ঢাকা ১১:১১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ৬ দিন পর জ্ঞান ফিরেছে চবি শিক্ষার্থী সায়েমের , মামুনের খুলি এখনও ফ্রিজে Logo আজ পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ, দেখা যেতে পারে বাংলাদেশ থেকেও Logo টাঙ্গাইলে দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ডাক, ১৪৪ ধারা জারি Logo প্যানেলের বাইরের নেতাকর্মীরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে কঠোর ব্যবস্থার হুশিয়ারী ছাত্রদলের Logo ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের সেক্রেটারিকে কুপিয়ে হত্যা Logo বিসিবি সভাপতি বুলবুলকে পদ ছাড়তে বললেন তামিম Logo রবিবারে রাজধানীর যেসব এলাকায় মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ থাকে Logo ডাকসু নির্বাচনের প্রচারণা শেষ দিন আজ Logo ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে যে বার্তা দিলো আবহাওয়া অফিস Logo মৌলভীবাজারে নিজ ঘরে কলেজ ছাত্রের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

ডাকসু নিয়ে দুই জরিপ: নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রার্থীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন নিয়ে দুই দিনে দুটি জরিপ প্রকাশ করেছে দুটি সংগঠন। দুই জরিপেই ছাত্রশিবির প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছে বলে উঠে এসেছে।

আর জরিপ দুটির ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অন্য প্যানেলগুলো। তারা বলছে, এসব জরিপ নিরপেক্ষ নয়। ছাত্রশিবিরের পক্ষের লোকেরা এসব জরিপ প্রকাশ করছে। জরিপকারী একটি সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শিবিরের প্যানেল থেকে ডাকসু নির্বাচনে সদস্য পদে অংশ নিচ্ছেন।

ন্যারেটিভ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, তারা ৫২৬ শিক্ষার্থীর ওপর জরিপটি করেছে। গত ৩০ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জরিপে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

জরিপে প্রশ্ন ছিল ডাকসু নির্বাচনের শুধু তিন শীর্ষ পদ—সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) নিয়ে। জরিপে ১৪টি হলের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে তথ্য নেওয়া হয়। প্রতিটি হল থেকে তথ্য নেওয়া হয় গড়ে ৩৮ জনের কাছ থেকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সংখ্যা ১৯। ছাত্রদের ১৪টি আর ছাত্রীদের ৫টি। জরিপে ছেলেদের ১০টি ও মেয়েদের ৪টি তথ্য থেকে নমুনা নেওয়া হয়েছে। অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়া হয়নি। ভোটারদের বেশির ভাগ অনাবাসিক।

সংবাদ সম্মেলনে জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন ন্যারেটিভের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ রুহেল বলেন, ডাকসুতে ভোট দিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রায় ৯৫ শতাংশ। বাকি ৫ শতাংশ আগ্রহী নন।ভিপি পদে কাকে ভোট দেবেন, তা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি প্রায় ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। বাকি ৭৫ শতাংশ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

যাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ভিপি পদে প্রায় ৪২ শতাংশ শিবির সমর্থিত প্যানেল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের আবু সাদিক কায়েমকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন বলে ন্যারেটিভের দাবি। সংগঠনটি আরও জানিয়েছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেনকে ভোট দেবেন সাড়ে ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খানকে ১৪ এবং স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের প্রার্থী উমামা ফাতেমাকে প্রায় ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন। ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদেরকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন। অন্য প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন ১১ শতাংশ শিক্ষার্থী। উল্লেখ্য, এই প্রতিবেদনে কিছু ক্ষেত্রে শতাংশকে পূর্ণ সংখ্যায় দেখানো হয়েছে।

