ইসরায়েলের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ইউরোপ থেকে মানবিক সহায়তা নিয়ে সমুদ্রপথে রওনা দিয়েছে একটি কাফেলা । গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নামের এই অভিযানকে নিরাপত্তা দিতে এবার হস্তক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইতালি।
গত বুধবার সকালে গাজাগামী এই নৌ কাফেলায় হামলা চালানো হলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন মানবাধিকার কর্মীরা। তবে তার পরও এই বহর গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। ফ্লোটিলার আয়োজকরা জানিয়েছেন, তাদের যাত্রা গাজা অভিমুখে অব্যাহত থাকবে।
এই নৌযাত্রার পেছনে রয়েছে গাজার মানুষের জন্য বহন করা খাদ্য আর চিকিৎসাসামগ্রী। কিন্তু ফ্লোটিলার সদস্যরা বলছেন, তাদের পথ রীতিমতো আগুনঝরা হয়ে উঠেছে। ড্রোনের হামলা, অজানা বিস্ফোরণ, নৌকার ওপর আছড়ে পড়া অজ্ঞাত বস্তু—সব মিলিয়ে ভয় আর আতঙ্কের অভিযানে পরিণত হয়েছে। গ্রিসের কাছে ভেসে থাকার সময় মাঝরাতে তারা হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান, ভিডিওতে ধরা পড়ে আগুন আর ধোঁয়া। তারপরও সকালের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে তারা আবারও যাত্রা শুরু করেন।
একাধিক দেশের মানবাধিকার কর্মী ও রাজনীতিবিদরা এরই মধ্যে যোগ দিয়েছেন এই বহরে। পোল্যান্ডের সংসদ সদস্য ফ্রানেক স্টারচেভস্কি জানান, ১০টি জাহাজের ওপর মোট ১৩ বার হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩টি জাহাজ; কিন্তু তবুও থেমে যায়নি কাফেলাটি। যেন বারবার আঘাতের পরও উঠে দাঁড়িয়ে পথ চলছে এটি। বিভিন্ন দেশ থেকে রওনা দেওয়া মানবাধিকার কর্মীদের এই উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে সবার।
এমন পরিস্থিতিতে ইতালি এবার নড়েচড়ে বসেছে। বুধবার সকালে হামলার খবরে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জাহাজে থাকা নিজ দেশের নাগরিকদের সহায়তায় তাদের সঙ্গে একটি রণতরী পাঠাতে। সে উদ্দেশ্যেই যুদ্ধজাহাজ ফ্রিগেট ফ্যাসান পাঠানো হয়েছে ফ্লোটিলার সঙ্গে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী গুইদো ক্রোসেত্তো বলেন, ড্রোন হামলার নেপথ্যের শক্তি এখনো অজানা। তবে ইতালীয় নৌবাহিনী এই অঞ্চলে নিজেদের অবস্থান জোরালো করে নজরদারি চালাবে। পাশাপাশি, ইসরায়েলের কাছে তারা স্পষ্ট দাবি জানিয়েছে—ফ্লোটিলার পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে বিস্ফোরণের পর ধোঁয়া উড়ছে, জাহাজে দৌড়ঝাঁপ করছে মানবাধিকার কর্মীরা। কিন্তু সব প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করেও তাদর মুখে ছিল দৃঢ়তা, আর কণ্ঠে ছিল প্রতিজ্ঞা, ‘আমরা থামব না।’ মানুষের জন্য মানুষের এই মানবিক সহায়তার যাত্রাটি কীভাবে শেষ হবে, এটি কি তার গন্তব্যে ঠিকভাবে পৌঁছাতে পারে কি না, সেটি এখনো অজানা। কিন্তু সমুদ্রের বুক চিরে যে মানবিক সহায়তার বহর এগিয়ে চলেছে, তা এবার যেন প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছে।