ঢাকা ০১:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আবারও ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল আফগানিস্তান, মৃতের সংখ্যা বাড়ার শঙ্কা

দুই দিনের ব্যবধানে ফের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) ৫.৫ মাত্রার নতুন ভূমিকম্পের ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায়। এর আগে রোববার রাতের ৬ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে ইতোমধ্যে ১ হাজার ৪০০-র বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, আহত হয়েছে আরও অনেকে এবং ধসে পড়েছে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি। এমন পরিস্থিতিতে নতুন ভূমিকম্প এই ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, মঙ্গলবারের ভূমিকম্পটি ১০ কিলোমিটার গভীরতায় আঘাত হানে, যা রোববার রাতের ভূমিকম্পের প্রায় কাছাকাছি। পরবর্তী এই কম্পনে পাহাড় ধসে পড়ায় অনেক রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়, উদ্ধারকাজ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে থাকা মানুষদের বের করে আনা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।
মানবিক সহায়তা সংস্থা আসিলের কর্মী সাফিউল্লাহ নূরজাই বলেন, ‘ভূমিকম্পে নতুন করে আরও অনেকে আহত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছানো রয়টার্সের এক সাংবাদিক জানান,প্রায় প্রতিটি বাড়িই ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। স্থানীয়রা এখনও ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে জীবিতদের বের করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। অনেকেই আটকে আছেন ধ্বংসস্তূপের নিচে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত কিছু ঘর মঙ্গলবারের ভূমিকম্পে সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে।

তালেবান প্রশাসনের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪১১ জন নিহত, ৩ হাজার ১২৪ জন আহত এবং ৫ হাজার ৪০০-এর বেশি বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। জাতিসংঘের সমন্বয়ক সতর্ক করে বলেছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে।

এদিকে আন্তর্জাতিক শিশু সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জরুরি তহবিল ছাড়ের আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটির প্রোগ্রাম ও অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর সামিরা সাঈদ রহমান বলেন, ‘এখন সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জীবন রক্ষার লড়াই। দূরবর্তী গ্রামগুলো থেকে আহতদের বের করে আনা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও আশ্রয় পৌঁছে দেয়া জরুরি।’

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় কুনার ও নানগারহার প্রদেশ। মঙ্গলবার কুনারের দুর্গম গ্রামগুলোতে পৌঁছাতে এক লাইনে অ্যাম্বুলেন্স চলতে দেখা গেছে, পাশাপাশি হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছে আহতদের উদ্ধার ও ত্রাণ সরবরাহের জন্য।

জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ জানিয়েছে, হাজার হাজার শিশু ঝুঁকিতে রয়েছে। তারা ওষুধ, গরম কাপড়, তাঁবু, টারপলিন, সাবান, স্যানিটারি প্যাড, তোয়ালে ও পানির বালতি পাঠানো শুরু করেছে।

তালেবান সেনারাও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধারকাজ ও নিরাপত্তায় সহায়তা করছে। তবে ভূমিকম্পজনিত দুর্যোগ বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় আফগানিস্তানের দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও সীমিত সামর্থ্যকে আরও চাপে ফেলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই দুর্যোগে।

আসিলের নূরজাই বলেন, মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ায় তারা খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে, আর পরবর্তী আফটারশকের আতঙ্ক তাদের আরও দুর্ভোগে ফেলছে। খাদ্য ও আশ্রয়ের জন্য এখনই জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।

সূত্র: রয়টার্স

জনপ্রিয় সংবাদ

৯ সেপ্টেম্বরই ডাকসু নির্বাচন- আপিল বিভাগ

আবারও ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল আফগানিস্তান, মৃতের সংখ্যা বাড়ার শঙ্কা

আপডেট সময় ১০:৪৩:২৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দুই দিনের ব্যবধানে ফের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) ৫.৫ মাত্রার নতুন ভূমিকম্পের ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায়। এর আগে রোববার রাতের ৬ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে ইতোমধ্যে ১ হাজার ৪০০-র বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, আহত হয়েছে আরও অনেকে এবং ধসে পড়েছে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি। এমন পরিস্থিতিতে নতুন ভূমিকম্প এই ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, মঙ্গলবারের ভূমিকম্পটি ১০ কিলোমিটার গভীরতায় আঘাত হানে, যা রোববার রাতের ভূমিকম্পের প্রায় কাছাকাছি। পরবর্তী এই কম্পনে পাহাড় ধসে পড়ায় অনেক রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়, উদ্ধারকাজ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে থাকা মানুষদের বের করে আনা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।
মানবিক সহায়তা সংস্থা আসিলের কর্মী সাফিউল্লাহ নূরজাই বলেন, ‘ভূমিকম্পে নতুন করে আরও অনেকে আহত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছানো রয়টার্সের এক সাংবাদিক জানান,প্রায় প্রতিটি বাড়িই ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। স্থানীয়রা এখনও ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে জীবিতদের বের করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। অনেকেই আটকে আছেন ধ্বংসস্তূপের নিচে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত কিছু ঘর মঙ্গলবারের ভূমিকম্পে সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে।

তালেবান প্রশাসনের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪১১ জন নিহত, ৩ হাজার ১২৪ জন আহত এবং ৫ হাজার ৪০০-এর বেশি বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। জাতিসংঘের সমন্বয়ক সতর্ক করে বলেছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে।

এদিকে আন্তর্জাতিক শিশু সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জরুরি তহবিল ছাড়ের আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটির প্রোগ্রাম ও অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর সামিরা সাঈদ রহমান বলেন, ‘এখন সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জীবন রক্ষার লড়াই। দূরবর্তী গ্রামগুলো থেকে আহতদের বের করে আনা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও আশ্রয় পৌঁছে দেয়া জরুরি।’

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় কুনার ও নানগারহার প্রদেশ। মঙ্গলবার কুনারের দুর্গম গ্রামগুলোতে পৌঁছাতে এক লাইনে অ্যাম্বুলেন্স চলতে দেখা গেছে, পাশাপাশি হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছে আহতদের উদ্ধার ও ত্রাণ সরবরাহের জন্য।

জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ জানিয়েছে, হাজার হাজার শিশু ঝুঁকিতে রয়েছে। তারা ওষুধ, গরম কাপড়, তাঁবু, টারপলিন, সাবান, স্যানিটারি প্যাড, তোয়ালে ও পানির বালতি পাঠানো শুরু করেছে।

তালেবান সেনারাও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধারকাজ ও নিরাপত্তায় সহায়তা করছে। তবে ভূমিকম্পজনিত দুর্যোগ বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় আফগানিস্তানের দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও সীমিত সামর্থ্যকে আরও চাপে ফেলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই দুর্যোগে।

আসিলের নূরজাই বলেন, মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ায় তারা খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে, আর পরবর্তী আফটারশকের আতঙ্ক তাদের আরও দুর্ভোগে ফেলছে। খাদ্য ও আশ্রয়ের জন্য এখনই জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।

সূত্র: রয়টার্স