নির্বাচনে হস্তক্ষেপ নয়, বরং শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করাই যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করা আমাদের লক্ষ্য নয়। বাংলাদেশের জনগণ দেশ পরিচালনার জন্য স্বাধীনভাবে তাদের পছন্দ বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবেন—এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সহযোগিতা করাই আমাদের লক্ষ্য। আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার।
দিনটি উপলক্ষে ঢাকায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি আয়োজিত অনুষ্ঠানে মূল বক্তা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সহযোগিতার গুরুত্বের প্রতিফলন ঘটাতে হবে। ভয় ও সহিংসতা থেকে মুক্ত, আরো শান্তিপূর্ণ, ন্যায়পরায়ণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে তোলার জন্য আমাদের সবার সম্মিলিত দায়িত্ব রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত তাঁর দেশের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের পাঁচটি স্তম্ভের মাধ্যমে এই অঞ্চলে ন্যায়সংগত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করার ভাবনা তুলে ধরেন।
তিনি শান্তির জন্য প্রত্যেক দেশের জনগণকে স্বাধীনভাবে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে দেওয়ার সুযোগ পাওয়ার ওপর জোর দেন। রাষ্ট্রদূত পিটার হাস অন্য দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান জানানোর কথা বলেন। গোপনীয়তার পাশাপাশি মানবিক মর্যাদাকে রক্ষা করে এমন সাইবার স্পেসের ওপর তিনি জোর দেন। ‘এটি সার্বভৌমত্বকে সম্মান করা এবং প্রতিটি দেশের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যা তার স্বার্থের জন্য সর্বোত্তমভাবে কাজ করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ এই প্রতিশ্রুতি ভাগ করে নেয়, এমন একটি বিশ্বের পক্ষে সমর্থন করে যেখানে সমস্ত জাতির পছন্দকে সম্মান করা হয় এবং সমর্থন করা হয়,’ বলেন তিনি। পিটার হাস বলেন, ‘কয়েক মাসের মধ্যে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচন কাছাকাছি আসার সঙ্গে সঙ্গে জনগণ যাতে অবাধে তাদের নেতা নির্বাচন করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে সমর্থন করতে আমরা প্রস্তুত।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা নিয়মিতভাবে সাংবাদিক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং এমনকি নোবেল বিজয়ী যাঁরা তাঁদের সরকারকে দায়বদ্ধ করে তাঁদের ওপর নিয়মতান্ত্রিক এবং ব্যাপক নিপীড়নের বিষয়ে কথা বলি। পিটার হাস বলেন, ‘গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ঢাকায় বক্তা হিসেবে আটলান্টিক কাউন্সিলের ফ্রিডম অ্যান্ড প্রোসপারিটি সেন্টারের জ্যেষ্ঠ পরিচালক ড্যান নেগ্রেয়াকে স্বাগত জানিয়েছি।
নেগ্রেয়া তাঁর গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছেন, কিভাবে আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও বাজার অর্থনীতি শক্তিশালী হয়।’
রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে মর্যাদার সঙ্গে তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে পারে সে জন্য মিয়ানমারে সেই পরিবেশ তৈরি নিশ্চিত করা সারা বিশ্বের সম্মিলিত দায়িত্ব। তিনি বলেন, তাদের (রোহিঙ্গাদের) সুরক্ষিত রাখা দরকার, শিক্ষিত করা দরকার এবং তারা যেখানে বাস করছে সেখানে তাদের মর্যাদা নিশ্চিত করা দরকার। রাষ্ট্রদূত বলেন, মিয়ানমারের পদক্ষেপের জন্য রোহিঙ্গাদের শাস্তি দেওয়া উচিত নয় এবং তাদের প্রতি কোনো বৈষম্য ছাড়াই ভালো আচরণ করা উচিত।
মিয়ানমারের ক্রমাগত সম্মিলিত চাপের ওপর গুরুত্বারোপ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই সংকটের সমাধান এত সহজ নয়। তিনি বলেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) পুনর্বাসনের বিকল্পের বিষয়েও ভাবছে। তবে এ সুযোগ খুবই সীমিত। এটি কেবল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা লোকদের জন্য। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী, অনুষদ ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।