চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।
বুধবার সকাল ৯টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ভোট দেয়ার জন্য কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের লম্বা লাইন দেখা গেছে।
ছাত্রশিবিরের ভিপি প্রার্থী ইব্রাহিম হোসেন রনি ও ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় সকাল ১০টায় আইটি অনুষদের ভোটকেন্দ্র ভোট দিবেন। প্রতিটি হলে ভোট গ্রহণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে শিক্ষক, কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিএনসিসি, প্রক্টরিয়াল টিম দায়িত্ব পালন করছে।
৩৬ বছর পর আয়োজিত এ ভোটযুদ্ধ ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদ ভবনে মোট ১৫ ভোটকেন্দ্র এবং ৬১ ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। সব ভোটকক্ষে সর্বোচ্চ ৫০০ ভোটার ভোট দিতে পারবেন। এবারের নির্বাচনে চাকসুর ২৬ পদে লড়ছেন ৪১৫ প্রার্থী।
এছাড়া হল ও হোস্টেল সংসদের ২৪ পদে লড়ছেন ৪৯৩ জন। মোট ভোটার ২৭ হাজার ৫১৬ জন। তারা পছন্দের প্রার্থীর নামের পাশে থাকা বৃত্ত পূরণ করে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তবে একাধিক বৃত্ত পূরণ করলে সংশ্লিষ্ট ভোট বাতিল হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেছেন, এবারের নির্বাচন ওএমআর ব্যালট পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সব ব্যালটে থাকবে ২৪ অঙ্কের নিরাপত্তা কোড এবং একটি গোপন কোড, যা মেশিনে শনাক্ত হবে।
চাকসু নির্বাচনে ১৩ প্যানেলে অংশগ্রহণ করছেন প্রার্থীরা। এর মধ্যে অন্যতম হলো ছাত্রদলের প্যানেল, ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন, বাম সংগঠনগুলোর দুই প্যানেল দ্রোহ পর্ষদ ও বৈচিত্র্য ঐক্য, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মসলিজ সমর্থিত সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সমর্থিত সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট এবং সুফিপন্থি শিক্ষার্থীদের প্যানেল অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য।
কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা: বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। মাঠে থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখা, পুলিশ, র্যাব, ফায়ার সার্ভিস, রিজার্ভ ফোর্স, স্ট্রাইকিং ফোর্স, গোয়েন্দা সংস্থা, বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট।
দায়িত্বে থাকবেন পাঁচ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়া এক হাজার ৫০ পুলিশ ও ৪০ র্যাব সাইকেল ইউনিটের সদস্য থাকছেন। প্রয়োজনে বিজিবি ও সেনাবাহিনীও সহায়তা করতে পারে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে। ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগে ভোটারদের তিন ধাপে তল্লাশি করা হতে পারে।
শাটল ট্রেন ও বিশ্ববিদ্যালয়গামী বাসের রুটে কঠোর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ থাকবে। প্রশাসন আশা করছে, শিক্ষার্থীরা দায়িত্বশীল আচরণ করবেন এবং কোনো পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বলেছেন, শিক্ষার্থীরা যেন নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেজন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছাড়া বাইরের কারো প্রবেশাধিকার থাকবে না। কেবল নির্বাচন কমিশনের অনুমোদিত ব্যক্তিরাই প্রবেশ করতে পারবেন।
তিনি আরো জানান, গোপন ব্যালট কক্ষ ছাড়া ক্যাম্পাসের সব জায়গায় সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশাধিকার থাকবে। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে প্রশাসনের কার্যক্রম সমন্বয় করা হয়েছে, যাতে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়।
রাজনৈতিক দলের বাইরের কেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর বলেন, নির্বাচন কমিশন যাদের অনুমোদন দেবে না, তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবেন না। অনুমোদিতদের জন্য নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
ভোটারদের জন্য নির্দেশনা: আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করা যাবে তিনটি গেট দিয়ে কাটা পাহাড়, ৩ নম্বর গোডাউন ও শহীদ মিনারের দক্ষিণের আর্চওয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ আইডি কার্ড সঙ্গে রাখা বাধ্যতামূলক। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা ব্যাংক পে স্লিপ দেখিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন।
ভোটকক্ষে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকার সঙ্গে আইডি কার্ড যাচাই শেষে পাঁচটি ব্যালট পেপার দেওয়া হবে। গোপন কক্ষে নির্ধারিত পেন ব্যবহার করে প্রার্থীর নামের পাশে থাকা বৃত্ত পূরণ করতে হবে। নির্বাহী সদস্য পদে সর্বোচ্চ পাঁচটি, হল সংসদে তিনটি এবং হোস্টেল সংসদে তিনটি ভোট দেওয়া যাবে। কোনো পদে সীমার বেশি ভোট দিলে শুধু ওই পদের ভোট বাতিল হবে।
ভোট শেষে ব্যালট নির্ধারিত বাক্সে ফেলতে হবে এবং বিকল্প পথে কেন্দ্র ত্যাগ করতে হবে, যাতে ভিড় এড়ানো যায়। কমিশন নির্বাচনি কর্মকর্তাদের প্রতি ভদ্র আচরণ ও সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছে। অনিয়ম বা অভিযোগ উঠলে তাৎক্ষণিক যোগাযোগের জন্য ০১৮১৯৩৮৭১২২ নম্বর দেওয়া হয়েছে।
শাটল ট্রেন ও বাস চলাচল: ভোটের দিন শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে শাটল ট্রেন ১১ বার বিশ্ববিদ্যালয় ও নগরীর মধ্যে আসা-যাওয়া করবে। এছাড়া চলবে ৩০টি বাস। চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়বে সকাল সাড়ে ৭টায় এবং সর্বশেষ ট্রেন ছেড়ে যাবে রাত ১০টা ১০ মিনিটে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়বে সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে, সর্বশেষ ট্রেন রাত পৌনে ১১টায়। এছাড়া সকাল ৯টায় নিউ মার্কেট থেকে পাঁচটি ভাড়া বাস এবং ষোলশহর শপিং কমপ্লেক্স থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পাঁচটি বাস ছাড়বে। সকাল ১০টায় আরো পাঁচটি বাস যোগ হবে।
বেলা ৩টা এবং বিকাল ৪টায় ক্যাম্পাস থেকে পাঁচটি করে বাস ষোলশহরের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে এবং বিকাল সাড়ে ৫টায় শেষ ট্রিপে পাঁচটি বাস নিউ মার্কেটের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।