নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) একই বিভাগের শিক্ষার্থী এবং কয়েকজন বহিরাগত দ্বারা হামলার শিকার হয়েছে মৎস্য ও সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। কোর্স ট্যুর আয়োজনকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত। বদলা নিতে গিয়ে বহিরাগতসহ এ হামলা করা হয় বলে জানা যায়।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের এফআইকিউসি থেকে কোর্স ট্যুর শেষে ক্যাপাসে ফিরে আসার সময় রাত ১১ টার দিকে নোয়াখালীর দত্তেরহাটে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুল হক তুহিন এবং মৎস্য ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তারেক রহমান ইমন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হামলার শিকার উক্ত বিভাগের শিক্ষার্থী নাসির বলেন, আমরা আজকে সকালে চট্রগ্রামে যাই আমাদের কোর্স ট্যুরে। সেখানেও সব ঠিকঠাক ছিলো। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে ফিরে আসার সময় দত্তেরহাট আমার বন্ধু তারেক সে বাস থেকে নেমে যায়। তখন সে বাহির থেকে আমাকে বাস থেকে নামতে বলে। বাস থেকে না নামায় ৭-৮ জন ছেলে নিয়ে আমি এবং আমার বন্ধু মাসুম, মুশফিক এবং বিশাদের উপর হামলা করে। তারা আমাদেরকে কিল, ঘুষি, লাথি অনবরত মারতে মারতে গালিগালাজ ও করে। তাদের মারামারির ৫-৭ মিনিট পরে আইসিই বিভাগের ১৩ তম ব্যাচের তুহিন যোগ দেন। মূলত ওনার নেতৃত্বেই হামলা চালায়।
পূর্ব কোনো সমস্যা থেকে উক্ত সমস্যার সূত্রপাত কিনা তা জানতে চাইলে নাসির আরো বলেন, তারেকের সাথে তাদের পূর্বে একটা সমস্যা হয়েছিল। সেটা তখন মিমাংসা ও হয়েছিল। আমাদের ট্যুর চলাকালীন ও কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু সে বাস থেকে নামার সময় এ অতর্কিত হামলা চালায়।
বাসে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী মেয়েরা জানায়, কয়েকজন ছেলে তাদের ছেলেদের উপর হামলা করে। বাজেভাবে গালিগালাজ ও করে। এমনকি ক্যাম্পাসে গিয়ে মুখ খুললে পরবর্তীতে দেখে নিবেও বলে হুমকি দেয়।
বাস সুপারভাইজার বলেন, চৌরাস্তা থেকে প্রত্যেকটা জায়গায় আমরা তাদেরকে নামিয়ে দিচ্ছি। একইভাবে তাদের একজন দত্তেরহাট নামবে বললে গাড়ি থামানো হয়। গেট খোলার পর দেখি কয়েকজন গাড়িতে উঠে মারামারি শুরু করে।
ট্যুরের দায়িত্বে থাকা বিভাগের শিক্ষকদের একজন সহযোগী অধ্যাপক এ.এফ.এম আরিফুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামে ফিল্ড যাওয়ার পর যখন আমরা নোয়াখালী ফিরতেছিলাম তখন শিক্ষার্থীরা গান গেয়ে গেয়ে ও নাচতে নাচতে আসতেছিলো।কারো মাঝে কোনো ঝামেলা,বা ঝগড়া বিবাদ দেখা যায়নি ট্যুরে গিয়ে ও আসার সময়। আমি মাইজদী বাজার ক্রস করার সময় নেমে যাই। নামার আগে তাদের সাথে কথা বললে তারা সবকিছু সঠিকভাবে করবে বলে সম্মতি দেয়। কিন্তু হটাৎ করে এমন ঘটনা ঘটবে কখনো আশা করিনি। এফআইকিউসিতে ও তাদের এমন কোনো মনোভাব দেখিনি। পরবর্তী ছাত্ররা ফোন দিয়ে বললে রীতিমতো আশ্চর্য হই। বিভাগে গিয়ে তাদের সাথে কথা বললে বিস্তারিত জানতে পারবো।
অভিযুক্ত একই বিভাগের (১৫ তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী তারকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ডিপার্টমেন্ট থেকে স্যার আমাকে ক্লাস প্রতিনিধি হিসেবে ট্যুর এরেন্জ করার দায়িত্ব দেন। আমি আমার বন্ধুদের নিয়ে কাজ করি। নাসির বা তার অন্য বন্ধুদের সাথে কাজ করি না। গত ২ দিন আগে সে ডিপার্টমেন্টের সামনে আমাকে গালিগালাজ করে জোর গলায় জিজ্ঞাসা করে যে সব কিছু তুই করবি নাকি স্যার কি তোকে একাই দায়িত্ব দিয়েছে কিনা। তখন আমি তাকে বলি যে স্যার আমাকে অফিসিয়ালি দায়িত্ব দিয়েছেন তাই আমি দায়িত্ব পালন করতেছি। তখন তার আক্রমণাত্নক আচরণ দেখে আমি তাকে ধাক্কা দিলে সে তখন অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করে আমার তলপেটে লাথি দেয়। পরবর্তীতে আমি বিষয়টি আমার বন্ধুদের বলি। ট্যুর থেকে ব্যাক করার সময় আমার বন্ধুরা আমাকে ফোন দিয়ে কোথায় আছি জিজ্ঞাসা করলে আমি বলি একটু পর দত্তেরহাট পৌছাবো। আমি দত্তেরহাট নামলে তখন আমার বন্ধুরা বাসে উঠলে তাদের সাথে দস্তাদস্তি হয়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আইসিই বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুল হক তুহিন সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করে বলেন, এ ঘটনার সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি শেষ মুহূর্তে ছিলাম, ধরো একটা এক্সিডেন্ট হইলে যেমন মানুষ মানুষকে সেইভ করে না? আমি গিয়ে বাঁচাই। আমি মাইজদী থেকে দত্তের হাটে আসার সময় ঘটনা দেখে, ঘটনা শুনে গাড়ি থেকে নেমে ঘটনা স্হলে গিয়ে যে ঘটনা হয়েছে সেখান গিয়ে এক সাইড(দল) কে বাস থেকে বাহির করে আনি আর ভার্সিটির গুলারে বাসে পাঠাই দিছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, আমরা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি। আগামীকাল তাদেরকে একটা লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ দিলেই আমরা তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নিব।