭টি ড্রোন ভূপাতিত করল পাকিস্তান

বাংলাদেশের প্রথম মডেল ‘মসলা গ্রাম’: কুষ্টিয়ার বড়িয়ায় কৃষিতে নতুন বিপ্লব

কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার ছোট্ট একটি জনপদ—বড়িয়া। কয়েক বছর আগেও যা ছিল ধান ও গমের পরিচিত মাঠঘাট, আজ সেটি রূপ নিয়েছে দেশের প্রথম ‘মডেল মসলা গ্রামে’। আর এই রূপান্তরের নেপথ্যে আছে সরকারি প্রণোদনা, কৃষকের পরিশ্রম, আর আধুনিক প্রযুক্তির যুগোপযোগী ব্যবহার।

গ্রামের ভেতর প্রবেশ করতেই দু’পাশে চোখে পড়ে খাঁচা পদ্ধতিতে লাগানো তেজপাতা, দারুচিনি, গোলমরিচের গাছ। কেউ ভাবতেও পারেনি, এক সময়কার পতিত জমিতে এতটা সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। জিও ব্যাগে আদা, হলুদ কিংবা উঠানে ক্যাপসিকাম—গ্রামের প্রতিটি চৌহদ্দি যেন এখন ছোট্ট একটি গবেষণাক্ষেত্র।

এই প্রকল্পের আওতায় বড়িয়ায় চাষ হচ্ছে মোট ১৪ ধরনের মসলা। বাড়ির পাশের পুকুরপাড় কিংবা পরিত্যক্ত কোনো আঙিনা—সব জায়গাই এখন চাষের আওতায়। এখানকার কৃষক আবির হাসান বলেন, “আমার বাড়ির পেছনের যে জায়গাটা আগের বছর ঘাসে ভরা ছিল, এখন সেখানে আদা চাষ করে মাসে ভালো আয় করছি। মাটিকে ঠিকভাবে চিনতে পারলে সে কখনো ফেরায় না।”

সরকারের ‘মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের অধীনে এই গ্রামের ৬ হাজার মসলা গাছ লাগানো হয়েছে। মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের পর্যবেক্ষণ ও সহযোগিতায় এই প্রকল্পে যুক্ত হয়েছেন শতাধিক কৃষক।

২০২৩ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া এই পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্প এখন বড়িয়ার মানুষের জীবনে অর্থনৈতিক স্থিতি ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এনে দিয়েছে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই এখন কৃষিকাজে যুক্ত, অনেক তরুণও পড়ালেখার পাশাপাশি কৃষিকে নিচ্ছে পেশা হিসেবে।

প্রকল্প পরিচালক রাসেল আহমেদ বলেন, “এই মডেল গ্রাম শুধু ফসল উৎপাদনের জন্য নয়, একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হিসেবেও কাজ করবে। এখান থেকেই কৃষকেরা মসলার বীজ ও চারা সরবরাহ করতে পারবেন, যা ভবিষ্যতে জাতীয় চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে।”

বড়িয়া এখন শুধু একটি গ্রাম নয়—এটি একটি দর্শন, যেখানে কৃষি মানে শুধু জমিতে ফসল ফলানো নয়, বরং একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের বীজ বোনা।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

পাকিস্তান ৩০০-৪০০ ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে: ভারত

বাংলাদেশের প্রথম মডেল ‘মসলা গ্রাম’: কুষ্টিয়ার বড়িয়ায় কৃষিতে নতুন বিপ্লব

আপডেট সময় ০৩:৫২:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার ছোট্ট একটি জনপদ—বড়িয়া। কয়েক বছর আগেও যা ছিল ধান ও গমের পরিচিত মাঠঘাট, আজ সেটি রূপ নিয়েছে দেশের প্রথম ‘মডেল মসলা গ্রামে’। আর এই রূপান্তরের নেপথ্যে আছে সরকারি প্রণোদনা, কৃষকের পরিশ্রম, আর আধুনিক প্রযুক্তির যুগোপযোগী ব্যবহার।

গ্রামের ভেতর প্রবেশ করতেই দু’পাশে চোখে পড়ে খাঁচা পদ্ধতিতে লাগানো তেজপাতা, দারুচিনি, গোলমরিচের গাছ। কেউ ভাবতেও পারেনি, এক সময়কার পতিত জমিতে এতটা সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। জিও ব্যাগে আদা, হলুদ কিংবা উঠানে ক্যাপসিকাম—গ্রামের প্রতিটি চৌহদ্দি যেন এখন ছোট্ট একটি গবেষণাক্ষেত্র।

এই প্রকল্পের আওতায় বড়িয়ায় চাষ হচ্ছে মোট ১৪ ধরনের মসলা। বাড়ির পাশের পুকুরপাড় কিংবা পরিত্যক্ত কোনো আঙিনা—সব জায়গাই এখন চাষের আওতায়। এখানকার কৃষক আবির হাসান বলেন, “আমার বাড়ির পেছনের যে জায়গাটা আগের বছর ঘাসে ভরা ছিল, এখন সেখানে আদা চাষ করে মাসে ভালো আয় করছি। মাটিকে ঠিকভাবে চিনতে পারলে সে কখনো ফেরায় না।”

সরকারের ‘মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের অধীনে এই গ্রামের ৬ হাজার মসলা গাছ লাগানো হয়েছে। মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের পর্যবেক্ষণ ও সহযোগিতায় এই প্রকল্পে যুক্ত হয়েছেন শতাধিক কৃষক।

২০২৩ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া এই পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্প এখন বড়িয়ার মানুষের জীবনে অর্থনৈতিক স্থিতি ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এনে দিয়েছে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই এখন কৃষিকাজে যুক্ত, অনেক তরুণও পড়ালেখার পাশাপাশি কৃষিকে নিচ্ছে পেশা হিসেবে।

প্রকল্প পরিচালক রাসেল আহমেদ বলেন, “এই মডেল গ্রাম শুধু ফসল উৎপাদনের জন্য নয়, একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হিসেবেও কাজ করবে। এখান থেকেই কৃষকেরা মসলার বীজ ও চারা সরবরাহ করতে পারবেন, যা ভবিষ্যতে জাতীয় চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে।”

বড়িয়া এখন শুধু একটি গ্রাম নয়—এটি একটি দর্শন, যেখানে কৃষি মানে শুধু জমিতে ফসল ফলানো নয়, বরং একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের বীজ বোনা।