ঢাকা ০৯:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo যাই করেন, ছাত্রলীগ হইতে যাইয়েন না: হান্নান মাসউদের হুঁশিয়ারি Logo দুই উপদেষ্টার সাবেক ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও এনসিপি নেতাকে দুদকে তলব Logo রক্ত লাগলে রক্ত নে- জগন্নাথের হল দে, রাজপথে শিক্ষার্থীদের লিখনি Logo নোয়াখালী সরকারি কলেজে সাম্য হত্যার প্রতিবাদে ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি Logo ইসরায়েল গণহত্যাকারী রাষ্ট্র, বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা স্পেনের Logo মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের ন্যায্য দাবিতে মুন্সিগঞ্জে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন Logo ১৭ বছর ধরে অচল অবস্থায় বেলকার স্বাস্থ্য কেন্দ্র, জনদুর্ভোগ চরমে Logo ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদের দোসর সাংবাদিকদের ক্ষমা চাওয়া উচিত: প্রেস সচিব Logo গাইবান্ধায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রান গেল একই পরিবারের ৩ জনের Logo এবার মধ্যপ্রাচ্যের চার দেশে শাকিবের ‘বরবাদ’

দৌলতদিয়ায় বয়স্ক যৌনকর্মীরা পাবেন আবাসন সুবিধা

যেসব যৌনকর্মীর বয়স ৫০ বছরের বেশি তাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে সরকার। শিশুরাও থাকবে এ সুবিধার অধীনে। এ খাতে সরকারের ব্যয় হবে ৩৬ কোটি ৪৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। ‘দৌলতদিয়ায় বয়স্ক নারী ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য আবাসিক সুবিধা সৃষ্টিকরণ’ প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ নিয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (পরিকল্পনা ও পরিসংখ্যান অধিশাখা) নাহিদ মঞ্জুরা আফরোজ বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছি। তবে প্রকল্পটি এখনো অনুমোদন হয়নি। আমরা আশা করি প্রকল্পটি দ্রুতসময়ে অনুমোদন হবে।’

প্রস্তাবনা অনুযায়ী, চলতি সময় থেকে জুন ২০২৫ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় প্রায় দুই একর জমিতে ছয়তলা ভিতবিশিষ্ট তিনতলা ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে ১৫০ জন পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী এবং ৩০০ জন শিশুকে আবাসন সুবিধা দেওয়া হবে। প্রকল্পের আওতায় এক হাজার ১৯টি আসবাবপত্র ও ৭০টি অফিস সরঞ্জামাদি কেনা হবে।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, নানান কারণে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে। নারীরা একপর্যায়ে নিরূপায় হয়ে কিংবা অনেকে পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে যৌনকর্মের দিকে ধাবমান হচ্ছে। ফলে তাদের স্থান হয় সমাজবর্হিভূত যৌনপল্লীতে। ২০১৫-১৬ সালের সরকারি পরিসংখ্যান মোতাবেক বাংলাদেশে যৌনকর্মীর সংখ্যা এক লাখ দুই হাজারেরও বেশি। বর্তমানে যৌনকর্মীর সংখ্যা বাড়ছে। দৌলতদিয়া যৌনপল্লী বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গণিকালয়। এখানে প্রায় চার হাজার যৌনকর্মী এ পেশায় জড়িত। এক পর্যায়ে তারা যখন যৌবন পেরিয়ে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তখন তাদের দরিদ্রতা ঘিরে ধরে। ক্ষুধামুক্তি, শিশুমৃত্যুর হার সর্বনিম্নকরণে বাংলাদেশের অগ্রগতি গর্ব করার মতো। এ ধারা অব্যাহত রাখতেই এ প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

দেশের যৌনকর্মীরা যখন যৌবন পেরিয়ে বার্ধক্যে চলে যাচ্ছে তখন তাদের জীর্ণতা গ্রাস করছে। সমাজের মানুষের দ্বারা অবহেলার স্বীকার হচ্ছেন তারা। মানুষ তাদের সমাজে প্রবেশে বাধার সম্মুখীন করছে। এতে একদিকে তারা যেমন গৃহহীন হয়ে পড়ছে অন্যদিকে চিকিৎসার অভাবে অকালে মারা যাচ্ছে। এদেশের যৌনকর্মীরা তাদের মৌলিক মানবাধিকার থেকেও বঞ্চিত।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যৌনকর্মীরা একসময় সন্তানদের কাছ থেকে কষ্ট পেয়ে পরিবারের কাছাকাছি থাকতে পারে না। পাবনা জেলায় এ ধরনের একটি গবেষণায় ইনসমনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন মস্তিষ্ক-হানিকর রোগের প্রাদুর্ভাব আমাদের প্রবীণদের মধ্যে দেখা যায়। দুর্ভাগ্যবশত বিদ্যমান এ ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যেই আর্থ-সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় অনেককেই। ঢাকার আগারগাঁওয়ের ‘প্রবীণ হিতৈষী সংঘ’ ফরিদপুর ও বরিশালের সরকারি বৃদ্ধাশ্রম এবং গাজীপুরের ব্যক্তিমালিকানাধীন ‘বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র’সহ বৃদ্ধ নারী-পুরুষদের জন্য হাতে গোনা কয়েকটি আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। বয়স্ক যৌনকর্মীদের জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।

