রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত তানযীমুল উম্মাহ আলিম মাদ্রাসায় মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হলো ২০২৫ সালের বর্ণাঢ্য বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী উৎসব। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুই অধিবেশনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশে কৃতিত্ব অর্জনকারী প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সম্মাননা, বর্তমান মেধাবীদের পুরস্কার এবং নতুনদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।
প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন তানযীমুল উম্মাহ ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ড. মীম আতিকুল্লাহ। প্রধান অতিথি ছিলেন মাসিক পৃথিবী পত্রিকার সম্পাদক ও গবেষক-শিক্ষাবিদ ড. মো. ছামিউল হক ফারুকী। দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শামসুল আলম।
বক্তৃতায় উপাচার্য শামসুল আলম বলেন, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের নামকরা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে—এটি দেশের জন্য গৌরবের বিষয়। তিনি উল্লেখ করেন, তানযীমুল উম্মাহর শিক্ষার্থীরা শুধু জাতীয় পর্যায়ে নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে।
তিনি আরো বলেন, “বর্তমান ডাকসুর ভিপি, জিএস এবং স্বাস্থ্য–পরিবেশ সম্পাদকসহ একাধিক নেতৃত্বশীল শিক্ষার্থী বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে উঠে এসেছে। এটি প্রমাণ করে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা জাতীয় নেতৃত্বেও আসীন হয়ে দেশের উন্নয়ন ও পরিবর্তনে অবদান রাখছে।”
ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ করে উপাচার্য বলেন, যদি তাঁর কর্মস্থলের পাশে তানযীমুল উম্মাহর কোনো শাখা থাকত তবে তিনি তাঁর সন্তানদের এখানে পড়াতেন। তিনি চান, মাদ্রাসাটির শাখা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ুক। এসময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকা ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ করছে। “ইনকিলাব আমাদের পেছনে লেগে আছে। তবে আমরা এক হাজার ভালোমানুষের কাতারে নিজেদের তৈরি করেছি,”—যোগ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের সমাপনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন তানযীমুল উম্মাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল। তিনি বলেন, ফাজিল ও কামিল শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাওয়া উদ্বেগজনক। এ প্রবণতা রোধে গবেষণা, যুগোপযোগী কারিকুলাম এবং কর্মসংস্থানভিত্তিক উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং ঢাকা-১৮ আসনের জামায়াত প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল এইচ এম আবদুল্লাহ আল মামুন, হিফজ শাখার প্রিন্সিপাল মাহমুদুল হাসান, আল আরক্বাম শাখার প্রিন্সিপাল হাফেজ সাইফুল্লাহ ফয়সল, আল আতফাল শাখার প্রিন্সিপাল মাসুদুল হাসান ও বোর্ড বিষয়ক কর্মকর্তা ইসমাইল মোল্লাসহ বিপুলসংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক।
দাখিলে সারাদেশে প্রথম হওয়া প্রাক্তন শিক্ষার্থী এডভোকেট জাকিরকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। তিনি বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করে আইনপেশায় যুক্ত হয়েছেন। এছাড়া মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়, মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত প্রায় ২০ জন প্রাক্তন শিক্ষার্থীকে সম্মাননা দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের শীর্ষ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু এবং আন্তর্জাতিক স্কলারশিপ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরাও সম্মানিত হন।
দিনব্যাপী উৎসবে শিক্ষার্থীদের ছিল প্রবল উচ্ছ্বাস। বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন ইভেন্টে বিজয়ীদের হাতে মেরিট অ্যাওয়ার্ড তুলে দেওয়া হয়। জাতীয় বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও অন্যান্য সহপাঠ কার্যক্রমে কৃতিত্ব অর্জনকারীরাও পুরস্কৃত হন।
অনুষ্ঠানে তানযীমুল উম্মাহ শিল্পীগোষ্ঠীর তিলাওয়াত, গান, কবিতা ও আবৃত্তি পরিবেশনা দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও অতিথিদের উপস্থিতিতে পুরো আয়োজন এক উৎসবমুখর পরিবেশে পরিণত হয়।