ঢাকা ০২:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দূতাবাসে বিএনপির চিঠি

  • ফখরুল ইসলাম
  • আপডেট সময় ০৯:৫০:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩
  • 196

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দূতাবাসে বিএনপির চিঠি

২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বাপর ঘটনা এবং আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ নির্বাচন সামনে রেখে সহিংসতাসহ চলমান পরিস্থিতি তুলে ধরে জাতিসংঘসহ ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি মিশনে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। পাঁচ পৃষ্ঠার ওই চিঠিতে ৩০টি ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।

আজ রবিবার ই-মেইলের মাধ্যমে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানান বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। চিঠিতে স্বাক্ষর করেন রিজভী। রবিবার বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই চিঠি পড়ে শোনান তিনি।

চিঠিতে উল্লেখ করা ৩০ ঘটনার অধিকাংশ নাশকতাকে কেন্দ্র করে। এসব ঘটনার জন্য সরকার ও আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছে বিএনপি।
চিঠিতে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাংশ বাস-ট্রেনে পরিকল্পিত হামলার মাধ্যমে জনগণের জান-মাল, নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা বিনষ্ট করছে।

এদিকে রবিবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এনডিআই ও আইআরআই নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠক করে দেশের চলমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানের গুলশানের বাসভবনে এর আগে গত শনিবার কমনওয়েথ এবং তার কয়েক দিন আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাচন বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে বৈঠক করে দলটি।

চিঠিতে আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনী সহিংসতা এবং ভোটারদের ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে অভিযোগ করে ১০টি ঘটনা তুলে ধরেছে বিএনপি।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে— গত ২৭ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আলী ইস্কান্দার তাকে ভোট না দিলে ভোটারদের হাত কেটে ফেলার হুমকি দিয়েছেন।

কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার তার আসনে বিরোধী দলের কোনো কর্মীকে কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে দেখা গেলে হাত-পা ভেঙে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। কুষ্টিয়ার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সারোয়ার জাহান বাদশা ভোটারদের সতর্ক করেছেন। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন ভোটার ও বিএনপির সমর্থকদের হুমকি দিয়েছেন। গত ২৪ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ভোটারদের তাদের গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়ার হুমকি ইত্যাদি। চিঠিতে রিজভী আহমেদ বলেন, জনগণ আজ একটি অর্থবহ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ চায়।

আসন্ন ‘প্রহসনমূলক’ নির্বাচনের তথাকথিত প্রচারণার সময় আওয়ামী লীগ নেতারা খোলাখুলি স্বীকার করছেন যে তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোট কারচুপির সঙ্গে জড়িত ছিল। পুনরায় একই নাটক মঞ্চস্থ করতে তাঁদের রাষ্ট্রযন্ত্রের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে, এটিই স্বাভাবিক। চিঠিতে চলমান অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতার বিষয়ে গত ২৮ অক্টোবর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০টি ঘটনা তুলে ধরা হয়। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, গত ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ ও পুলিশের যৌথ তাণ্ডবে বেশ কয়েকটি যানবাহন ও বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এদিন রাজধানীর মালিবাগে পুলিশের ইউনিফর্ম পরা ব্যক্তিরা একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, গত ২৮ অক্টোবর হাইকোর্টের সামনে আগুন দেওয়া আরেকটি বাসের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ছাত্রলীগের পাঁচ যুবক বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। একই দিন কাকরাইলে একটি মোটরসাইকেলে করে দুই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি এসে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। চালকের বর্ণনা অনুযায়ী, আগুন ধরিয়ে দেওয়া ব্যক্তিরা পুলিশের পোশাক পরা ছিল।

গত ১৯ ডিসেম্বর তেজগাঁওয়ে চলন্ত ট্রেনে অগ্নি সংযোগের ঘটনায় রাষ্ট্রের একটি অংশ জড়িত বলে অভিযোগ করা হয় চিঠিতে। এতে বলা হয়, এই ঘটনার দুই দিন আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে পুলিশ চিঠি দিয়ে ওই দিন সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত শয্যা, জরুরি পরিষেবা, চিকিৎসক এবং অ্যাম্বুল্যান্স প্রস্তুত রাখার অনুরোধ জানিয়েছিল। বিএনপি বিশ্বাস করে-এই নির্দেশনা কোনো কাকতালীয় বিষয় নয়। ডিএমপির প্রস্তুতিমূলক উদ্যোগ জনমনে প্রশ্ন তৈরি করেছে।

চিঠিতে রিজভী আহমেদ ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালের ১০টি ঘটনা তুলে ধরেন। উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে রয়েছে, ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের ঢাকায় তার নিজস্ব বাস লাইন বিহঙ্গ পরিবহনে পেট্রল দিয়ে আগুন দেওয়ার নির্দেশ, একই বছরের ১ জানুয়ারি মাগুরায় একটি বাসে আগুন দেওয়ার সময় ছাত্রলীগের তিন সদস্যকে আটক করা হয়। এ বছরই ৪ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের সদস্যরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। একই বছরের ১০ ডিসেম্বর সরকারি বিএল কলেজের ছাত্রলীগ বেশ কয়েকটি ছাত্রাবাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

