ঢাকা ১০:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo সাভারে বাড়ি ফেরার পথে ধ’র্ষ’ণে’র শিকার তরুণী, থানায় মামলা Logo ‘কুরআন প্রশিক্ষণ প্রোগামে হামলা কোনো সভ্য মানুষ করতে পারে না’ Logo নোয়াখালীতে ছাত্রশিবিরের উপর যুবদলের হামলার প্রতিবাদে ফেনীতে বিক্ষোভ Logo শিক্ষকদের দাবি না মানলে খুনি হাসিনার চেয়ে পরিণতি আরও বেশি খারাপ হবে: ডাকসু ভিপি Logo জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা Logo শিক্ষার্থীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে বিইউপি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল Logo সয়দাবাদ রেলস্টেশন এলাকার রেলের মাটি বিক্রি করছেন বিএনপি নেতা Logo পিআর আন্দোলনকে জামায়াতের একটি রাজনৈতিক প্রতারণা বলছেন নাহিদ ইসলাম Logo ছাত্রলীগের নামে রুম দখলে নেওয়া সেই পিয়াল এখন ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক Logo পুরান ঢাকায় ছুরিকাঘাতে জবি শিক্ষার্থীকে খুন
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যাল

ছাত্রলীগের নামে রুম দখলে নেওয়া সেই পিয়াল এখন ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক

ছাত্রলীগের নামে রুম দখলে নেওয়া সেই পিয়াল এখন ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) শেখ রাসেল হলে খাবারের কুপন বিতরণকে কেন্দ্র করে নাসিফ ইকবাল পিয়াল নামের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে হল প্রভোস্টের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত হল ফিস্টের অগ্রীম কুপন বিতরণের সময় এ ঘটনা ঘটে।

পিয়াল বর্তমানে শাখা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক পদে আছেন। তবে আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।শুধু তাই নয়, ছাত্রলীগ পরিচয়ে জোরপূর্বক হলের রুম দখলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

কুপন বিতরণের সময় উপস্থিত হাউজ টিউটরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শেখ রাসেল হলে টোকেন সংগ্রহের বিষয়ে আগেই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ছাত্রদল নেতা পিয়াল সেই নিয়ম মানেননি; সরাসরি অফিসে ঢুকে টোকেন দাবি করেন। এ সময় অন্য শিক্ষার্থীরা নিয়ম মেনে লাইনে দাঁড়িয়ে টোকেন নিচ্ছিল। পিয়াল প্রমাণপত্র ছাড়াই টোকেন চাইলে শিক্ষকরা তাকে ডকুমেন্টস আনতে বলেন। তখন প্রভোস্ট মহোদয় বলেন, ‘ডকুমেন্টস বা মোবাইল কোনোটাই সঙ্গে নেই।” তবুও তিনি টোকেন দেওয়ার জোর দাবি জানান।তারা বলেন, ‘পরিচিত হলেও কাউকে নিয়ম ভেঙে টোকেন দেওয়া হয়নি।’ তখন পিয়াল আলিম নামে এক শিক্ষার্থীকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘সে শিবির করে, এখানে কেন?’ এ সময় তিনি উচ্চস্বরে নানা প্রশ্ন তুললে প্রভোস্ট তাকে শান্ত থাকতে বলেন এবং টেবিলে থাপা দেন।তখন পিয়াল উত্তেজিত হয়ে প্রভোস্টের দিকে এগিয়ে গেলে আলিম তাকে থামানোর চেষ্টা করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী কামালসহ হাউজ টিউটর ও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, কুপন নিতে আসার সময় পিয়ালের আচরণ ছিল শিক্ষার্থীসুলভ ভদ্রতার পরিপন্থী। শিক্ষকরা তার কাছে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস চাইলে তিনি জানান, সেগুলো সঙ্গে আনেননি। পরে মোবাইল থেকে দেখাতে বললেও তিনি বলেন, মোবাইলও সঙ্গে নেই। তবুও তিনি ডকুমেন্ট ছাড়াই টোকেন দেওয়ার দাবি জানাতে থাকেন। না দেওয়ার কারণে একসময় বাজে আচরণ শুরু করেন।

