ঢাকা ১১:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

কাঠগড়ায় মতিউরকে স্ত্রীর ধমক, বললেন, তোমার জন্য এসব হয়েছে

ছাগলকাণ্ডে আলোচিত-সমালোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লায়লা কানিজের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এ সময় দুজনে কাঠগড়ায় ৪৫ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলেন।

একপর্যায়ে মেজাজ হারিয়ে মতিউরকে ধমক দিয়ে তার স্ত্রী লায়লা বলেন, ‘তুমি চুপ থাকো। তোমার জন্য এসব হয়েছে। এরপর চুপ হয়ে যান মতিউর।’

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) আসামিদের কারাগার থেকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুল ইসলামের আদালতে হাজির করে পুলিশ। দুপুর ২টা ৫ মিনিটে তাদের কাঠগড়ায় তোলা হয়। এরপর মতিউরের এক হাত থেকে হাতকড়া খুলে দেওয়া হয়। অন্য হাতে থাকে হাতকড়া।

এ ছাড়া মতিউরের মাথা থেকে হেলমেট, বুক থেকে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট খুলে ফেলা হয়। তবে তার স্ত্রী লায়লা কানিজের বুকে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরানো ছিল।

একসময় আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন মতিউর, কখনো কথা বলেন লায়লা কানিজ। তারা মামলা ও পারিবারিক বিষয়ে কথা বলেন। কীভাবে মামলা মোকাবিলা করবেন, সে বিষয়েও পরামর্শ দেন আইনজীবী। এ সময় কাঠগড়ায় মতিউর এগিয়ে কথা বলতে গেলে এক পর্যায়ে লায়লা কানিজ তাকে ধমক দিতে দেখা যায়।

লায়লা কানিজ বলেন, ‘তুমি বেশি কথা বলো। চুপ থাকো। আমি বলছি। তোমার জন্য এসব হয়েছে।’

স্ত্রীর ধমকের পর মতিউর দমে যান। পরে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন লায়লা। এদিকে কাঠগড়ায় কথা বলার এক পর্যায়ে পাশ থেকে একজন নারী (লায়লার বোন বলে পরিচয় দেন) এসে লায়লা কানিজের কাছে এসে বলেন, ‘এখানে সাংবাদিক আছে। সাবধানে কথা বইল।’

তখন সবাই কথা থামিয়ে সাংবাদিকদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। তবে এতেও আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করেননি তারা। পরে সিএমএম আদালতের হাজতখানার ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ কামাল আসামি লায়লা কানিজকে কিছু বলতে থাকেন।

আজ দুপুর ২টা ২৯ মিনিটে আসামিদের স্বজন সেই লায়লার বোন একটি পানির বোতল দেন। আইনজীবী সেটা নিয়ে তাদের খেতে বলেন। তবে মতিউর সেটি নেননি। পরে তার স্ত্রীকে খেতে বলেন। কিন্তু লায়লা কানিজ অস্বীকৃতি জানান। এরপর মতিউর পানি পান করেন।

এদিকে ২টা ৩৫ মিনিটের দিকে এজলাসে আসেন বিচারক। এরপর আসামিরা কাঠগড়ার সামনে দাঁড়িয়ে শুনানি শুনতে থাকেন। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপসহকারী পরিচালক সাবিকুন নাহার তাদের তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।

এ সময় শুনানিতে দুদকের পক্ষে রিমান্ড চেয়ে মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই দম্পতি ভুয়া কোম্পানি ও কাগজপত্র দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেন। ওই কোম্পানি আর আলোর মুখ দেখেনি। এদিকে তারা টাকা আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিং করেন। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।’

আসামিদের পক্ষে অ্যাডভোকেট ওয়াহিদুজ্জামান (লিটন ঢালী) রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, ‘দুদক প্রসিকিউটর যে বক্তব্য দিল, মামলার এজাহারের সঙ্গে তার কোনো সামঞ্জস্য নেই। মতিউর রহমানের কন্যা ফারজানা রহমান ঈপ্সিতা দীর্ঘদিন কানাডায় আছেন। তিনি তার সম্পদ বিবরণী আইনজীবীর মাধ্যমে দুদকে জমা দিয়েছেন। ঈপ্সিতা ডেল্টা লাইফে চাকরি করতেন না। তিনি এজেন্সির মালিক ছিলেন। সে অনুযায়ী বেতনও পেতেন। ট্যাক্স ফাইল দেখলে পরিষ্কার হয়ে যাবে। ঈপ্সিতা সম্পদ বিবরণীতেও যদি বলে বাবার সম্পত্তি আছে, এরূপ একটা শব্দ বললে আপনি রিমান্ড দিতে পারেন।’

আইনজীবী আরও বলেন, ‘মতিউর রহমান অসুস্থ। তার প্রেশার ১৫০ ও ১০০। তার বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। যেকোনো সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাদের রিমান্ড বাতিল করে জামিনের প্রার্থনা করছি। প্রয়োজনে তাদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রার্থনা করছি।’

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত থেকে তাদের এক দিনের রিমান্ডের আদেশ আসে।

শুনানি শেষে কাঠগড়ায় মতিউরকে স্ত্রীর ধমকানোর বিষয়ে আসামিদের পক্ষের আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ধমকানো বিষয়টা এমন না। মতিউর রহমান আদালতে কথা বলতে চেয়েছিল। তখন তার স্ত্রী নিষেধ করেন। কারণ আদালতে বলা না বলা সমান। এখানে বলে লাভ নেই।’

কী কথা হলো, জানতে চাইলে এ আইনজীবী বলেন, তারা কীভাবে মামলা মোকাবিলা করা যাবে, সেসব কথা হয়েছে। পারিবারিক কিছু কথাও হয়েছে।’

এদিকে কাঠগড়ায় লায়লা কানিজের সঙ্গে কী কথা হলো, জানতে চাইলে হাজতখানার ইনচার্জ উপপরিদর্শক শেখ কামাল বলেন, ‘কাঠগড়ায় এত কথা না বলার জন্য বলি।’

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘লায়লা কানিজ আজ হাজতখানায় দুপুরে খাবারের কথা বলেন। তখন আমি হাজতখানার নিয়ম অনুসারে বাইরে খাবার দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দিই। সরকারিভাবে একটি কলা, রুটি ও পানি দেওয়া যাবে বলি। পরে তিনি না করেন।’

এদিকে রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, মতিউর রহমান এবং লায়লা কানিজের দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে অসৎ উদ্দেশ্যে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে ২ কোটি ৪৫ লাখ ৩৪ হাজার ৬১১ টাকা মূল্যমানের সম্পত্তি গোপন করার এবং ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে ৫৩ কোটি ৪১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৯৩ টাকা মূল্যমানের সম্পত্তি অর্জন করে ভোগ দখলে রাখার অপরাধে মামলা করা হয়। মামলাটি এখন তদন্তাধীন।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব অস্ত্রসহ গ্রেফতার,দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার

কাঠগড়ায় মতিউরকে স্ত্রীর ধমক, বললেন, তোমার জন্য এসব হয়েছে

আপডেট সময় ০৮:৫৫:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ছাগলকাণ্ডে আলোচিত-সমালোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লায়লা কানিজের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এ সময় দুজনে কাঠগড়ায় ৪৫ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলেন।

একপর্যায়ে মেজাজ হারিয়ে মতিউরকে ধমক দিয়ে তার স্ত্রী লায়লা বলেন, ‘তুমি চুপ থাকো। তোমার জন্য এসব হয়েছে। এরপর চুপ হয়ে যান মতিউর।’

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) আসামিদের কারাগার থেকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুল ইসলামের আদালতে হাজির করে পুলিশ। দুপুর ২টা ৫ মিনিটে তাদের কাঠগড়ায় তোলা হয়। এরপর মতিউরের এক হাত থেকে হাতকড়া খুলে দেওয়া হয়। অন্য হাতে থাকে হাতকড়া।

এ ছাড়া মতিউরের মাথা থেকে হেলমেট, বুক থেকে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট খুলে ফেলা হয়। তবে তার স্ত্রী লায়লা কানিজের বুকে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরানো ছিল।

একসময় আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন মতিউর, কখনো কথা বলেন লায়লা কানিজ। তারা মামলা ও পারিবারিক বিষয়ে কথা বলেন। কীভাবে মামলা মোকাবিলা করবেন, সে বিষয়েও পরামর্শ দেন আইনজীবী। এ সময় কাঠগড়ায় মতিউর এগিয়ে কথা বলতে গেলে এক পর্যায়ে লায়লা কানিজ তাকে ধমক দিতে দেখা যায়।

লায়লা কানিজ বলেন, ‘তুমি বেশি কথা বলো। চুপ থাকো। আমি বলছি। তোমার জন্য এসব হয়েছে।’

স্ত্রীর ধমকের পর মতিউর দমে যান। পরে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন লায়লা। এদিকে কাঠগড়ায় কথা বলার এক পর্যায়ে পাশ থেকে একজন নারী (লায়লার বোন বলে পরিচয় দেন) এসে লায়লা কানিজের কাছে এসে বলেন, ‘এখানে সাংবাদিক আছে। সাবধানে কথা বইল।’

তখন সবাই কথা থামিয়ে সাংবাদিকদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। তবে এতেও আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করেননি তারা। পরে সিএমএম আদালতের হাজতখানার ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ কামাল আসামি লায়লা কানিজকে কিছু বলতে থাকেন।

আজ দুপুর ২টা ২৯ মিনিটে আসামিদের স্বজন সেই লায়লার বোন একটি পানির বোতল দেন। আইনজীবী সেটা নিয়ে তাদের খেতে বলেন। তবে মতিউর সেটি নেননি। পরে তার স্ত্রীকে খেতে বলেন। কিন্তু লায়লা কানিজ অস্বীকৃতি জানান। এরপর মতিউর পানি পান করেন।

এদিকে ২টা ৩৫ মিনিটের দিকে এজলাসে আসেন বিচারক। এরপর আসামিরা কাঠগড়ার সামনে দাঁড়িয়ে শুনানি শুনতে থাকেন। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপসহকারী পরিচালক সাবিকুন নাহার তাদের তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।

এ সময় শুনানিতে দুদকের পক্ষে রিমান্ড চেয়ে মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই দম্পতি ভুয়া কোম্পানি ও কাগজপত্র দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেন। ওই কোম্পানি আর আলোর মুখ দেখেনি। এদিকে তারা টাকা আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিং করেন। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।’

আসামিদের পক্ষে অ্যাডভোকেট ওয়াহিদুজ্জামান (লিটন ঢালী) রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, ‘দুদক প্রসিকিউটর যে বক্তব্য দিল, মামলার এজাহারের সঙ্গে তার কোনো সামঞ্জস্য নেই। মতিউর রহমানের কন্যা ফারজানা রহমান ঈপ্সিতা দীর্ঘদিন কানাডায় আছেন। তিনি তার সম্পদ বিবরণী আইনজীবীর মাধ্যমে দুদকে জমা দিয়েছেন। ঈপ্সিতা ডেল্টা লাইফে চাকরি করতেন না। তিনি এজেন্সির মালিক ছিলেন। সে অনুযায়ী বেতনও পেতেন। ট্যাক্স ফাইল দেখলে পরিষ্কার হয়ে যাবে। ঈপ্সিতা সম্পদ বিবরণীতেও যদি বলে বাবার সম্পত্তি আছে, এরূপ একটা শব্দ বললে আপনি রিমান্ড দিতে পারেন।’

আইনজীবী আরও বলেন, ‘মতিউর রহমান অসুস্থ। তার প্রেশার ১৫০ ও ১০০। তার বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। যেকোনো সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাদের রিমান্ড বাতিল করে জামিনের প্রার্থনা করছি। প্রয়োজনে তাদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রার্থনা করছি।’

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত থেকে তাদের এক দিনের রিমান্ডের আদেশ আসে।

শুনানি শেষে কাঠগড়ায় মতিউরকে স্ত্রীর ধমকানোর বিষয়ে আসামিদের পক্ষের আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ধমকানো বিষয়টা এমন না। মতিউর রহমান আদালতে কথা বলতে চেয়েছিল। তখন তার স্ত্রী নিষেধ করেন। কারণ আদালতে বলা না বলা সমান। এখানে বলে লাভ নেই।’

কী কথা হলো, জানতে চাইলে এ আইনজীবী বলেন, তারা কীভাবে মামলা মোকাবিলা করা যাবে, সেসব কথা হয়েছে। পারিবারিক কিছু কথাও হয়েছে।’

এদিকে কাঠগড়ায় লায়লা কানিজের সঙ্গে কী কথা হলো, জানতে চাইলে হাজতখানার ইনচার্জ উপপরিদর্শক শেখ কামাল বলেন, ‘কাঠগড়ায় এত কথা না বলার জন্য বলি।’

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘লায়লা কানিজ আজ হাজতখানায় দুপুরে খাবারের কথা বলেন। তখন আমি হাজতখানার নিয়ম অনুসারে বাইরে খাবার দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দিই। সরকারিভাবে একটি কলা, রুটি ও পানি দেওয়া যাবে বলি। পরে তিনি না করেন।’

এদিকে রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, মতিউর রহমান এবং লায়লা কানিজের দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে অসৎ উদ্দেশ্যে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে ২ কোটি ৪৫ লাখ ৩৪ হাজার ৬১১ টাকা মূল্যমানের সম্পত্তি গোপন করার এবং ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে ৫৩ কোটি ৪১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৯৩ টাকা মূল্যমানের সম্পত্তি অর্জন করে ভোগ দখলে রাখার অপরাধে মামলা করা হয়। মামলাটি এখন তদন্তাধীন।