বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ডিসেম্বর মাসে। অন্যদিকে ফেব্রুয়ারিতে হওয়ার কথা রয়েছে জাতীয় নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের আগেই দলটি নতুন আমির নির্বাচন করতে যাচ্ছে। দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয় আমির নির্বাচন।
এবারও নির্দিষ্ট সময়ে সেই নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে।জামায়াত সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্যরা তিনজনের একটি সম্ভাব্য আমির প্যানেল নির্ধারণ করেন। ওই প্যানেল থেকে যে কেউ নির্বাচিত হতে পারেন, তবে রুকনরা চাইলে এর বাইরের কাউকেও ভোট দিতে পারেন। যদিও দলটির নির্বাচনের রীতি অনুযায়ী সাধারণত ওই প্যানেল থেকেই একজন নির্বাচিত হয়ে থাকেন।
প্যানেলের নামগুলো ভোট শুরুর আগপর্যন্ত গোপন রাখা হয়।ডা. শফিকুর রহমান ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর প্রথমবারের মতো আমির নির্বাচিত হন। ২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর শপথ গ্রহণের মাধ্যমে শুরু হয় তাঁর প্রথম মেয়াদ। পরে ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর দ্বিতীয় মেয়াদে পুনর্নির্বাচিত হন তিনি।
এবার নির্বাচিত হলে এটি হবে তাঁর টানা তৃতীয় মেয়াদ। দলীয় নেতারা জানান, ডা. শফিকুর রহমান মাঠ পর্যায়ে সক্রিয়তা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে গতি ও মানবিক সহমর্মিতার কারণে দলে এবং সমর্থকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর দলীয় কার্যক্রমে তাঁর ভূমিকা ইতিবাচকভাবে নজর কাড়ে। গত ১৯ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের মহাসমাবেশে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে অপারেশন হলে দীর্ঘদিন বাসায় বিশ্রাম শেষে তিনি আবারও নিয়মিত সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন।
জামায়াতের এক নেতা বলেন, বর্তমান আমির দেশকে নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। ভালো কাজ করছেন। দলের রুকনরা আবারও তাঁকে দলের আমির হিসেবে বেছে নিতে পারেন। যেহেতু জামায়াতে কেউ কতবার আমির হতে পারবেন তা নির্দিষ্ট নয়। তবে রুকনরা চাইলে এর বাইরেও কেউ আমির হতে পারেন।
জানা গেছে, জামায়াতের আমির নির্বাচনের প্রক্রিয়া মোটামুটি দীর্ঘ। সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা দলের রুকনদের গোপন ভোটে তিনি নির্বাচিত হয়ে থাকেন। তাঁদের ভোটগ্রহণ ও গণনা আগামী তিন মাসের মধ্যে শেষ হবে। ডিসেম্বরেই নতুন আমিরের নাম ঘোষণার পর তিনি শপথ নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
জামায়াতের আমির নির্বাচনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দলের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম। নির্বাচনী কমিটিতে আরো আছেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল। তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পর পর আমির নির্বাচন হয়। নির্বাচনী প্রক্রিয়া সাধারণত ভোটগ্রহণের তিন মাস আগে থেকেই শুরু হয়।’
মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল আরো জানান, ‘২০২৬, ২০২৭ ও ২০২৮ সালের জন্য নতুন আমির নির্বাচিত হবেন। নির্বাচনে কোনো নির্দিষ্ট প্রার্থী থাকেন না। মজলিশে শুরা মনোনীত তিন সদস্যের নাম ভোট শুরুর সময় জানানো হয়। তবে রুকনরা চাইলে এই তিনজনের বাইরেও কাউকে ভোট দিতে পারেন।’
জামায়াতের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ‘আগেও বৈরী পরিবেশে মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচন হয়েছে। এমনকি গত আওয়ামী লীগ সরকারের কঠিন সময়েও আমির নির্বাচন থেমে থাকেনি, তখন নির্বাচন হয়েছে অনলাইনে।’
জানা যায়, দলটি এখনো নির্ধারণ করেনি কোন জেলায় কখন ভোট হবে। তবে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন ও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা শেষ করা হবে।
দলের বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমান ১৯৯৮ সালে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। এরপর সিলেট মহানগর আমির, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, নির্বাহী পরিষদ সদস্য, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এবং পরে সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ডা. শফিকুর রহমানের আগে দলের আমির ছিলেন মকবুল আহমদ (২০১৮-২০২০)। তিনি ২০২১ সালের ১৩ এপ্রিল বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। তাঁর আগে আমির ছিলেন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, যিনি ২০০০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করেন।
উল্লেখ্য, জামায়াতের আমির দলের রুকনদের গোপন ভোটে নির্বাচিত হলেও সেক্রেটারি নির্বাচিত হন আমিরের পছন্দে। অর্থাৎ দলের আমির নিজের পছন্দমতো কাউকে সেক্রেটারি মনোনীত করে থাকেন।