এবার সরকারের ‘একতরফা’ ভোট প্রত্যাখ্যানে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ে আসছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে দেশবাসীকে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে প্রচারপত্র তৈরি করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জাতীয় সংসদের ভোটের দিন ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত হরতাল-অবরোধেই থাকবে বিএনপি। এর ফাঁকে ফাঁকে সারা দেশে ভোটবিরোধী এই প্রচারপত্র বিলি করা হবে।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, হঠাৎ এই নিষেধাজ্ঞার কারণে ভোটের দিন পর্যন্ত সভা-সমাবেশের কর্মসূচি করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। এ কারণে ভোটের দিন পর্যন্ত হরতাল-অবরোধের কর্মসূচিতেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন নীতিনির্ধারণী নেতারা। আজ মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কর্মসূচি রয়েছে। এরপর আবারও হরতাল বা অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণার সিদ্ধান্ত রয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনের সপ্তাহ জানুয়ারি মাসের শুরু থেকে সব বিরোধী দলকে সমন্বয় করে একটি সর্বাত্মক কর্মসূচি ঘোষণার চিন্তাভাবনা করছেন নীতিনির্ধারণী নেতারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার আনার জন্য সরকার নানা কৌশল করছে। একদিকে ৩০০ আসন নিজেরা ভাগাভাগি করছে, অন্যদিকে নিজ দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী করছে। নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলো সরকারের এই কৌশলের বিপরীতে মাঠের কর্মসূচির পাশাপাশি ভোটবিরোধী প্রচারে নামার পরিকল্পনা করছে। এই প্রচারপত্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ভাগাভাগির ‘একতরফা’ ভোট প্রত্যাখ্যান করতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানানো হবে।
জানা গেছে, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চসহ অন্যান্য জোট ও দল পৃথক প্রচারপত্র বিলি করবে। বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর নেতারা মনে করেন, জনসমর্থন আছে, এমন অধিকাংশ দলই এবারের নির্বাচন বর্জন করেছে।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ‘প্রহসনের নির্বাচন বর্জন কর, দুঃশাসন হটাও’ আহ্বান সংবলিত প্রচারপত্র তৈরি করে বিলি শুরু করেছে। প্রচারপত্রে সিপিবি বলেছে, ‘এ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে হচ্ছে না। নতুন নতুন দল তৈরি করে, স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে বেশি দলের অংশগ্রহণ দেখানোর চেষ্টা করলেও প্রকৃতপক্ষে একতরফা প্রহসনের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ভোটের প্রতি মানুষের আগ্রহ নেই। এটি বুঝতে পেরে সরকার ভোটকেন্দ্রে মানুষের উপস্থিতি দেখাতে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা অপকৌশল ব্যবহার করছে।’
ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম ইতিমধ্যে একাধিক কর্মসূচি থেকে বর্তমান সরকারের অধীন ‘একতরফা ও ভুয়া’ নির্বাচনে অংশ না নিতে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর নেতারা মনে করেন, জনসমর্থন আছে, এমন অধিকাংশ দলই এবারের নির্বাচন বর্জন করেছে। ফলে মাঠের কর্মসূচির পাশাপাশি ভোট বর্জনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর পৃথক আহ্বান ভোটারদের ঘরে ঘরে পৌঁছানো গেলে কেন্দ্রে ভোটার আনার সরকারি কৌশল অনেকটাই অকার্যকর করে দিতে পারে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এর আগাম সতর্কতা হিসেবে হয়তো সরকার ভোটবিরোধী প্রচার নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, কার্যত এই নির্বাচনের ফলাফল আগে ঠিক করা আছে। সেদিন তালিকা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দেবে মাত্র। দলমত নির্বিশেষে বাংলাদেশের জনগণ এই পাতানো, তামাশা ও প্রহসনের নির্বাচন সম্মিলিতভাবে বর্জন করবে।