রাজশাহীর মোহনপুরে গত রোববার অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে না যাওয়ায় দুই জনকে লোহার পাইপ ও লাঠিশোটা দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আহত দুজন বর্তমানে রাজশাহী নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। ‘ভোট দিতে যাসনি কেন?’- এমন প্রশ্ন করেই নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যের গ্রুপের সমর্থকরা তাদের পিটিয়েছেন।
ভুক্তভোগীরা হলেন- উপজেলার জাহানাবাদ ইউনিয়নের তাঁতীপাড়া এলাকার তাহের আলীর ছেলে আফসার আলী সরদার (৬০) ও তার ভোট ভাই সাহেব আলী (৪২)। আর অভিযুক্তরা হলেন- একই এলাকার দুলাল, জালাল, আখিরুল ও শামীম। তারা রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ গ্রুপের অনুসারী।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, ভোটের দিন রোববার (৭ জানুয়ারি) বিকেলে নিজ গ্রামে এন্তাজের চা স্টলে যান আফসার আলী। এসময় গ্রামের দুলাল, জালাল, আখিরুল ও শামীমসহ আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগ কর্মী সেখানে এসে আফসারকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুই ভোট দিতে যাসনি কেন?’ উত্তরে আফসার বলেন, ‘আমার ভাল লাগেনি, তাই যাইনি।’ তার এমন উত্তরে ক্ষিপ্ত হয়ে রড, লোহার পাইপ ও বাঁশের লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো শুরু করেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা।
স্থানীয়রা জানান, আফসারকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে দুলালবাহিনী। কিছুক্ষণ পর তার ছোট ভাই সাহেব আলী ভাইকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তাকেও রড, লোহার পাইপ দিয়ে পেটান আওয়ামী লীগ কর্মীরা। এতে দুজনের হাত-পা ভেঙে যায়। তারা রক্তাক্ত হয়ে পড়েন। এলাকার লোকজন তাদের উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে গেলে বাসার দরজা ভেঙে আরেক দফা পেটানোর চেষ্টা চালান আওয়ামী লীগের কর্মীরা।
ভুক্তভোগীর পরিবার জানিয়েছে, গুরুতর আহত অবস্থায় তাদেরকে আওয়ামী লীগ কর্মীদের আড়াল করে পাঠানো হয় রাজশাহীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন তারা। হাসপাতালে পরীক্ষা করে আফসারের ডান হাত ও ডান পা ভেঙে গেছে বলে জানা গেছে। এছাড়া তার ছোট ভাই সাহেব আলীর বাম হাত ও ডান হাতের আঙ্গুল ভেঙেছে। তাদের অন্য ভাইদেরও পেটানোর জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা খোঁজাখুজি করছেন। বর্তমানে চরম আতঙ্কে রয়েছে আফসারের পরিবার।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ কর্মীদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এ ব্যাপারে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, আমি কাউকে এ ধরনের কোনোকিছুর নির্দেশনা কোন দিন দিই নি, আগামীতেও দিব না। এ ধরনের কাজ যদি কেউ করে থাকে, তাহলে তার দায় তাকেই নিতে হবে। ভুক্তভোগীরা আইনের আশ্রয় নিলে এ ব্যাপারে আমি সহযোগিতা করবো।
এ বিষয়ে মোহনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হরিদাস মন্ডল বলেন, এখনো থানায় কেউ কোন অভিযোগ করেনি। বিষয়টি আমার জানা নাই। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।