একইসঙ্গে জীবনচক্রের অপর প্রান্তে পিছিয়ে পড়া শিশুদের কথাও আনা হয়েছে এ প্রকল্পের উন্নয়নে। দারিদ্র্যের চক্রে পড়ে অনেক ছেলেমেয়ে রাস্তায় বের হয়ে ভিক্ষা করতে বাধ্য হয়। তাদের মধ্যে শিক্ষা অনুপস্থিত। একটি দেশের ভবিষ্যৎ যদি এভাবে বড় হয় তবে সে দেশের উন্নয়ন আদৌ সম্ভব কি না সেটা যথেষ্ট ভাবনার বিষয় বলে জানায় মন্ত্রণালয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

যাই করেন, ছাত্রলীগ হইতে যাইয়েন না: হান্নান মাসউদের হুঁশিয়ারি

দৌলতদিয়ায় বয়স্ক যৌনকর্মীরা পাবেন আবাসন সুবিধা

আপডেট সময় ০৩:৫৩:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৪

যেসব যৌনকর্মীর বয়স ৫০ বছরের বেশি তাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে সরকার। শিশুরাও থাকবে এ সুবিধার অধীনে। এ খাতে সরকারের ব্যয় হবে ৩৬ কোটি ৪৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। ‘দৌলতদিয়ায় বয়স্ক নারী ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য আবাসিক সুবিধা সৃষ্টিকরণ’ প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ নিয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (পরিকল্পনা ও পরিসংখ্যান অধিশাখা) নাহিদ মঞ্জুরা আফরোজ বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছি। তবে প্রকল্পটি এখনো অনুমোদন হয়নি। আমরা আশা করি প্রকল্পটি দ্রুতসময়ে অনুমোদন হবে।’

প্রস্তাবনা অনুযায়ী, চলতি সময় থেকে জুন ২০২৫ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় প্রায় দুই একর জমিতে ছয়তলা ভিতবিশিষ্ট তিনতলা ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে ১৫০ জন পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী এবং ৩০০ জন শিশুকে আবাসন সুবিধা দেওয়া হবে। প্রকল্পের আওতায় এক হাজার ১৯টি আসবাবপত্র ও ৭০টি অফিস সরঞ্জামাদি কেনা হবে।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, নানান কারণে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে। নারীরা একপর্যায়ে নিরূপায় হয়ে কিংবা অনেকে পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে যৌনকর্মের দিকে ধাবমান হচ্ছে। ফলে তাদের স্থান হয় সমাজবর্হিভূত যৌনপল্লীতে। ২০১৫-১৬ সালের সরকারি পরিসংখ্যান মোতাবেক বাংলাদেশে যৌনকর্মীর সংখ্যা এক লাখ দুই হাজারেরও বেশি। বর্তমানে যৌনকর্মীর সংখ্যা বাড়ছে। দৌলতদিয়া যৌনপল্লী বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গণিকালয়। এখানে প্রায় চার হাজার যৌনকর্মী এ পেশায় জড়িত। এক পর্যায়ে তারা যখন যৌবন পেরিয়ে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তখন তাদের দরিদ্রতা ঘিরে ধরে। ক্ষুধামুক্তি, শিশুমৃত্যুর হার সর্বনিম্নকরণে বাংলাদেশের অগ্রগতি গর্ব করার মতো। এ ধারা অব্যাহত রাখতেই এ প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

দেশের যৌনকর্মীরা যখন যৌবন পেরিয়ে বার্ধক্যে চলে যাচ্ছে তখন তাদের জীর্ণতা গ্রাস করছে। সমাজের মানুষের দ্বারা অবহেলার স্বীকার হচ্ছেন তারা। মানুষ তাদের সমাজে প্রবেশে বাধার সম্মুখীন করছে। এতে একদিকে তারা যেমন গৃহহীন হয়ে পড়ছে অন্যদিকে চিকিৎসার অভাবে অকালে মারা যাচ্ছে। এদেশের যৌনকর্মীরা তাদের মৌলিক মানবাধিকার থেকেও বঞ্চিত।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যৌনকর্মীরা একসময় সন্তানদের কাছ থেকে কষ্ট পেয়ে পরিবারের কাছাকাছি থাকতে পারে না। পাবনা জেলায় এ ধরনের একটি গবেষণায় ইনসমনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন মস্তিষ্ক-হানিকর রোগের প্রাদুর্ভাব আমাদের প্রবীণদের মধ্যে দেখা যায়। দুর্ভাগ্যবশত বিদ্যমান এ ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যেই আর্থ-সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় অনেককেই। ঢাকার আগারগাঁওয়ের ‘প্রবীণ হিতৈষী সংঘ’ ফরিদপুর ও বরিশালের সরকারি বৃদ্ধাশ্রম এবং গাজীপুরের ব্যক্তিমালিকানাধীন ‘বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র’সহ বৃদ্ধ নারী-পুরুষদের জন্য হাতে গোনা কয়েকটি আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। বয়স্ক যৌনকর্মীদের জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।

একইসঙ্গে জীবনচক্রের অপর প্রান্তে পিছিয়ে পড়া শিশুদের কথাও আনা হয়েছে এ প্রকল্পের উন্নয়নে। দারিদ্র্যের চক্রে পড়ে অনেক ছেলেমেয়ে রাস্তায় বের হয়ে ভিক্ষা করতে বাধ্য হয়। তাদের মধ্যে শিক্ষা অনুপস্থিত। একটি দেশের ভবিষ্যৎ যদি এভাবে বড় হয় তবে সে দেশের উন্নয়ন আদৌ সম্ভব কি না সেটা যথেষ্ট ভাবনার বিষয় বলে জানায় মন্ত্রণালয়।