ঢাকা ০২:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo হিরো আলমের ওপর দুর্বৃত্তদের হামলা Logo ইসলামী ব্যাংকের ২০০ কর্মী ছাঁটাই, ৪৯৭১ জন ওএসডি Logo দ্বিতীয় দফায় ১২ দিনের কর্মসূচিতে যাচ্ছে জামায়াতসহ সাত দল Logo আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন ক্রিস ওকস Logo সাকিবের সম্পদের অনুসন্ধানে দুদকের নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ Logo সাভারে দুর্গাপূজা: সর্বাত্মক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী Logo নুরুল হক নুরের স্বাস্থ্যের খোঁজ নিলেন তারেক রহমান Logo নিখোঁজ দুই বোনের অজ্ঞাত স্থান থেকে ভিডিওবার্তা, দিলেন ‘ধর্মান্তরিতের’ বার্তা Logo ‘জুলাই আন্দোলন দমনে ৩ লাখ ৫ হাজার রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়েছিল’ Logo তা’মীরুল মিল্লাত থেকে আগামী দিনে ওমরের উত্তরসূরী বের হবে: জাহিদুল ইসলাম

গাজায় ইসরায়েলি হামলা চলছেই,২৪ ঘন্টায় নিহত আরও ৭৭

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি হামলায় ২৪ ঘন্টায় আরও ৭৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে কেবল গাজা নগরীতেই প্রাণ হারিয়েছেন ৪৭ জন।তাদের মধ্যে ১১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন ত্রাণ সংগ্রহের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়।

রোববার (৩১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জজিরা।

আল জজিরা বলছে, ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ ও জোরপূর্বক উচ্ছেদ অভিযানের মুখে গাজা নগরী ছেড়ে শত শত ফিলিস্তিনি পালাচ্ছেন। হাতে গোনা সামান্য মালপত্র ট্রাক, ভ্যান ও গাধার গাড়িতে তুলে তারা এলাকা ছাড়ছেন।

নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের পশ্চিম দিকে দেইর আল-বালাহর কাছে বহু পরিবার খোলা আকাশের নিচে অস্থায়ী তাঁবু ফেলতে শুরু করেছে। এদের অধিকাংশকেই একাধিকবার ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে হয়েছে।

৫০ বছর বয়সী মোহাম্মদ মারুফ বলেছেন, “আমরা রাস্তায় পড়ে আছি। কী বলব? কুকুরের মতো? না, কুকুরের চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছি আমরা”। তিনি জানান, ৯ সদস্যের পরিবার নিয়ে তারা আগেই উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন।

আরেক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি মোহাম্মদ আবু ওয়ারদা আল জাজিরাকে বলেছেন, তিনি উত্তর গাজার জাবালিয়া ছেড়ে পশ্চিম গাজার দিকে যাচ্ছেন। তবে গন্তব্য ঠিক জানা নেই। তার ভাষায়, “অবস্থা এত ভয়াবহ ছিল যে সেখান থেকে বেরোতে বাধ্য হয়েছি। এখানে তাঁবু খাটানোর জায়গা পেলেই ভাগ্য ভালো হবে। কোথাও নিরাপদ নয়, ইসরায়েলিরা সর্বত্র আক্রমণ চালাচ্ছে।”

আগস্টের শুরু থেকে ইসরায়েলি সেনারা টানা হামলা চালাচ্ছে গাজা নগরীতে। শহর দখল ও প্রায় ১০ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করার লক্ষ্যেই এই অভিযান— এমন আশঙ্কা জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)।

গত শুক্রবার ইসরায়েল জানায়, তারা নগরী দখলের ‘প্রাথমিক ধাপ’ শুরু করেছে এবং এটিকে “যুদ্ধক্ষেত্র” ঘোষণা করেছে।

শনিবার হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ওই দিন একদিনেই গোটা গাজায় ৭৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শুধু গাজা নগরীতেই নিহত ৪৭ জন। এর মধ্যে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন রুটি সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়।

অন্যদিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আবাসিক ভবনে হামলায় সাতজন নিহত হন। ধ্বংসস্তূপে উদ্ধারকাজ চালাতে দেখা গেছে স্বেচ্ছাসেবকদের।

আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ বলেন, “গাজা নগরীজুড়ে হামলা আরও বাড়ছে। ঘরবাড়ি, কমিউনিটি সেন্টার সবই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের জীবনধারার ভিত্তি ভেঙে পড়ছে। এ সব ঘটছে যখন মানুষ দুর্ভিক্ষ, অনাহার আর পানিশূন্যতার মধ্যে রয়েছে। পুরো পরিস্থিতি মানবিক বিপর্যয়ে গড়াচ্ছে।”

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির প্রধান মিরজানা স্পোলজারিচ এগার শনিবার বলেন, গাজা নগরীর জনগণকে গণহারে উচ্ছেদ করার ইসরায়েলি পরিকল্পনা “অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য”। তার মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন কিছু নিরাপদ ও সম্মানজনকভাবে করা সম্ভব নয়।

