উত্তর প্রদেশের বরেলিতে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ পোস্টার বিতর্ক ঘিরে ইসলামিয়া ময়দানের কাছে এক ধর্মীয় নেতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ সমবেত হন। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর পুলিশ উপস্থিত থাকলেও ভিড় ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং এক পর্যায়ে পরিস্থিতি ক্রমশই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ শুরু হয়।
এই বিরোধের সূত্রপাত গত ৪ সেপ্টেম্বর কানপুরে ঈদে মিলাদুন্নবীর শোভাযাত্রায়। শোভাযাত্রার একটি তাঁবুতে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা পোস্টার ঝোলানো হলে স্থানীয় হিন্দু গোষ্ঠীগুলো আপত্তি জানায়। তারা অভিযোগ করে, ইচ্ছে করেই মিশ্র এলাকায় পোস্টার টাঙানো হয়েছে। অন্যদিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের দাবি, তারা কেবল নবীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে এটি করেছেন।
বিষয়টি দ্রুত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং #ILoveMuhammad হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে আলোচনায় আসে। উভয় সম্প্রদায় একে অপরকে উসকানির অভিযোগ করায় উত্তেজনা ক্রমশই বৃদ্ধি পায়। পরে ৯ সেপ্টেম্বর কানপুর পুলিশ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। পুলিশের দাবি, মামলা পোস্টার নিয়ে নয়, বরং সড়কের ওপর তাঁবু বসানোকে কেন্দ্র করে করা হয়েছে।
বিতর্কে হায়দ্রাবাদের এমপি আসাদুদ্দিন ওয়াইসি প্রশ্ন তোলেন, ‘কেউ যদি বলে ‘আই লাভ ইউ’, তাতে সমস্যা কোথায়? এর মাধ্যমে আপনি বিশ্বের মুসলিম দেশগুলিকে কী বার্তা দিতে চান? কেউ যদি বলে ‘আই লাভ মহাদেব’, সেটিও তাদের বিশ্বাসের প্রকাশ। তাহলে মুসলিমদের ক্ষেত্রে কেন সমস্যা হবে?’
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে। মুম্বাই, গুজরাট, কর্ণাটক এবং উত্তর প্রদেশের আরও কয়েকটি জেলায় একই ইস্যুতে উত্তেজনা দেখা দেয়। গুজরাটে দাঙ্গার ঘটনায় দোকানপাট ও যানবাহন ভাঙচুর হয়, কর্ণাটকের দাভানগেরেতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে পাথর নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে।
পুলিশ সূত্র পিটিআইকে জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে কর্ণাটকের দাভানগেরে ‘আই লাভ মোহাম্মদ’ লেখা পোস্টার লাগানো হয়, যার ফলে দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে পাথর ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে। উত্তরপ্রদেশের উন্নাও, মহারাজগঞ্জ, লখনউ এবং কৌশাম্বিতেও অস্থিরতার খবর পাওয়া গেছে এবং বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে এই বিতর্ককে কেন্দ্র করে বারাণসীতে পাল্টা আন্দোলনের ডাক দেন হিন্দু ধর্মীয় নেতারা। তারা রাস্তায় নেমে ‘আই লাভ মহাদেব’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিল করেন। তাদের অভিযোগ, ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ আন্দোলন ছিল উসকানিমূলক এবং এর মাধ্যমে সমাজকে বিভক্ত করার চেষ্টা চলছে।
জগদ্গুরু শঙ্করাচার্য নরেন্দ্রানন্দের নেতৃত্বে বিক্ষোভে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ আন্দোলনের পিছনে থাকা ব্যক্তিদের ‘ভক্তির আড়ালে দেশ ধ্বংস করার’ চেষ্টা করার অভিযোগ করা হয়। তিনি এবং অন্যান্য নেতারা অভিযোগ করেন যে সরকারকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।