কক্সবাজার থেকে হিজবুত তাহরীরের শীর্ষ নেতা তৌহিদুর রহমান ওরফে সিফাত (২৯) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)
সিটিটিসি জানায়, হিজবুত তাহরীরের শীর্ষ নেতাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। হাইলি রেডিকালাইজড এবং কাটআউট পদ্ধতিতে বিভিন্ন সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে আসছিল নিষিদ্ধ সংগঠনটি। সিটিটিসি অনেক সাফল্যের সঙ্গে হিজবুত তাহরীরের সবচেয়ে বড় নেতাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, বুধবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে কক্সবাজার থেকে তৌহিদুর রহমান ওরফে তৌহিদ ওরফে সিফাতকে (২৯) গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার তৌহিদ হিজবুত তাহরীরের শীর্ষ ২-৩ জনের মধ্যে একজন।
আসাদুজ্জামান গ্রেপ্তারের নেপথ্যের ঘটনা তুলে ধরে বলেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর হিজবুত তাহরীর একটি অনলাইন সম্মেলন করে। তারা সম্মেলনের জন্য রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার টানায়, অনলাইন প্রচারণা ও ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়। সম্মেলনে নানা রকম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়েছে। ২০০৩ সালের একটি সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে হিজবুত তাহরীর। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের প্রকাশ্য প্রচেষ্টায় সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে হিজবুত তাহরীর প্রচলিত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে না। তারা প্রচলিত আইন মানে না বলেও প্রচারণা চালিয়ে আসছিল। বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য দাওয়াতি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। যার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে এক ধরনের সাম্প্রদায়িক উস্কানি তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।
২০০৯ সালে হিজবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর থেকে আত্মগোপনে থেকে সংগঠনটির কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল শীর্ষ নেতারা। এর মধ্যে আমরা সংগঠনটির অনেককেই গ্রেপ্তার করেছি তবে শীর্ষ পর্যায়ের নেতা গ্রেপ্তার এবারই প্রথম।
তিনি বলেন, যেসব এলাকা সিসিটিভির আওতায় নেই বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি কম সেসব স্থান আগে থেকে রেকি করে তারা পোস্টার লাগাত। তারপরেও পোস্টার লাগানোর সময় আমরা অনেককে হাতে-নাতে গ্রেপ্তার করেছি। কিন্তু শীর্ষ নেতাদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার চ্যালেঞ্জ ছিল।
সিটিটিসি প্রধান আরও বলেন, হিজবুত তাহরীর সাধারণত উচ্চবিত্ত ও মেধাবীদের টার্গেট করে প্রচারণা চালায়। তাদের ভাবনা, যদি এই শ্রেণিকে রিক্রুট করতে পারে প্রতিষ্ঠিত সমাজে সমর্থন পাবে এবং খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। তারা সদস্য সংগ্রহের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও টার্গেট করে।
গ্রেপ্তার তৌহিদের পরিবারের একজন সদস্য সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তা। এছাড়া পরিবারের বেশ কয়েকজন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তৌহিদ ২০১১ ও ২০১৯ সালে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে আবারও সাংগঠনিক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘ ১২ বছরে তৌহিদ সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ে চলে আসে।
তৌহিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে হিজবুত তাহরীরের ফুলটাইম সদস্য হিসেবে কাজ করে আসছিল। ৩০ সেপ্টেম্বর তাদের অনলাইন সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন তৌহিদ।
তিনি বলেন, আমাদের তদন্ত অব্যাহত আছে। তাকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা খুব বেশি সময় পাইনি। তবে তাকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে। আশা করছি রিমান্ডে তার কাছ থেকে সংগঠন সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সম্মেলনের বিষয়টি জানার পর কনফিউজড ছিলাম সম্মেলনটি দেশের ভেতরে নাকি বাইরে থেকে অনুষ্ঠিত করা হয়েছে। এখনো স্থানটি শনাক্ত করতে পারিনি, তবে বাংলাদেশের কোথাও করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করাও চ্যালেঞ্জের বিষয়। আশা করছি, জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত জানতে পারব, পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাব।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা শীর্ষ নেতাদের শনাক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছিলাম, কিন্তু শনাক্ত করতে পারিনি। তারা খুবই প্রোটেকটিভভাবে যোগাযোগ করে। তাদের শনাক্ত করা চ্যালেঞ্জের বিষয়।
সম্মেলনে মঞ্চে উপস্থিত তিনজনের মধ্যে দুজন বক্তব্য দেন ও একজন উপস্থাপক ছিলেন। আমরা প্রধান ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি, আশা করছি বাকি দুজনকে গ্রেপ্তার করতে পারবো। তাদের সম্মেলনের মূল বিষয় ছিল বর্তমান সরকারকে উৎখাত করা। তবে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্তারিত জানা যাবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা পোস্টার কোথায় ছাপায় এটা আমাদেরও প্রশ্ন, জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করব। যারা পোস্টার টানায় তাদের হয়ত হাতে নাতে ২-১ জনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি বিভিন্ন সময়। কিন্তু তারা কাট আউট, স্লিপার সেল পদ্ধতিতে কাজ করে। তাদের রিক্রুট কৌশলটাও একটু অন্যরকম। বিভিন্ন গ্রুপকে টার্গেট করে মেসেজ দেয় তাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য। আমরা বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করব।
কারাগারে রেডিকালাইজেশনের বিষয়ে তিনি বলেন, কারাগারে আমাদের কোন সুপারভিশন থাকে না। তবে যারা অথরিটি আছে আশা করি, তারা এ বিষয়ে সচেতন। আমরা যতটুকু জানি জঙ্গিদের আলাদা সেলে সর্বোচ্চ নজরদারিতে রাখা হয়। এরপরেও তারা সুযোগ নিয়ে নিজেদের কাজ করতে পারে। তবে আমরা কারাগারে ডিরেডিক্যালাইজড সিস্টেমের মধ্যেও যাচ্ছি, খুব শিগগিরই আমরা এ বিষয়ে কাজ শুরু করব। জঙ্গিরা জেল থেকে বের হয়ে সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়েও চলে আসছে, আমরা এ বিষয়ে কনসার্ন।