হাসিনা টুপ করে পড়লেন কিনা দেখতে পদ্মা সেতুতে সারজিস

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দূতাবাসে বিএনপির চিঠি

আপডেট সময় ০৯:৫০:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩

২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বাপর ঘটনা এবং আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ নির্বাচন সামনে রেখে সহিংসতাসহ চলমান পরিস্থিতি তুলে ধরে জাতিসংঘসহ ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি মিশনে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। পাঁচ পৃষ্ঠার ওই চিঠিতে ৩০টি ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।

আজ রবিবার ই-মেইলের মাধ্যমে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানান বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। চিঠিতে স্বাক্ষর করেন রিজভী। রবিবার বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই চিঠি পড়ে শোনান তিনি।

চিঠিতে উল্লেখ করা ৩০ ঘটনার অধিকাংশ নাশকতাকে কেন্দ্র করে। এসব ঘটনার জন্য সরকার ও আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছে বিএনপি।
চিঠিতে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাংশ বাস-ট্রেনে পরিকল্পিত হামলার মাধ্যমে জনগণের জান-মাল, নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা বিনষ্ট করছে।

এদিকে রবিবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এনডিআই ও আইআরআই নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠক করে দেশের চলমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানের গুলশানের বাসভবনে এর আগে গত শনিবার কমনওয়েথ এবং তার কয়েক দিন আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাচন বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে বৈঠক করে দলটি।

চিঠিতে আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনী সহিংসতা এবং ভোটারদের ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে অভিযোগ করে ১০টি ঘটনা তুলে ধরেছে বিএনপি।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে— গত ২৭ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আলী ইস্কান্দার তাকে ভোট না দিলে ভোটারদের হাত কেটে ফেলার হুমকি দিয়েছেন।

কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার তার আসনে বিরোধী দলের কোনো কর্মীকে কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে দেখা গেলে হাত-পা ভেঙে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। কুষ্টিয়ার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সারোয়ার জাহান বাদশা ভোটারদের সতর্ক করেছেন। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন ভোটার ও বিএনপির সমর্থকদের হুমকি দিয়েছেন। গত ২৪ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ভোটারদের তাদের গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়ার হুমকি ইত্যাদি। চিঠিতে রিজভী আহমেদ বলেন, জনগণ আজ একটি অর্থবহ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ চায়।

আসন্ন ‘প্রহসনমূলক’ নির্বাচনের তথাকথিত প্রচারণার সময় আওয়ামী লীগ নেতারা খোলাখুলি স্বীকার করছেন যে তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোট কারচুপির সঙ্গে জড়িত ছিল। পুনরায় একই নাটক মঞ্চস্থ করতে তাঁদের রাষ্ট্রযন্ত্রের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে, এটিই স্বাভাবিক। চিঠিতে চলমান অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতার বিষয়ে গত ২৮ অক্টোবর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০টি ঘটনা তুলে ধরা হয়। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, গত ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ ও পুলিশের যৌথ তাণ্ডবে বেশ কয়েকটি যানবাহন ও বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এদিন রাজধানীর মালিবাগে পুলিশের ইউনিফর্ম পরা ব্যক্তিরা একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, গত ২৮ অক্টোবর হাইকোর্টের সামনে আগুন দেওয়া আরেকটি বাসের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ছাত্রলীগের পাঁচ যুবক বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। একই দিন কাকরাইলে একটি মোটরসাইকেলে করে দুই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি এসে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। চালকের বর্ণনা অনুযায়ী, আগুন ধরিয়ে দেওয়া ব্যক্তিরা পুলিশের পোশাক পরা ছিল।

গত ১৯ ডিসেম্বর তেজগাঁওয়ে চলন্ত ট্রেনে অগ্নি সংযোগের ঘটনায় রাষ্ট্রের একটি অংশ জড়িত বলে অভিযোগ করা হয় চিঠিতে। এতে বলা হয়, এই ঘটনার দুই দিন আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে পুলিশ চিঠি দিয়ে ওই দিন সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত শয্যা, জরুরি পরিষেবা, চিকিৎসক এবং অ্যাম্বুল্যান্স প্রস্তুত রাখার অনুরোধ জানিয়েছিল। বিএনপি বিশ্বাস করে-এই নির্দেশনা কোনো কাকতালীয় বিষয় নয়। ডিএমপির প্রস্তুতিমূলক উদ্যোগ জনমনে প্রশ্ন তৈরি করেছে।

চিঠিতে রিজভী আহমেদ ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালের ১০টি ঘটনা তুলে ধরেন। উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে রয়েছে, ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের ঢাকায় তার নিজস্ব বাস লাইন বিহঙ্গ পরিবহনে পেট্রল দিয়ে আগুন দেওয়ার নির্দেশ, একই বছরের ১ জানুয়ারি মাগুরায় একটি বাসে আগুন দেওয়ার সময় ছাত্রলীগের তিন সদস্যকে আটক করা হয়। এ বছরই ৪ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের সদস্যরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। একই বছরের ১০ ডিসেম্বর সরকারি বিএল কলেজের ছাত্রলীগ বেশ কয়েকটি ছাত্রাবাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।