শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সারাদেশব্যাপী সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) আজ রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটের দিকে সচিবালয়ে মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করে আনুষ্ঠানিক দাবি উপস্থাপন করে।
সাক্ষাৎ শেষে ডাকসু ভিপি আবু সাদিক কায়েম ও জিএস এস এম ফরহাদ সাংবাদিকদের সামনে এক সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে সামগ্রিক বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন।
নিরাপদ ও সফলভাবে শারদীয় দুর্গাপূজা সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ডাকসুর পক্ষ থেকে বেশকিছু দাবি জানানো হয়। প্রতিটি পূজামণ্ডপে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ও গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার এবং পূজামণ্ডপগুলোকে সম্পূর্ণ নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনীয় সকল নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি, জগন্নাথ হলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে কিছু জেলা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে; সেসব জেলায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। কয়েকটি স্থানে পূজামণ্ডপ ভাঙচুরের অভিযোগ উঠায় সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়েছে।
এছাড়া ডাকসুর পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে প্রতিমা ভাঙচুরসহ বিভিন্ন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা গেলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ সম্ভব হবে এবং পূজার পরিবেশ আরও নিরাপদ থাকবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ডাকসু প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন পূজা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে একাধিক মিটিং হয়েছে এবং আজকেও মিটিং আছে। তারা সর্বাত্মক আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।
জিএস এস এম ফরহাদ বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করে আমরা বেশকিছু বিষয়ে কনসার্ন জানিয়েছি। গতকাল ডাকসুর পক্ষ থেকে জগন্নাথ হলের পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করা হয় এবং সেখানে জগন্নাথ হলের প্রতিনিধি, হল সংসদ ও শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটস্থ শিব মন্দির ও ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রতিনিধি দল ডাকসুর কাছে এসে কিছু কনসার্ন তুলে ধরেন এবং দাওয়াত দেন। সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাইবোনদের পূজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য যেসকল বিষয় আমাদেরকে তারা জানিয়েছেন সেগুলো স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে জানানো হয়েছে।
এস এম ফরহাদ আরও উল্লেখ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম গুরুতর দুটি হত্যাকাণ্ড হলো তোফাজল হত্যাকাণ্ড ও সাম্য হত্যাকাণ্ড। তোফাজল হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন ইতিমধ্যেই পাওয়া গেছে। তবে বিচার কার্যক্রম এখনো পেন্ডিং রয়েছে। দ্রুততম সময়ে এ বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি সাম্য হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে ডাকসুর আগে দাবি জানালেও এখনো কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছেন যে খুব শিগগিরই সাম্য হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত তথ্য ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। একইসাথে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করা এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন তিনি।
ডাকসু ভিপি আবু সাদিক সাদিক কায়েম বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দেশ, ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এ সম্প্রীতি গড়ে উঠেছে। জুলাই বিপ্লবের পর বিশ্ব দরবারে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষকে দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে এই সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত অক্ষুণ্ন রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আবারও বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির স্থাপিত হবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
সাক্ষাতকালে আরও উপস্থিত ছিলেন ডাকসুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমা এবং কার্যনির্বাহী সদস্য সর্ব মিত্র চাকমা।