হল প্রভোস্ট ড. মো. আবু রাশেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘হলের শিক্ষার্থী অনেকেই আমার পরিচিত, তাই বলে কাউকেই নিয়ম ভঙ্গ করে টোকেন দেওয়া হয়নি। আমি শিক্ষক হয়ে ছাত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি না। তবে শিক্ষকের বাইরে যদি অন্য মানুষের সাথে এটা হতো তাহলে এটাকে মারতে আসাই বলা যায়। যখন ও তেড়ে আসতেছিল তখন আব্দুল আলীম দুইহাত প্রাসারিত করে প্রটেক্ট করে। হলের সব শিক্ষার্থীকে মিটিং এ ডাকা হয়েছিল। সে প্রেক্ষিতে যারা আগ্রহী ছিল তারা সাহায্য করতেছিল।

হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল আলিম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের ‘হল ফিস্ট’ উপলক্ষে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, যেখানে আমি স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যুক্ত ছিলাম। প্রভোস্ট স্যারের পরামর্শে টোকেন বিতরণে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে ছিলাম। নিয়ম অনুযায়ী টোকেন নিতে ডকুমেন্ট দেখানো বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু পিয়াল তা না দেখিয়ে জোরপূর্বক টোকেন দাবি করেন। একপর্যায়ে প্রভোস্ট স্যার কিছুটা রাগান্বিত হলে, পিয়াল আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে স্যারের দিকে অগ্রসর হন। আমি তখন দ্রুত বাধা দিই যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে। পরে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ান। কমিটির কাজ ছিল সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবী, কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না।’
প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে অশোভন আচরণের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শাখা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক নাসিফ ইকবাল পিয়াল ঢাকা ভয়েস২৪কে বলেন, প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে একটু বাগবিতন্ডা হয়েছিল।এটি মূলত ভুলবুঝাবুঝি থেকে এমনটি ঘটে।

ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িতের অভিযোগের বিষয়ে পিয়াল বলেন, ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে যে ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরপাক খাচ্ছে সেটি এডিটেড ছবি বলে দাবি করেন তিনি।

তবে অতীতে আওয়ামী সময়ে ছাত্রলীগের প্রচার ও প্রচারণায় যুক্ত ছিলেন পিয়াল এটি ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীসহ সবরাই জানা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে ছাত্রলীগের সহসভাপতি রায়হান আহমেদ শান্তর পক্ষে জনমত গঠন করতেও দেখা গেছে। ছাত্রলীগের আমলে শেখ রাসেল হলের ৩১৬ নাম্বার রুম পিয়াল ও তার বন্ধু অবৈধভাবে দখল করে। চলতি বছরের মে মাসে জুনিয়রদেরকে টর্চারের অভিযোগ উঠে। এরই প্রেক্ষিতে রুমটি নোটিশ দিয়ে সিলগালা করা হয়।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

সাভারে বাড়ি ফেরার পথে ধ’র্ষ’ণে’র শিকার তরুণী, থানায় মামলা

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যাল

ছাত্রলীগের নামে রুম দখলে নেওয়া সেই পিয়াল এখন ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক

আপডেট সময় ০৭:৫১:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) শেখ রাসেল হলে খাবারের কুপন বিতরণকে কেন্দ্র করে নাসিফ ইকবাল পিয়াল নামের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে হল প্রভোস্টের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত হল ফিস্টের অগ্রীম কুপন বিতরণের সময় এ ঘটনা ঘটে।

পিয়াল বর্তমানে শাখা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক পদে আছেন। তবে আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।শুধু তাই নয়, ছাত্রলীগ পরিচয়ে জোরপূর্বক হলের রুম দখলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

কুপন বিতরণের সময় উপস্থিত হাউজ টিউটরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শেখ রাসেল হলে টোকেন সংগ্রহের বিষয়ে আগেই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ছাত্রদল নেতা পিয়াল সেই নিয়ম মানেননি; সরাসরি অফিসে ঢুকে টোকেন দাবি করেন। এ সময় অন্য শিক্ষার্থীরা নিয়ম মেনে লাইনে দাঁড়িয়ে টোকেন নিচ্ছিল। পিয়াল প্রমাণপত্র ছাড়াই টোকেন চাইলে শিক্ষকরা তাকে ডকুমেন্টস আনতে বলেন। তখন প্রভোস্ট মহোদয় বলেন, ‘ডকুমেন্টস বা মোবাইল কোনোটাই সঙ্গে নেই।” তবুও তিনি টোকেন দেওয়ার জোর দাবি জানান।তারা বলেন, ‘পরিচিত হলেও কাউকে নিয়ম ভেঙে টোকেন দেওয়া হয়নি।’ তখন পিয়াল আলিম নামে এক শিক্ষার্থীকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘সে শিবির করে, এখানে কেন?’ এ সময় তিনি উচ্চস্বরে নানা প্রশ্ন তুললে প্রভোস্ট তাকে শান্ত থাকতে বলেন এবং টেবিলে থাপা দেন।তখন পিয়াল উত্তেজিত হয়ে প্রভোস্টের দিকে এগিয়ে গেলে আলিম তাকে থামানোর চেষ্টা করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী কামালসহ হাউজ টিউটর ও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, কুপন নিতে আসার সময় পিয়ালের আচরণ ছিল শিক্ষার্থীসুলভ ভদ্রতার পরিপন্থী। শিক্ষকরা তার কাছে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস চাইলে তিনি জানান, সেগুলো সঙ্গে আনেননি। পরে মোবাইল থেকে দেখাতে বললেও তিনি বলেন, মোবাইলও সঙ্গে নেই। তবুও তিনি ডকুমেন্ট ছাড়াই টোকেন দেওয়ার দাবি জানাতে থাকেন। না দেওয়ার কারণে একসময় বাজে আচরণ শুরু করেন।

হল প্রভোস্ট ড. মো. আবু রাশেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘হলের শিক্ষার্থী অনেকেই আমার পরিচিত, তাই বলে কাউকেই নিয়ম ভঙ্গ করে টোকেন দেওয়া হয়নি। আমি শিক্ষক হয়ে ছাত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি না। তবে শিক্ষকের বাইরে যদি অন্য মানুষের সাথে এটা হতো তাহলে এটাকে মারতে আসাই বলা যায়। যখন ও তেড়ে আসতেছিল তখন আব্দুল আলীম দুইহাত প্রাসারিত করে প্রটেক্ট করে। হলের সব শিক্ষার্থীকে মিটিং এ ডাকা হয়েছিল। সে প্রেক্ষিতে যারা আগ্রহী ছিল তারা সাহায্য করতেছিল।

হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল আলিম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের ‘হল ফিস্ট’ উপলক্ষে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, যেখানে আমি স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যুক্ত ছিলাম। প্রভোস্ট স্যারের পরামর্শে টোকেন বিতরণে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে ছিলাম। নিয়ম অনুযায়ী টোকেন নিতে ডকুমেন্ট দেখানো বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু পিয়াল তা না দেখিয়ে জোরপূর্বক টোকেন দাবি করেন। একপর্যায়ে প্রভোস্ট স্যার কিছুটা রাগান্বিত হলে, পিয়াল আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে স্যারের দিকে অগ্রসর হন। আমি তখন দ্রুত বাধা দিই যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে। পরে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ান। কমিটির কাজ ছিল সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবী, কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না।’
প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে অশোভন আচরণের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শাখা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক নাসিফ ইকবাল পিয়াল ঢাকা ভয়েস২৪কে বলেন, প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে একটু বাগবিতন্ডা হয়েছিল।এটি মূলত ভুলবুঝাবুঝি থেকে এমনটি ঘটে।

ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িতের অভিযোগের বিষয়ে পিয়াল বলেন, ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে যে ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরপাক খাচ্ছে সেটি এডিটেড ছবি বলে দাবি করেন তিনি।

তবে অতীতে আওয়ামী সময়ে ছাত্রলীগের প্রচার ও প্রচারণায় যুক্ত ছিলেন পিয়াল এটি ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীসহ সবরাই জানা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে ছাত্রলীগের সহসভাপতি রায়হান আহমেদ শান্তর পক্ষে জনমত গঠন করতেও দেখা গেছে। ছাত্রলীগের আমলে শেখ রাসেল হলের ৩১৬ নাম্বার রুম পিয়াল ও তার বন্ধু অবৈধভাবে দখল করে। চলতি বছরের মে মাসে জুনিয়রদেরকে টর্চারের অভিযোগ উঠে। এরই প্রেক্ষিতে রুমটি নোটিশ দিয়ে সিলগালা করা হয়।