ঢাকা ১১:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo আবু সাঈদ হত্যা মামলার দশম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ Logo চবি ছাত্রদলের নেতা মামুনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করল কেন্দ্রীয় ছাত্রদল Logo নর্থসাউথ শিক্ষার্থীর কোরআন অবমাননার প্রতিবাদে হরগঙ্গায় কোরআন বিতরণ Logo দিনাজপুরে শিবিরকর্মী হত্যা মামলায় উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ৫ জন কারাগারে Logo ঢাকায় আসছেন জাকির নায়েক Logo হাজার হাজার দেশপ্রেমিকের হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন হাসিনা: চিফ প্রসিকিউটর Logo ১৩টি ড্রেজারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ আ.লীগ-বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে Logo টিভিতে যে খেলা থাকছে আজ Logo মধ্যরাতে ঢাবি ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সং’ঘর্ষ Logo ১৭ বছর আন্দোলন করেছি বাসস্ট্যান্ড দখলের জন্য নয়: ইশরাক

হাজার হাজার দেশপ্রেমিকের হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন হাসিনা: চিফ প্রসিকিউটর

পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জুলাই গণ-আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন-পর্ব শুরু হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, হাজার হাজার দেশপ্রেমিক মানুষকে খুন করা হয়েছে, যার নির্দেশদাতা ছিলেন শেখ হাসিনা।গতকাল রোববার (১২ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অনুষ্ঠিত শুনানি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

এ সময় চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনের কথা তুলে ধরে বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম-খুনের অসংখ্য ঘটনা ঘটে। এমন একজন ঘাতক আছেন, যিনি বিরোধী মতের লোকদের হত্যায় কাজ করতেন। তিনি খুব কাছ থেকে মাথায় গুলি করতেন। ভুক্তভোগীর মাথার মগজ ও রক্ত ফিনকি দিয়ে ওই ঘাতকের শরীরে পড়ত। মগজ ও রক্তের গরম ঘাতকের অন্যরকম অনুভূতি হতো। এছাড়া বহু মানুষের মাথায় গুলি করে পেট কেটে সিমেন্টের বস্তা বেঁধে নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হতো। হাত-পা বেঁধে রেললাইনে ফেলে রাখা হতো। বলা হতো ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে। এভাবে হাজার হাজার দেশপ্রেমিক মানুষকে খুন করা হয়েছে, যার নির্দেশদাতা ছিলেন শেখ হাসিনা।

শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্রমান্বয়ে দানবে পরিণত হওয়ার কারণেই চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। প্রথমে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তারা আমাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়। পরে গুম-খুনের সংস্কৃতি চালু করে। এরপর নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে। দেশে দুর্নীতি সর্বগ্রাসী রূপ পায়। এসবের মাধ্যমেই তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) ক্রমান্বয়ে এক দানবীয় সরকারে পরিণত হয়েছিল। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়। শুনানির একপর্যায়ে বিচারকদেরও জবাবদিহি থাকা উচিত বলে অভিমত প্রকাশ করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

যুক্তিতর্ক শুনানিপর্বে জুলাই আন্দোলন দমনে হত্যাযজ্ঞ ছাড়াও পিলখানা হত্যাকাণ্ড, র‌্যাবের গুম-খুন, একদলীয় শাসন, বিচার বিভাগ দলীয়করণ, প্রহসনের নির্বাচন, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা, বিচারপতি খায়রুল হকের প্রতারণাসহ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের নানা অপকর্ম উঠে আসে তাজুল ইসলামের বক্তব্যে।

এদিকে যুক্তিতর্ক সরাসরি উপস্থাপন সম্প্রচারের সময় চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের ফেসবুক পেজে সাইবার হামলা হয়। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক সরাসরি সম্প্রচারের সময় চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের ফেসবুক পেজে সাইবার অ্যাটাক (হামলা) হয়। ফেসবুক পেজটি সাময়িকভাবে ডিজেবল (নিষ্ক্রিয়) করে দিয়েছিল হামলাকারীরা। পরে সেটা উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

তিনি বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে একে একে সাতজনকে খুন ও লাশ গুম করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। র‌্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এমএম রানা-তিনজনই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এভাবে গুমের সংস্কৃতি চালু হয়। সাতজনকে হত্যা ছিল র‌্যাবের প্রাতিষ্ঠানিক মানবতাবিরোধী অপরাধ।

তাজুল ইসলাম বলেছেন, জনগণকে নির্যাতন, হত্যা ও ভয়ভীতির রাজত্ব কায়েম করাই ছিল তাদের (আওয়ামী লীগ সরকারের) লক্ষ্য। এই দানবীয় শাসকই একপর্যায়ে ২০২৪ সালে আমাদের তরুণ-তরতাজা প্রজন্মের ওপর সর্বাত্মক আক্রমণ চালায়।

জনপ্রিয় সংবাদ

আবু সাঈদ হত্যা মামলার দশম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ

হাজার হাজার দেশপ্রেমিকের হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন হাসিনা: চিফ প্রসিকিউটর

আপডেট সময় ০৮:০৮:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জুলাই গণ-আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন-পর্ব শুরু হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, হাজার হাজার দেশপ্রেমিক মানুষকে খুন করা হয়েছে, যার নির্দেশদাতা ছিলেন শেখ হাসিনা।গতকাল রোববার (১২ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অনুষ্ঠিত শুনানি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

এ সময় চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনের কথা তুলে ধরে বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম-খুনের অসংখ্য ঘটনা ঘটে। এমন একজন ঘাতক আছেন, যিনি বিরোধী মতের লোকদের হত্যায় কাজ করতেন। তিনি খুব কাছ থেকে মাথায় গুলি করতেন। ভুক্তভোগীর মাথার মগজ ও রক্ত ফিনকি দিয়ে ওই ঘাতকের শরীরে পড়ত। মগজ ও রক্তের গরম ঘাতকের অন্যরকম অনুভূতি হতো। এছাড়া বহু মানুষের মাথায় গুলি করে পেট কেটে সিমেন্টের বস্তা বেঁধে নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হতো। হাত-পা বেঁধে রেললাইনে ফেলে রাখা হতো। বলা হতো ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে। এভাবে হাজার হাজার দেশপ্রেমিক মানুষকে খুন করা হয়েছে, যার নির্দেশদাতা ছিলেন শেখ হাসিনা।

শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্রমান্বয়ে দানবে পরিণত হওয়ার কারণেই চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। প্রথমে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তারা আমাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়। পরে গুম-খুনের সংস্কৃতি চালু করে। এরপর নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে। দেশে দুর্নীতি সর্বগ্রাসী রূপ পায়। এসবের মাধ্যমেই তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) ক্রমান্বয়ে এক দানবীয় সরকারে পরিণত হয়েছিল। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়। শুনানির একপর্যায়ে বিচারকদেরও জবাবদিহি থাকা উচিত বলে অভিমত প্রকাশ করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

যুক্তিতর্ক শুনানিপর্বে জুলাই আন্দোলন দমনে হত্যাযজ্ঞ ছাড়াও পিলখানা হত্যাকাণ্ড, র‌্যাবের গুম-খুন, একদলীয় শাসন, বিচার বিভাগ দলীয়করণ, প্রহসনের নির্বাচন, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা, বিচারপতি খায়রুল হকের প্রতারণাসহ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের নানা অপকর্ম উঠে আসে তাজুল ইসলামের বক্তব্যে।

এদিকে যুক্তিতর্ক সরাসরি উপস্থাপন সম্প্রচারের সময় চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের ফেসবুক পেজে সাইবার হামলা হয়। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক সরাসরি সম্প্রচারের সময় চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের ফেসবুক পেজে সাইবার অ্যাটাক (হামলা) হয়। ফেসবুক পেজটি সাময়িকভাবে ডিজেবল (নিষ্ক্রিয়) করে দিয়েছিল হামলাকারীরা। পরে সেটা উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

তিনি বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে একে একে সাতজনকে খুন ও লাশ গুম করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। র‌্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এমএম রানা-তিনজনই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এভাবে গুমের সংস্কৃতি চালু হয়। সাতজনকে হত্যা ছিল র‌্যাবের প্রাতিষ্ঠানিক মানবতাবিরোধী অপরাধ।

তাজুল ইসলাম বলেছেন, জনগণকে নির্যাতন, হত্যা ও ভয়ভীতির রাজত্ব কায়েম করাই ছিল তাদের (আওয়ামী লীগ সরকারের) লক্ষ্য। এই দানবীয় শাসকই একপর্যায়ে ২০২৪ সালে আমাদের তরুণ-তরতাজা প্রজন্মের ওপর সর্বাত্মক আক্রমণ চালায়।