ঢাকা ০৩:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিপজ্জনক অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্য, যে কোনো সময় বৃহত্তর যুদ্ধ শুরু

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১২:২৯:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • 65

সময়ের সবচেয়ে ‘সংবেদনশীল ও বিপজ্জনক’ অবস্থায় রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলো। অঞ্চলটি ঘিরে আতঙ্কিত বিশ্লেষকরা। তাদের আশঙ্কা, নানা দিক থেকে বাড়তে থাকা সংঘাত ও উত্তেজনা যে কোনো সময় একটি বৃহত্তর যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। সেই যুদ্ধে মুখোমুখি হবে ইসরায়েল, ইরান ও তাদের আঞ্চলিক মিত্ররা। এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

ইয়েমেন

ফিলিস্তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ আশরাফ আকা মনে করেন, হুতিদের সাম্প্রতিক ঘোষণা নতুন সংঘাতের সূচনা হতে পারে। তাদের মতে, ইয়েমেন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। হামলা হলে এটি শুধু গাজার যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করবে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলকেও ব্যাহত করতে পারে।

লেবানন

লেবানন ও সিরিয়ার বিরুদ্ধে ইসরায়েলি হামলা, এমনকি মিসর ও জর্ডানের প্রতি উসকানিমূলক নীতি গোটা অঞ্চলকে আরও অস্থিতিশীল করছে। লেবানিজ লেখক মরতাদা সামাভি বলেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য হলো গাজায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও লেবাননে প্রতিরোধ শক্তিকে নিরস্ত্র করা। এর ফলে দেশটি ‘উত্তপ্ত দিনগুলোর’ মুখোমুখি হতে চলেছে। তিনি মনে করেন, জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের পর ইরানও নতুন সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অর্থাৎ পরিস্থিতি যে কোনো সময় বিস্ফোরিত হতে পারে।

ইরান

তেহরানের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ হাদি ইসা দালুল জানান, ইসরায়েল এখনো সরাসরি ইরানের ভেতরে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারেনি। বরং তারা সীমান্তবর্তী এলাকায় ড্রোন নেটওয়ার্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার ওপর নির্ভর করেছে। তবে ইরান ইতোমধ্যে এসব নেটওয়ার্ক ভেঙে দিয়েছে, ফলে ইসরায়েলের বিকল্প সীমিত। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েল একা ইরানের মুখোমুখি হতে পারবে না। গবেষক সালেহ আল-কাজউইনি মনে করেন, ইরানের সাম্প্রতিক প্রতিক্রিয়া ইসরায়েলের জন্য এক সতর্কবার্তা, তবে ইসরায়েলকে পুরোপুরি বিশ্বাস করা যায় না। তাদের লক্ষ্যই হলো গোটা অঞ্চলের প্রতিরোধ শক্তি ভেঙে দেওয়া।

ইরাক

বাগদাদের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মুখলিদ আল-দার্ব মনে করেন, ইরাকই ইরানপন্থি ফ্রন্টের সবচেয়ে দুর্বল সংযোগ। যদি ইরাক সক্রিয়ভাবে ইরানকে সমর্থন করে, তবে ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্র প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। এর ফলে দেশটির ভেতরে নিরাপত্তা ভেঙে পড়বে এবং সুপ্ত জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে।

জেরুজালেম

গবেষক হোসেইন আল-দিক মনে করেন, আসন্ন সংঘাত অতীতের যেকোনো লড়াইয়ের চেয়ে ‘বেশি সহিংস ও নির্ধারক‘ হতে পারে। তার দাবি, এ যুদ্ধে ইরানের শীর্ষ রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বও টার্গেট হতে পারে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এরইমধ্যে ইসরায়েলকে ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছে। দুই দেশের কৌশল এখন অভিন্ন—সব ফ্রন্টে একই অস্ত্রনীতির প্রয়োগ।

বিশেজ্ঞরা সবাই একমত যে মধ্যপ্রাচ্য সবচেয়ে বিপজ্জনক এক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। তবে যুদ্ধ শুরুর সময় নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। ইসরায়েলের লক্ষ্য প্রতিরোধ শক্তিকে ভেঙে দেওয়া এবং ইরানের লক্ষ্য আঞ্চলিক মিত্রদের ধরে রাখা। এ অবস্থায় ইরাক, লেবানন বা সিরিয়ার মতো ভঙ্গুর রাষ্ট্রগুলো সহজেই বড় শক্তির সংঘাতের ময়দানে পরিণত হতে পারে। সামান্য ভুল পদক্ষেপই পরিস্থিতিকে ভয়াবহ আঞ্চলিক যুদ্ধে ঠেলে দিতে পারে। তথ্যসূত্র : শাফাক নিউজ