জরিপে জিএস পদে কাকে ভোট দেবেন, তা ঠিক করছেন ৬৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে শিবিরের এস এম ফরহাদকে সাড়ে ৩২, ছাত্রদলের শেখ তানভীর বারি হামিমকে ১৬, স্বতন্ত্র প্রার্থী আরাফাত চৌধুরীকে ১৬, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের আবু বাকের মজুমদারকে প্রায় ১৪ ও সাত বাম ছাত্রসংগঠনের যৌথ প্যানেল প্রতিরোধ পর্ষদের মেঘমল্লার বসুর পক্ষে ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন। অন্য প্রার্থীরা পাবেন সাড়ে ১২ শতাংশ ভোট।

আর এজিএস পদে ভোট কাকে ভোট দেবেন, তা ঠিক করেছেন ৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। জরিপে দাবি করা হয়েছে, এজিএস পদেও বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন শিবিরের মুহা. মহিউদ্দীন খান। তিনি পাবেন প্রায় ৫৩ শতাংশ ভোট। ছাত্রদলের তানভীর আল হাদী মায়েদ প্রায় ১৬, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের আশরেফা খাতুন ৯, বামদের প্রতিরোধ পর্ষদের জাবির আহমেদ জুবেল ৪, সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদের ফাতেহা শারমীন (এ্যানি) ৪ এবং অন্য প্রার্থীরা ১৪ শতাংশ ভোট পাবেন।

জরিপে যে চারটি হল বাদ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো কবি সুফিয়া কামাল হল, মাস্টারদা সূর্য সেন হল, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হল। জরিপকারীরা বলছেন, এসব হলে তাঁদের প্রতিনিধি জোগাড় করতে না পারায় তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

জরিপের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ন্যারেটিভের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ রুহেল বলেন, তাঁরা সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ থেকে জরিপ করার চেষ্টা করেছেন। তবে সব জরিপে কিছু না কিছু ব্যত্যয় থাকে।

 

এর আগে শুক্রবার সোচ্চার নামের একটি সংগঠন একটি জরিপ প্রকাশ করে। অনলাইনে গুগল ফরমের মাধ্যমে গত ১ থেকে ২০ আগস্ট ৯৯১ জনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপটিতে শুধু ভিপি পদে কোন সংগঠনের প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তা তুলে ধরা হয়।

জরিপে বলা হয়, শিবিরের প্রার্থীর প্রতি সমর্থন রয়েছে ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থীর। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতি সমর্থন রয়েছে ২২ শতাংশের। ছাত্রদলের প্রার্থীর প্রতি সমর্থন রয়েছে ৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর। ৩৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বলেছেন, তাঁদের কোনো মতামত নেই। বাকি ৫ শতাংশের বিষয়ে সোচ্চারের করা জরিপের সারসংক্ষেপে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

জরিপ দুটির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, শিবিরের নিজেদের লোকজন এসব জরিপ করে তাতে নিজেদের এগিয়ে রেখেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসব বিষয়ে বিভ্রান্ত হবেন না। তাঁরা ব্যালটের মাধ্যমে এর প্রমাণ দেবেন।

এখন প্রশ্ন জরিপকারীরা কারা

জরিপ পরিচালনাকারী সংগঠন ন্যারেটিভের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের সাবেক কয়েকজন নেতা-কর্মীর সংশ্লিষ্টতা আছে, ক্যাম্পাসে এমন আলোচনা রয়েছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ‘ন্যারেটিভ’ নামের সংগঠনটির ব্যানারে বেশ কিছু আলোচনা অনুষ্ঠান হয়। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রথম আলোচনা অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও তৎপরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: প্রাপ্তি, প্রত্যাশা, আগামীর বাংলাদেশ ও অন্যান্য’। সেখানে অন্যতম আলোচক ছিলেন ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আলী আহসান জুনায়েদ।

২০২৪ সালের ১৬ অক্টোবর ন্যারেটিভের উদ্যোগে আরেকটি আলোচনা অনুষ্ঠান হয়, যার শিরোনাম ছিল ‘জুলাই গণবিপ্লব পরবর্তী ছাত্ররাজনীতি: প্রসঙ্গ ছাত্রশিবির’। এই আলোচনায় আলোচকদের মধ্যে ছিলেন ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বর্তমান সভাপতি এস এম ফরহাদ এবং সাবেক কর্মী মোহাম্মদ ইশরাক।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে শিবিরের প্যানেলের এজিএস প্রার্থী মহিউদ্দীন খান বলেছেন, জরিপ দুটি শিবিরের দ্বারা প্রভাবিত বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। জরিপে শিবিরের প্রার্থীরা অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছেন বলে উঠে এসেছে। যদিও তাঁর মত, এত বেশি পার্থক্য হওয়ার কথা নয়।

জরিপ পরিচালনাকারী সংগঠন সোচ্চারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আনাস বিন মুনির। তিনি ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্যানেল থেকে এবারের ডাকসু নির্বাচনে সদস্য পদে প্রার্থী হয়েছেন।

আনাস বিন মুনির বলেন, জরিপটি করেছে সোচ্চারের বাংলাদেশ শাখা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি। জরিপের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নেই।

অন্য প্রার্থীরা যা বলছেন

যে প্রক্রিয়ায় জরিপ করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে উল্লেখ করে বামপন্থী সাত ছাত্রসংগঠন সমর্থিত প্রতিরোধ পর্ষদের ভিপি প্রার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ (ইমি) বলেছেন, অনলাইনে গিয়ে তো শিবির ছাড়া কিছু দেখা যায় না। তাদের এত এত বট আইডি (ভুয়া ফেসবুক আইডি)। কিন্তু বাস্তব চিত্র তো ভিন্ন।

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের প্যানেলের জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদারও জরিপের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘দুটি জরিপ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যথেষ্ট প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এই জরিপ দুটোর ওপর আস্থা রাখছে না বলেই আমরা শুনছি। এর নিরপেক্ষতা নিয়ে তো প্রশ্ন রয়েছেই।’

ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার। প্রচারের শেষ দিন আজ রোববার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেছেন, একটি জরিপে শিক্ষার্থীদের কোনো অংশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, কোনো অংশকে হয়নি। এর যুক্তি কী, সেটা স্পষ্ট নয়। দৈবচয়নের ভিত্তিতে সবার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হলে তার একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হতো। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে ভোটারদের মনোজগৎকে প্রভাবিত করার জন্য এ ধরনের জরিপ করা হয়ে থাকে। এর উদ্দেশ্য রাজনৈতিক।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

৬ দিন পর জ্ঞান ফিরেছে চবি শিক্ষার্থী সায়েমের , মামুনের খুলি এখনও ফ্রিজে

ডাকসু নিয়ে দুই জরিপ: নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রার্থীরা

আপডেট সময় ০৬:৩৪:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন নিয়ে দুই দিনে দুটি জরিপ প্রকাশ করেছে দুটি সংগঠন। দুই জরিপেই ছাত্রশিবির প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছে বলে উঠে এসেছে।

আর জরিপ দুটির ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অন্য প্যানেলগুলো। তারা বলছে, এসব জরিপ নিরপেক্ষ নয়। ছাত্রশিবিরের পক্ষের লোকেরা এসব জরিপ প্রকাশ করছে। জরিপকারী একটি সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শিবিরের প্যানেল থেকে ডাকসু নির্বাচনে সদস্য পদে অংশ নিচ্ছেন।

ন্যারেটিভ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, তারা ৫২৬ শিক্ষার্থীর ওপর জরিপটি করেছে। গত ৩০ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জরিপে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

জরিপে প্রশ্ন ছিল ডাকসু নির্বাচনের শুধু তিন শীর্ষ পদ—সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) নিয়ে। জরিপে ১৪টি হলের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে তথ্য নেওয়া হয়। প্রতিটি হল থেকে তথ্য নেওয়া হয় গড়ে ৩৮ জনের কাছ থেকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সংখ্যা ১৯। ছাত্রদের ১৪টি আর ছাত্রীদের ৫টি। জরিপে ছেলেদের ১০টি ও মেয়েদের ৪টি তথ্য থেকে নমুনা নেওয়া হয়েছে। অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়া হয়নি। ভোটারদের বেশির ভাগ অনাবাসিক।

সংবাদ সম্মেলনে জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন ন্যারেটিভের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ রুহেল বলেন, ডাকসুতে ভোট দিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রায় ৯৫ শতাংশ। বাকি ৫ শতাংশ আগ্রহী নন।ভিপি পদে কাকে ভোট দেবেন, তা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি প্রায় ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। বাকি ৭৫ শতাংশ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

যাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ভিপি পদে প্রায় ৪২ শতাংশ শিবির সমর্থিত প্যানেল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের আবু সাদিক কায়েমকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন বলে ন্যারেটিভের দাবি। সংগঠনটি আরও জানিয়েছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেনকে ভোট দেবেন সাড়ে ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খানকে ১৪ এবং স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের প্রার্থী উমামা ফাতেমাকে প্রায় ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন। ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদেরকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন। অন্য প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন ১১ শতাংশ শিক্ষার্থী। উল্লেখ্য, এই প্রতিবেদনে কিছু ক্ষেত্রে শতাংশকে পূর্ণ সংখ্যায় দেখানো হয়েছে।

জরিপে জিএস পদে কাকে ভোট দেবেন, তা ঠিক করছেন ৬৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে শিবিরের এস এম ফরহাদকে সাড়ে ৩২, ছাত্রদলের শেখ তানভীর বারি হামিমকে ১৬, স্বতন্ত্র প্রার্থী আরাফাত চৌধুরীকে ১৬, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের আবু বাকের মজুমদারকে প্রায় ১৪ ও সাত বাম ছাত্রসংগঠনের যৌথ প্যানেল প্রতিরোধ পর্ষদের মেঘমল্লার বসুর পক্ষে ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন। অন্য প্রার্থীরা পাবেন সাড়ে ১২ শতাংশ ভোট।

আর এজিএস পদে ভোট কাকে ভোট দেবেন, তা ঠিক করেছেন ৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। জরিপে দাবি করা হয়েছে, এজিএস পদেও বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন শিবিরের মুহা. মহিউদ্দীন খান। তিনি পাবেন প্রায় ৫৩ শতাংশ ভোট। ছাত্রদলের তানভীর আল হাদী মায়েদ প্রায় ১৬, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের আশরেফা খাতুন ৯, বামদের প্রতিরোধ পর্ষদের জাবির আহমেদ জুবেল ৪, সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদের ফাতেহা শারমীন (এ্যানি) ৪ এবং অন্য প্রার্থীরা ১৪ শতাংশ ভোট পাবেন।

জরিপে যে চারটি হল বাদ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো কবি সুফিয়া কামাল হল, মাস্টারদা সূর্য সেন হল, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হল। জরিপকারীরা বলছেন, এসব হলে তাঁদের প্রতিনিধি জোগাড় করতে না পারায় তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

জরিপের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ন্যারেটিভের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ রুহেল বলেন, তাঁরা সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ থেকে জরিপ করার চেষ্টা করেছেন। তবে সব জরিপে কিছু না কিছু ব্যত্যয় থাকে।

 

এর আগে শুক্রবার সোচ্চার নামের একটি সংগঠন একটি জরিপ প্রকাশ করে। অনলাইনে গুগল ফরমের মাধ্যমে গত ১ থেকে ২০ আগস্ট ৯৯১ জনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপটিতে শুধু ভিপি পদে কোন সংগঠনের প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তা তুলে ধরা হয়।

জরিপে বলা হয়, শিবিরের প্রার্থীর প্রতি সমর্থন রয়েছে ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থীর। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতি সমর্থন রয়েছে ২২ শতাংশের। ছাত্রদলের প্রার্থীর প্রতি সমর্থন রয়েছে ৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর। ৩৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বলেছেন, তাঁদের কোনো মতামত নেই। বাকি ৫ শতাংশের বিষয়ে সোচ্চারের করা জরিপের সারসংক্ষেপে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