তবে আন্তর্জাতিক নিন্দা সত্ত্বেও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার অভিযানে কোনো বিরতি দিচ্ছে না।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দিয়েছে এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে দায়মুক্তি দিয়ে আসছে।

এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প গাজা থেকে সব ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা কার্যত জাতিগত নিধনের শামিল এবং আন্তর্জাতিক আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধ।

ট্যাগস :

হিরো আলমের ওপর দুর্বৃত্তদের হামলা

গাজায় ইসরায়েলি হামলা চলছেই,২৪ ঘন্টায় নিহত আরও ৭৭

আপডেট সময় ০৯:৫৪:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৫

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি হামলায় ২৪ ঘন্টায় আরও ৭৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে কেবল গাজা নগরীতেই প্রাণ হারিয়েছেন ৪৭ জন।তাদের মধ্যে ১১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন ত্রাণ সংগ্রহের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়।

রোববার (৩১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জজিরা।

আল জজিরা বলছে, ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ ও জোরপূর্বক উচ্ছেদ অভিযানের মুখে গাজা নগরী ছেড়ে শত শত ফিলিস্তিনি পালাচ্ছেন। হাতে গোনা সামান্য মালপত্র ট্রাক, ভ্যান ও গাধার গাড়িতে তুলে তারা এলাকা ছাড়ছেন।

নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের পশ্চিম দিকে দেইর আল-বালাহর কাছে বহু পরিবার খোলা আকাশের নিচে অস্থায়ী তাঁবু ফেলতে শুরু করেছে। এদের অধিকাংশকেই একাধিকবার ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে হয়েছে।

৫০ বছর বয়সী মোহাম্মদ মারুফ বলেছেন, “আমরা রাস্তায় পড়ে আছি। কী বলব? কুকুরের মতো? না, কুকুরের চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছি আমরা”। তিনি জানান, ৯ সদস্যের পরিবার নিয়ে তারা আগেই উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন।

আরেক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি মোহাম্মদ আবু ওয়ারদা আল জাজিরাকে বলেছেন, তিনি উত্তর গাজার জাবালিয়া ছেড়ে পশ্চিম গাজার দিকে যাচ্ছেন। তবে গন্তব্য ঠিক জানা নেই। তার ভাষায়, “অবস্থা এত ভয়াবহ ছিল যে সেখান থেকে বেরোতে বাধ্য হয়েছি। এখানে তাঁবু খাটানোর জায়গা পেলেই ভাগ্য ভালো হবে। কোথাও নিরাপদ নয়, ইসরায়েলিরা সর্বত্র আক্রমণ চালাচ্ছে।”

আগস্টের শুরু থেকে ইসরায়েলি সেনারা টানা হামলা চালাচ্ছে গাজা নগরীতে। শহর দখল ও প্রায় ১০ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করার লক্ষ্যেই এই অভিযান— এমন আশঙ্কা জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)।

গত শুক্রবার ইসরায়েল জানায়, তারা নগরী দখলের ‘প্রাথমিক ধাপ’ শুরু করেছে এবং এটিকে “যুদ্ধক্ষেত্র” ঘোষণা করেছে।

শনিবার হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ওই দিন একদিনেই গোটা গাজায় ৭৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শুধু গাজা নগরীতেই নিহত ৪৭ জন। এর মধ্যে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন রুটি সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়।

অন্যদিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আবাসিক ভবনে হামলায় সাতজন নিহত হন। ধ্বংসস্তূপে উদ্ধারকাজ চালাতে দেখা গেছে স্বেচ্ছাসেবকদের।

আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ বলেন, “গাজা নগরীজুড়ে হামলা আরও বাড়ছে। ঘরবাড়ি, কমিউনিটি সেন্টার সবই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের জীবনধারার ভিত্তি ভেঙে পড়ছে। এ সব ঘটছে যখন মানুষ দুর্ভিক্ষ, অনাহার আর পানিশূন্যতার মধ্যে রয়েছে। পুরো পরিস্থিতি মানবিক বিপর্যয়ে গড়াচ্ছে।”

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির প্রধান মিরজানা স্পোলজারিচ এগার শনিবার বলেন, গাজা নগরীর জনগণকে গণহারে উচ্ছেদ করার ইসরায়েলি পরিকল্পনা “অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য”। তার মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন কিছু নিরাপদ ও সম্মানজনকভাবে করা সম্ভব নয়।

তবে আন্তর্জাতিক নিন্দা সত্ত্বেও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার অভিযানে কোনো বিরতি দিচ্ছে না।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দিয়েছে এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে দায়মুক্তি দিয়ে আসছে।

এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প গাজা থেকে সব ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা কার্যত জাতিগত নিধনের শামিল এবং আন্তর্জাতিক আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধ।