ঢাকা ০১:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা

দুর্নীতি, নাশকতা ও সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ১২ জন কাউন্সিলরের করা অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাজকিন আহমেদের পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পৌর-১ শাখার উপসচিব আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়রের পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। তিনি সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও পৌর বিএনপির সদস্যসচিব।

গতকাল একই সঙ্গে মন্ত্রণালয় থেকে আরও একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে নতুন মেয়রের কার্যভার গ্রহণ করা পর্যন্ত পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ কাজী ফিরোজ হাসানকে প্রশাসনিক, আর্থিক ক্ষমতাসহ মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পৌরসভার মেয়রের শূন্য পদে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবকে অনুরোধ করা হয়েছে।

মেয়র পদ শূন্য ঘোষণার প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা, পৌরসভার ঠিকাদারি কাজে অংশগ্রহণ, পরিষদ সদস্যদের অবমূল্যায়ন ও পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করা, পৌরসভার পানি শাখা পরিকল্পিতভাবে অকার্যকর করা এবং পৌরসভার স্বার্থিবরোধী বিভিন্ন কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভার কাউন্সিলর কর্তৃক অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইনে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়রের পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।

ওই প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, তাজকিন আহমেদ পৌর মেয়র পদের সব সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেন। অথচ তিনি নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। সাতক্ষীরা পৌরসভার ঠিকাদারি কাজে সরাসরি অংশগ্রহণ, পৌরসভার সদস্যদের অবমূল্যায়নসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।

এসব অভিযোগসহ ১০টি অভিযোগ উল্লেখ করে পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদের বিরুদ্ধে ১২ জন কাউন্সিলর ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অনাস্থা প্রস্তাব পাঠান।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিষ্ণুপদ পালকে নির্দেশ দেন। তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তিনি ২৫ সেপ্টেম্বর পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদকে ‘অনাস্থা প্রস্তাব’-এর পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হবে না মর্মে এ চিঠি পাওয়ার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।

তাজকিন আহমেদ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিষ্ণুপদ পাল চিঠির জবাব না দেওয়ায় তিনি কাউন্সিলর ফিরোজ হাসানকে (ভারপ্রাপ্ত মেয়র) অনাস্থা প্রস্তাব–সম্পর্কিত সভা ডাকার আহ্বান জানান। ১৮ অক্টোবর বেলা তিনটার দিকে সাতক্ষীরা পৌরসভা পরিষদের কক্ষে ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজী ফিরোজ হাসানের সভাপতিত্বে সভায় ১২ কাউন্সিলরের মধ্যে ১১ জন উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত ১১ জনই অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। তবে ওই সভায় পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন না।

সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দীন সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়রের পদ শূন্যের চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, প্যানেল মেয়র কাজী ফিরোজ হাসানকে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা দিয়ে মেয়র হিসেব দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, তাজকিন আহমেদ পরপর দুবার মেয়র নির্বাচিত হন। প্রথম মেয়াদে দুটি নাশকতা মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালত গ্রহণ করার পর ২০১৬ সালের ৪ মে স্থানীয় সরকার বিভাগের এক চিঠিতে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। দ্বিতীয় মেয়াদে ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৭০১ টাকা পানির বিল মওকুফ, হাটবাজার ইজারা বাবদ ৬৬ লাখ ৭০ হাজার ৯৭০ টাকা বকেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০২২ সালের ১৫ জুন তাঁকে আবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া নাশকতার মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হওয়ায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি তাঁকে আরেকবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। প্রতিবারই আদালতের নির্দেশে তাঁর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছিল।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ইকুয়েডরকে ৭ গোল দিল আর্জেন্টিনা

সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা

আপডেট সময় ০১:১০:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৩

দুর্নীতি, নাশকতা ও সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ১২ জন কাউন্সিলরের করা অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাজকিন আহমেদের পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পৌর-১ শাখার উপসচিব আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়রের পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। তিনি সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও পৌর বিএনপির সদস্যসচিব।

গতকাল একই সঙ্গে মন্ত্রণালয় থেকে আরও একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে নতুন মেয়রের কার্যভার গ্রহণ করা পর্যন্ত পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ কাজী ফিরোজ হাসানকে প্রশাসনিক, আর্থিক ক্ষমতাসহ মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পৌরসভার মেয়রের শূন্য পদে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবকে অনুরোধ করা হয়েছে।

মেয়র পদ শূন্য ঘোষণার প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা, পৌরসভার ঠিকাদারি কাজে অংশগ্রহণ, পরিষদ সদস্যদের অবমূল্যায়ন ও পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করা, পৌরসভার পানি শাখা পরিকল্পিতভাবে অকার্যকর করা এবং পৌরসভার স্বার্থিবরোধী বিভিন্ন কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভার কাউন্সিলর কর্তৃক অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইনে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়রের পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।

ওই প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, তাজকিন আহমেদ পৌর মেয়র পদের সব সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেন। অথচ তিনি নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। সাতক্ষীরা পৌরসভার ঠিকাদারি কাজে সরাসরি অংশগ্রহণ, পৌরসভার সদস্যদের অবমূল্যায়নসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।

এসব অভিযোগসহ ১০টি অভিযোগ উল্লেখ করে পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদের বিরুদ্ধে ১২ জন কাউন্সিলর ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অনাস্থা প্রস্তাব পাঠান।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিষ্ণুপদ পালকে নির্দেশ দেন। তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তিনি ২৫ সেপ্টেম্বর পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদকে ‘অনাস্থা প্রস্তাব’-এর পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হবে না মর্মে এ চিঠি পাওয়ার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।

তাজকিন আহমেদ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিষ্ণুপদ পাল চিঠির জবাব না দেওয়ায় তিনি কাউন্সিলর ফিরোজ হাসানকে (ভারপ্রাপ্ত মেয়র) অনাস্থা প্রস্তাব–সম্পর্কিত সভা ডাকার আহ্বান জানান। ১৮ অক্টোবর বেলা তিনটার দিকে সাতক্ষীরা পৌরসভা পরিষদের কক্ষে ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজী ফিরোজ হাসানের সভাপতিত্বে সভায় ১২ কাউন্সিলরের মধ্যে ১১ জন উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত ১১ জনই অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। তবে ওই সভায় পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন না।

সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দীন সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়রের পদ শূন্যের চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, প্যানেল মেয়র কাজী ফিরোজ হাসানকে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা দিয়ে মেয়র হিসেব দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, তাজকিন আহমেদ পরপর দুবার মেয়র নির্বাচিত হন। প্রথম মেয়াদে দুটি নাশকতা মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালত গ্রহণ করার পর ২০১৬ সালের ৪ মে স্থানীয় সরকার বিভাগের এক চিঠিতে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। দ্বিতীয় মেয়াদে ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৭০১ টাকা পানির বিল মওকুফ, হাটবাজার ইজারা বাবদ ৬৬ লাখ ৭০ হাজার ৯৭০ টাকা বকেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০২২ সালের ১৫ জুন তাঁকে আবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া নাশকতার মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হওয়ায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি তাঁকে আরেকবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। প্রতিবারই আদালতের নির্দেশে তাঁর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছিল।