ঢাকা ১০:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তেহরিক-ই-ইনসাফের চেয়ারম্যান পদ ছাড়ছেন ইমরান খান

দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা দলীয় প্রধানের পদে থাকার ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় ইমরান খানকে। যার কারণে পাকিস্তানের বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান পদে নিজের আইনজীবীকে মনোনীত করেছেন তিনি।

পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের আদেশ অনুযায়ী, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দলের নতুন চেয়ারম্যান নির্ধারণ করতে হবে। পিটিআই নেতা সিনেটর আলি জাফর জানিয়েছেন, দলের চেয়ারম্যান নির্বাচনে ইমরান খান অংশ নেবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি তার আইনজীবী ব্যারিস্টার গহর আলী খানকে মনোনীত করেছেন।

তবে ইমরান খান মনোনীত করলেও আগামী ২ ডিসেম্বর পিটিআইয়ের দলীয় সম্মেলনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে বিজয়ী হলেই চেয়ারম্যান পদ নিশ্চিত হবে ব্যারিস্টার গহর আলীর। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্য বিবিসির সংবাদদাতারা বলছেন, ওই নির্বাচনে ইমরান খানের মনোনয়নের বাইরে কারও নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলা চলে।

ইমরান খানের ওপর থেকে ‘অযোগ্য আদেশ’ আদালত তুলে নিলে তিনি আবার চেয়ারম্যান পদে ফেরত যাবেন বলে জানিয়েছেন আলি জাফর। একই তথ্য জানিয়েছেন ইমরান খানের আইনজীবী শের আফজাল মারওয়াত।

পাকিস্তানের আইন অনুযায়ী, তোশাখানা মামলা বা উপহার হিসেবে পাওয়া রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিক্রির মামলায় গ্রেফতার হওয়া ইমরান খান নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না বা দলীয় পদে থাকতে পারবেন না।

আইনজীবী শের আফজাল মারওয়াত বলেছেন, আদিয়ালা কারাগারে ইমরান খানের সঙ্গে তিনি দেখা করেছেন। সেখানে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তার মধ্যে দলের নেতৃত্বের বিষয়টিও ছিল।

পিটিআই নেতা সিনেটর আলি জাফর বলেছেন, চেয়ারম্যান হিসেবে না থাকলেও দলের প্রধান নেতা হিসেবেই থাকবেন ইমরান খান। অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান হিসেবে এমন একজনকে চাইছিলেন ইমরান খান, দলে যার স্থায়ী পদ নেই। দলের স্থায়ী চেয়ারম্যান ও নেতা হিসাবে ইমরান খানই থাকবেন।

আলি জাফর আরও বলেছেন, ইমরান খান ছাড়া পিটিআই কিছুই নয়। পিটিআই হচ্ছে ইমরান খান ও ইমরান খান হচ্ছেন পিটিআই। কৌশলগত কারণে নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এটা আমাদের প্ল্যান-বি। বহুদিন ধরেই আমরা এজন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।

এই ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় ব্যারিস্টার গহর আলী বলেছেন, ইমরান খানকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা আমার নেই। ইমরান খান যতদিন ফেরত না আসবেন, আমি ততদিন তার মনোনীত প্রতিনিধি ও উত্তরসূরি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাবো। পিটিআইয়ের আদর্শ ও সংগ্রাম একই থাকবে।

ইমরান খানকে কেন্দ্র করেই পাকিস্তান পিটিআই গড়ে উঠেছে। তিনিই এই পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এমনকি, ব্যালট পেপারে এই দলের যে লোগো ছাপা হয় তাতেও ক্রিকেট ব্যাটের ছবি রয়েছে, যা ইমরান খানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের কথা তুলে ধরে।

গত আগস্ট মাসে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে পাঁচ বছরের জন্য সরকারি পদে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এর ফলে এ সময়কালের মধ্যে নির্বাচন করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হন তিনি।

দুর্নীতি মামলায় ইমরান খানের তিন বছর কারাদণ্ড হওয়ার তিনদিন পর দেশটির নির্বাচন কমিশন এ ঘোষণা দেয়। মঙ্গলবারের (২৮ নভেম্বর) ওই ঘোষণার কারণে তিনি আর সংসদ সদস্যও থাকতে পারবেন না। অবশ্য বরাবরই নিজের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেছেন ইমরান খান।

ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিতে আসা ৭০ বছর বয়সী ইমরান খান ২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। কিন্তু গত বছর দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ার পর সংসদে অনাস্থা ভোটে তিনি ক্ষমতা হারান।

তার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ ছিল, বিদেশিদের কাছ থেকে পাওয়া উপহারের তথ্য সঠিকভাবে না জানানো ও রাষ্ট্রীয় উপহার বিক্রি করে অর্জিত অর্থ তোষাখানায় জমা না দেওয়া। এসব উপহারের আনুমানিক মূল্য এক কোটি ৪০ লাখ পাকিস্তানি রুপি, যা ৬ লাখ ৩৫ হাজার ডলারের সমপরিমাণ।

জনপ্রিয় সংবাদ

তেহরিক-ই-ইনসাফের চেয়ারম্যান পদ ছাড়ছেন ইমরান খান

আপডেট সময় ০৬:৩৫:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩

দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা দলীয় প্রধানের পদে থাকার ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় ইমরান খানকে। যার কারণে পাকিস্তানের বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান পদে নিজের আইনজীবীকে মনোনীত করেছেন তিনি।

পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের আদেশ অনুযায়ী, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দলের নতুন চেয়ারম্যান নির্ধারণ করতে হবে। পিটিআই নেতা সিনেটর আলি জাফর জানিয়েছেন, দলের চেয়ারম্যান নির্বাচনে ইমরান খান অংশ নেবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি তার আইনজীবী ব্যারিস্টার গহর আলী খানকে মনোনীত করেছেন।

তবে ইমরান খান মনোনীত করলেও আগামী ২ ডিসেম্বর পিটিআইয়ের দলীয় সম্মেলনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে বিজয়ী হলেই চেয়ারম্যান পদ নিশ্চিত হবে ব্যারিস্টার গহর আলীর। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্য বিবিসির সংবাদদাতারা বলছেন, ওই নির্বাচনে ইমরান খানের মনোনয়নের বাইরে কারও নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলা চলে।

ইমরান খানের ওপর থেকে ‘অযোগ্য আদেশ’ আদালত তুলে নিলে তিনি আবার চেয়ারম্যান পদে ফেরত যাবেন বলে জানিয়েছেন আলি জাফর। একই তথ্য জানিয়েছেন ইমরান খানের আইনজীবী শের আফজাল মারওয়াত।

পাকিস্তানের আইন অনুযায়ী, তোশাখানা মামলা বা উপহার হিসেবে পাওয়া রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিক্রির মামলায় গ্রেফতার হওয়া ইমরান খান নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না বা দলীয় পদে থাকতে পারবেন না।

আইনজীবী শের আফজাল মারওয়াত বলেছেন, আদিয়ালা কারাগারে ইমরান খানের সঙ্গে তিনি দেখা করেছেন। সেখানে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তার মধ্যে দলের নেতৃত্বের বিষয়টিও ছিল।

পিটিআই নেতা সিনেটর আলি জাফর বলেছেন, চেয়ারম্যান হিসেবে না থাকলেও দলের প্রধান নেতা হিসেবেই থাকবেন ইমরান খান। অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান হিসেবে এমন একজনকে চাইছিলেন ইমরান খান, দলে যার স্থায়ী পদ নেই। দলের স্থায়ী চেয়ারম্যান ও নেতা হিসাবে ইমরান খানই থাকবেন।

আলি জাফর আরও বলেছেন, ইমরান খান ছাড়া পিটিআই কিছুই নয়। পিটিআই হচ্ছে ইমরান খান ও ইমরান খান হচ্ছেন পিটিআই। কৌশলগত কারণে নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এটা আমাদের প্ল্যান-বি। বহুদিন ধরেই আমরা এজন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।

এই ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় ব্যারিস্টার গহর আলী বলেছেন, ইমরান খানকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা আমার নেই। ইমরান খান যতদিন ফেরত না আসবেন, আমি ততদিন তার মনোনীত প্রতিনিধি ও উত্তরসূরি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাবো। পিটিআইয়ের আদর্শ ও সংগ্রাম একই থাকবে।

ইমরান খানকে কেন্দ্র করেই পাকিস্তান পিটিআই গড়ে উঠেছে। তিনিই এই পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এমনকি, ব্যালট পেপারে এই দলের যে লোগো ছাপা হয় তাতেও ক্রিকেট ব্যাটের ছবি রয়েছে, যা ইমরান খানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের কথা তুলে ধরে।

গত আগস্ট মাসে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে পাঁচ বছরের জন্য সরকারি পদে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এর ফলে এ সময়কালের মধ্যে নির্বাচন করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হন তিনি।

দুর্নীতি মামলায় ইমরান খানের তিন বছর কারাদণ্ড হওয়ার তিনদিন পর দেশটির নির্বাচন কমিশন এ ঘোষণা দেয়। মঙ্গলবারের (২৮ নভেম্বর) ওই ঘোষণার কারণে তিনি আর সংসদ সদস্যও থাকতে পারবেন না। অবশ্য বরাবরই নিজের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেছেন ইমরান খান।

ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিতে আসা ৭০ বছর বয়সী ইমরান খান ২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। কিন্তু গত বছর দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ার পর সংসদে অনাস্থা ভোটে তিনি ক্ষমতা হারান।

তার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ ছিল, বিদেশিদের কাছ থেকে পাওয়া উপহারের তথ্য সঠিকভাবে না জানানো ও রাষ্ট্রীয় উপহার বিক্রি করে অর্জিত অর্থ তোষাখানায় জমা না দেওয়া। এসব উপহারের আনুমানিক মূল্য এক কোটি ৪০ লাখ পাকিস্তানি রুপি, যা ৬ লাখ ৩৫ হাজার ডলারের সমপরিমাণ।