জনপ্রিয় সংবাদ

ন্যায়বিচার পেয়েছেন তারেক রহমান

বিপজ্জনক অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্য, যে কোনো সময় বৃহত্তর যুদ্ধ শুরু

আপডেট সময় ১২:২৯:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সময়ের সবচেয়ে ‘সংবেদনশীল ও বিপজ্জনক’ অবস্থায় রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলো। অঞ্চলটি ঘিরে আতঙ্কিত বিশ্লেষকরা। তাদের আশঙ্কা, নানা দিক থেকে বাড়তে থাকা সংঘাত ও উত্তেজনা যে কোনো সময় একটি বৃহত্তর যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। সেই যুদ্ধে মুখোমুখি হবে ইসরায়েল, ইরান ও তাদের আঞ্চলিক মিত্ররা। এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

ইয়েমেন

ফিলিস্তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ আশরাফ আকা মনে করেন, হুতিদের সাম্প্রতিক ঘোষণা নতুন সংঘাতের সূচনা হতে পারে। তাদের মতে, ইয়েমেন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। হামলা হলে এটি শুধু গাজার যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করবে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলকেও ব্যাহত করতে পারে।

লেবানন

লেবানন ও সিরিয়ার বিরুদ্ধে ইসরায়েলি হামলা, এমনকি মিসর ও জর্ডানের প্রতি উসকানিমূলক নীতি গোটা অঞ্চলকে আরও অস্থিতিশীল করছে। লেবানিজ লেখক মরতাদা সামাভি বলেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য হলো গাজায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও লেবাননে প্রতিরোধ শক্তিকে নিরস্ত্র করা। এর ফলে দেশটি ‘উত্তপ্ত দিনগুলোর’ মুখোমুখি হতে চলেছে। তিনি মনে করেন, জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের পর ইরানও নতুন সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অর্থাৎ পরিস্থিতি যে কোনো সময় বিস্ফোরিত হতে পারে।

ইরান

তেহরানের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ হাদি ইসা দালুল জানান, ইসরায়েল এখনো সরাসরি ইরানের ভেতরে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারেনি। বরং তারা সীমান্তবর্তী এলাকায় ড্রোন নেটওয়ার্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার ওপর নির্ভর করেছে। তবে ইরান ইতোমধ্যে এসব নেটওয়ার্ক ভেঙে দিয়েছে, ফলে ইসরায়েলের বিকল্প সীমিত। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েল একা ইরানের মুখোমুখি হতে পারবে না। গবেষক সালেহ আল-কাজউইনি মনে করেন, ইরানের সাম্প্রতিক প্রতিক্রিয়া ইসরায়েলের জন্য এক সতর্কবার্তা, তবে ইসরায়েলকে পুরোপুরি বিশ্বাস করা যায় না। তাদের লক্ষ্যই হলো গোটা অঞ্চলের প্রতিরোধ শক্তি ভেঙে দেওয়া।

ইরাক

বাগদাদের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মুখলিদ আল-দার্ব মনে করেন, ইরাকই ইরানপন্থি ফ্রন্টের সবচেয়ে দুর্বল সংযোগ। যদি ইরাক সক্রিয়ভাবে ইরানকে সমর্থন করে, তবে ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্র প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। এর ফলে দেশটির ভেতরে নিরাপত্তা ভেঙে পড়বে এবং সুপ্ত জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে।

জেরুজালেম

গবেষক হোসেইন আল-দিক মনে করেন, আসন্ন সংঘাত অতীতের যেকোনো লড়াইয়ের চেয়ে ‘বেশি সহিংস ও নির্ধারক‘ হতে পারে। তার দাবি, এ যুদ্ধে ইরানের শীর্ষ রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বও টার্গেট হতে পারে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এরইমধ্যে ইসরায়েলকে ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছে। দুই দেশের কৌশল এখন অভিন্ন—সব ফ্রন্টে একই অস্ত্রনীতির প্রয়োগ।

বিশেজ্ঞরা সবাই একমত যে মধ্যপ্রাচ্য সবচেয়ে বিপজ্জনক এক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। তবে যুদ্ধ শুরুর সময় নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। ইসরায়েলের লক্ষ্য প্রতিরোধ শক্তিকে ভেঙে দেওয়া এবং ইরানের লক্ষ্য আঞ্চলিক মিত্রদের ধরে রাখা। এ অবস্থায় ইরাক, লেবানন বা সিরিয়ার মতো ভঙ্গুর রাষ্ট্রগুলো সহজেই বড় শক্তির সংঘাতের ময়দানে পরিণত হতে পারে। সামান্য ভুল পদক্ষেপই পরিস্থিতিকে ভয়াবহ আঞ্চলিক যুদ্ধে ঠেলে দিতে পারে। তথ্যসূত্র : শাফাক নিউজ