দেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষক সমাজের পেশাগত মর্যাদা রক্ষা এবং ক্যাম্পাসের শিক্ষার পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংক (ইউটিএল) এর নেতৃবৃন্দ।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) বিকেলে ইউটিএলের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এই সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের ৬ দফা দাবি ও প্রস্তাবনা ইউজিসি চেয়ারম্যানের কাছে তুলে ধরেন।
ইউটিএল এর আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান বিশ্বাস ও সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইনের নেতৃত্বে এই প্রতিনিধি দল ইউটিএল-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে ইউজিসি চেয়ারম্যানকে অবহিত করেন। তাদের উপস্থাপিত দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো: জুলাই অভ্যুত্থানের ডকুমেন্টেশন ও ‘জুলাই কর্নার’ প্রতিষ্ঠা: জুলাই অভ্যুত্থানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবদানকে একাডেমিক দৃষ্টিকোণ থেকে নথিভুক্ত করা এবং সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ‘জুলাই কর্নার’ স্থাপন করা। স্বতন্ত্র বেতন স্কেল: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য একটি স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন করা। শিক্ষকদের পেশাগত নিরাপত্তা ও গবেষণা: পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য সমান গবেষণা সুযোগ নিশ্চিত করা এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরির নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা। পাশাপাশি, পিছিয়ে পড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা বরাদ্দ বাড়ানো এবং তা বিতরণে স্বচ্ছতা আনা। শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা: শিক্ষক নিয়োগে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা এবং শিক্ষক সংকটে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দ্রুত নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া। পাশাপাশি, বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে শিক্ষক নিয়োগে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তা তদন্ত করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। আবাসন ও বৃত্তি: শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসন এবং বৃত্তির ব্যবস্থা করা। নিরাপত্তা ব্যবস্থা: বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য একটি বিশেষায়িত বাহিনী (ক্যাম্পাস পুলিশ) নিয়োগ করা এবং জরুরি হটলাইন চালু করা।
এ সময় ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ এই ধরনের একটি শিক্ষক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে ইউটিএলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ইউটিএলের প্রস্তাবে সমসাময়িক সমস্যাগুলো উঠে এসেছে। বিশেষ করে শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের বিষয়ে তিনি মন্ত্রণালয়ে কথা বলবেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে সরকার এটি গুরুত্ব সহকারে দেখবে। তিনি আরও বলেন যে, অতি দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘জুলাই কর্নার’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনের স্মৃতি অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টা করা হবে। অন্যান্য দাবি ও প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
ইউটিএল প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইউজিসি চেয়ারম্যানের এই উদ্যোগ ও সহায়তায় প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের উচ্চশিক্ষা আরও উন্নত হবে এবং শিক্ষক সমাজ মর্যাদা নিয়ে দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত হবেন। প্রতিনিধি দল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মাধ্যমে দাবিগুলো বাস্তবায়নে ইউজিসির সহযোগিতা কামনা করে এবং ইউজিসির পক্ষ থেকে যেগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করার অনুরোধ জানায়।
প্রতিনিধি দলে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউটিএল-এর যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এস মনিরা আহসান (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহবুব রাজ্জাক (বুয়েট), কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এইচ এম মোশারফ হোসাইন (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), যুগ্ম সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. ফারজানা ইয়াসমিন চৌধুরী (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) এবং জনাব আরিফুল ইসলাম (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)। এছাড়া কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যাপক ড. রুহুল আমিন (ঢাবি), অধ্যাপক ড. আবু লায়েক (জবি) এবং অধ্যাপক ড. জহিরুল ইসলামও (ঢাবি) এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন।
ঢাকাভয়েস/২৪জেএ