আসন্ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল তাদের ৯ দফা নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছে। ‘স্বচ্ছতা ও দক্ষতায়, ন্যায্যতার নিশ্চয়তায়’ স্লোগানকে সামনে রেখে রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন ভিপি পদপ্রার্থী আরিফ উল্লাহ। এ সময় সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মো. মাজহারুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদপ্রার্থী ফেরদৌস আল হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদপ্রার্থী আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা সহ অন্য প্রার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।
এই ইশতেহারে তারা জানিয়েছেন, জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট ধারণ করে তারা একটি ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার লক্ষ্যে কাজ করবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে ক্যাম্পাসে সংঘটিত সহিংসতায় জড়িত শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে, দীর্ঘদিনের সমস্যাগ্রস্ত সেশনজট নিরসনে তারা অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার যথাযথভাবে বাস্তবায়ন এবং মানোন্নয়ন পরীক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়েছে। এছাড়া দলীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধের দাবিতে সোচ্চার থাকবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য কোর্স শেষে শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণপ্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ একটি পূর্ণাঙ্গ ইকোলজিক্যাল মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ক্যাম্পাসের জীববৈচিত্র রক্ষায় অভয়ারণ্য ঘোষণা ও সংরক্ষণ, বৃক্ষরোপণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং রিসাইক্লিং ব্যবস্থা জোরদার করার বিষয়গুলোও ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের কল্যাণে র্যাগিং, গেস্টরুম কালচার ও সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। এছাড়া হলের ডাইনিংয়ে অন্তত ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে মানসম্মত খাবার সরবরাহ এবং প্রতিটি তলায় বিশুদ্ধ পানির ফিল্টার স্থাপন করা হবে।
খাবারের মান ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়েও তারা গুরুত্বারোপ করেছে। ক্যাফেটেরিয়াতে তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা ও বিকেলের নাস্তা চালুর পাশাপাশি ডিজিটাল কুপন সিস্টেম চালু করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল সেবা নিশ্চিত করতে লড়াই চলবে এবং ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলার সুযোগ বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক বিভাগ ও হলে পর্যাপ্ত খেলার সামগ্রী সরবরাহ এবং নিয়মিত আন্তঃবিভাগ ও আন্তঃহল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হবে।
নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ‘যৌন নিপীড়ন অভিযোগ সেল’ শক্তিশালী করা হবে। সাইবার বুলিং ও রেসিজমসহ নারীদের বিরুদ্ধে সব প্রকার বিদ্বেষমূলক আচরণের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। এর পাশাপাশি ‘মা’ শিক্ষার্থীদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার ও ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার চালু করা হবে এবং প্রতিটি একাডেমিক ভবনে নারী কমনরুম ও নামাজের আলাদা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
শিক্ষার্থীদের সময় সাশ্রয় এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনার জন্য ক্যাম্পাসের সব দাপ্তরিক কাজকে অটোমেশনের আওতায় আনা হবে। স্মার্ট আইডি কার্ড চালু করার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ পরিবহন সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ফুটপাত নির্মাণ এবং পরিবহনের জন্য ‘লাইভ ট্র্যাকিং অ্যাপ’ চালু করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্যও বিশেষ অবকাঠামো গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা হয়েছে। র্যাম্প, লিফট, ব্রেইল বই, অডিও বুক এবং ই-লার্নিং টুলসের সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে তাদের জন্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে দৃষ্টিযোদ্ধা শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রুতিলেখকসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নিশ্চিত করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনের শেষে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, “আমাদের ইশতেহার শিক্ষার্থীদের বাস্তব চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে গঠিত। আমরা আকাশকুসুম প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করি না। যা করতে পারবো না, তা প্রতিশ্রুতিও দিতে চাই না। এই ইশতেহার বাস্তবায়নে আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।”