জরিপ দুটির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, শিবিরের নিজেদের লোকজন এসব জরিপ করে তাতে নিজেদের এগিয়ে রেখেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসব বিষয়ে বিভ্রান্ত হবেন না। তাঁরা ব্যালটের মাধ্যমে এর প্রমাণ দেবেন।

এখন প্রশ্ন জরিপকারীরা কারা

জরিপ পরিচালনাকারী সংগঠন ন্যারেটিভের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের সাবেক কয়েকজন নেতা-কর্মীর সংশ্লিষ্টতা আছে, ক্যাম্পাসে এমন আলোচনা রয়েছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ‘ন্যারেটিভ’ নামের সংগঠনটির ব্যানারে বেশ কিছু আলোচনা অনুষ্ঠান হয়। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রথম আলোচনা অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও তৎপরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: প্রাপ্তি, প্রত্যাশা, আগামীর বাংলাদেশ ও অন্যান্য’। সেখানে অন্যতম আলোচক ছিলেন ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আলী আহসান জুনায়েদ।

২০২৪ সালের ১৬ অক্টোবর ন্যারেটিভের উদ্যোগে আরেকটি আলোচনা অনুষ্ঠান হয়, যার শিরোনাম ছিল ‘জুলাই গণবিপ্লব পরবর্তী ছাত্ররাজনীতি: প্রসঙ্গ ছাত্রশিবির’। এই আলোচনায় আলোচকদের মধ্যে ছিলেন ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বর্তমান সভাপতি এস এম ফরহাদ এবং সাবেক কর্মী মোহাম্মদ ইশরাক।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে শিবিরের প্যানেলের এজিএস প্রার্থী মহিউদ্দীন খান বলেছেন, জরিপ দুটি শিবিরের দ্বারা প্রভাবিত বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। জরিপে শিবিরের প্রার্থীরা অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছেন বলে উঠে এসেছে। যদিও তাঁর মত, এত বেশি পার্থক্য হওয়ার কথা নয়।

জরিপ পরিচালনাকারী সংগঠন সোচ্চারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আনাস বিন মুনির। তিনি ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্যানেল থেকে এবারের ডাকসু নির্বাচনে সদস্য পদে প্রার্থী হয়েছেন।

আনাস বিন মুনির বলেন, জরিপটি করেছে সোচ্চারের বাংলাদেশ শাখা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি। জরিপের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নেই।

অন্য প্রার্থীরা যা বলছেন

যে প্রক্রিয়ায় জরিপ করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে উল্লেখ করে বামপন্থী সাত ছাত্রসংগঠন সমর্থিত প্রতিরোধ পর্ষদের ভিপি প্রার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ (ইমি) বলেছেন, অনলাইনে গিয়ে তো শিবির ছাড়া কিছু দেখা যায় না। তাদের এত এত বট আইডি (ভুয়া ফেসবুক আইডি)। কিন্তু বাস্তব চিত্র তো ভিন্ন।

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের প্যানেলের জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদারও জরিপের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘দুটি জরিপ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যথেষ্ট প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এই জরিপ দুটোর ওপর আস্থা রাখছে না বলেই আমরা শুনছি। এর নিরপেক্ষতা নিয়ে তো প্রশ্ন রয়েছেই।’

ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার। প্রচারের শেষ দিন আজ রোববার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেছেন, একটি জরিপে শিক্ষার্থীদের কোনো অংশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, কোনো অংশকে হয়নি। এর যুক্তি কী, সেটা স্পষ্ট নয়। দৈবচয়নের ভিত্তিতে সবার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হলে তার একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হতো। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে ভোটারদের মনোজগৎকে প্রভাবিত করার জন্য এ ধরনের জরিপ করা হয়ে থাকে। এর উদ্দেশ্য রাজনৈতিক।