ঢাকা ১২:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুন্দরগঞ্জে বিএনপির ওয়ার্ড কমিটি গঠনে অনিয়ম, প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও ঝাড়ু মিছিল

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির ইউনিয়ন পর্যায়ে সদস্য নবায়ন, নতুন সদস্য সংগ্রহ ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এরেই প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ ও ঝাড়ু মিছিল করে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন।

বুধবার (২৭ আগস্ট) বিকেল ৫টার দিকে সুন্দরগঞ্জ ডি.ডব্লিউ সরকারি ডিগ্রি কলেজ চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি পৌরশহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কলেজ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা কয়েক শ’ নেতাকর্মী অংশ নেন।

মিছিলকারীরা হাতে ফেস্টুন ও ব্যানার নিয়ে স্লোগান দেন এবং জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মইনুল হাসান সাদিকের ছবি সম্বলিত কুশপুত্তলিকায় জুতাপেটা করে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

মিছিল শেষে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ওয়ার্ড কমিটি গঠনে জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মাত্র দুই ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে সদস্য নবায়ন ও সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। ইউনিয়ন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের যোগসাজশে নিজেদের মনোনীত ব্যক্তিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

বক্তারা আরও বলেন, সুন্দরগঞ্জ পৌরসভা ও উপজেলার কাপাসিয়া, ছাপড়হাটী, সোনারায়, বামনডাঙ্গা, রামজীবন, বেলকা ও সর্বানন্দ ইউনিয়নে ১০০ জন পুরনো সদস্য নবায়ন এবং ১০০ জন নতুন সদস্য সংগ্রহের নিয়ম মানা হয়নি। বরং বাইরের লোকজনের আইডি কার্ড সংগ্রহ করে তাদের সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে। যাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তারা বিএনপির রাজনীতির সাথে আগে কখনও জড়িত ছিলেন না। তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য দলের কর্মী ছিলেন।

এসময় বক্তারা দ্রুত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নতুন কমিটি গঠনের জোর দাবি জানান। একইসঙ্গে অনিয়মে জড়িত জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক, উপজেলা আহ্বায়ক বাবুল আহমেদ, সদস্যসচিব মাহমুদুল ইসলাম প্রামাণিক, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়া নিপন এবং সদস্যসচিব মিজানুর রহমান লিপুকে অপসারণ ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানান।

প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম, উপদেষ্টা এমএ মালেক, সদস্য ও কঞ্চিবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোয়ার আলম সরকার, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজমুল হুদা, যুগ্ন আহবায়ক সুন্দরগঞ্জ পৌর বিএনপি, এসএম নুরে আলম রাব্বি লিংকন, বিএনপি নেতা আরেফিন আজিজ সরদার সিন্টু, পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নাহমুদুল হক রাসেলসহ অনেকে।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মাহমুদুল ইসলাম প্রামাণিক। তিনি দাবি করেন, নিয়ম ও নীতিমালা মেনেই সদস্য সংগ্রহ ও কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিকের বক্তব্য জানতে একাধিকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তার মোবাইলে বারবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে, বিভিন্ন ইউনিয়নের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রেখে সদস্য সংগ্রহ ও কমিটি গঠনের আয়োজন করায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

এরপর জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক তার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবহার না করার নির্দেশনা দেন। বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তিনি লেখেন, ‘সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সদস্য সংগ্রহ নবায়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনে স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত না করে স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে মাঠ বা পার্শ্ববর্তী এলাকা ব্যবহার করতে হবে। কেবলমাত্র বোঝার সুবিধার জন্য স্কুলের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে।’

জনপ্রিয় সংবাদ

শহিদ আবু সাঈদ হত্যার মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু

সুন্দরগঞ্জে বিএনপির ওয়ার্ড কমিটি গঠনে অনিয়ম, প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও ঝাড়ু মিছিল

আপডেট সময় ০৯:৩৫:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির ইউনিয়ন পর্যায়ে সদস্য নবায়ন, নতুন সদস্য সংগ্রহ ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এরেই প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ ও ঝাড়ু মিছিল করে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন।

বুধবার (২৭ আগস্ট) বিকেল ৫টার দিকে সুন্দরগঞ্জ ডি.ডব্লিউ সরকারি ডিগ্রি কলেজ চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি পৌরশহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কলেজ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা কয়েক শ’ নেতাকর্মী অংশ নেন।

মিছিলকারীরা হাতে ফেস্টুন ও ব্যানার নিয়ে স্লোগান দেন এবং জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মইনুল হাসান সাদিকের ছবি সম্বলিত কুশপুত্তলিকায় জুতাপেটা করে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

মিছিল শেষে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ওয়ার্ড কমিটি গঠনে জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মাত্র দুই ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে সদস্য নবায়ন ও সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। ইউনিয়ন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের যোগসাজশে নিজেদের মনোনীত ব্যক্তিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

বক্তারা আরও বলেন, সুন্দরগঞ্জ পৌরসভা ও উপজেলার কাপাসিয়া, ছাপড়হাটী, সোনারায়, বামনডাঙ্গা, রামজীবন, বেলকা ও সর্বানন্দ ইউনিয়নে ১০০ জন পুরনো সদস্য নবায়ন এবং ১০০ জন নতুন সদস্য সংগ্রহের নিয়ম মানা হয়নি। বরং বাইরের লোকজনের আইডি কার্ড সংগ্রহ করে তাদের সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে। যাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তারা বিএনপির রাজনীতির সাথে আগে কখনও জড়িত ছিলেন না। তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য দলের কর্মী ছিলেন।

এসময় বক্তারা দ্রুত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নতুন কমিটি গঠনের জোর দাবি জানান। একইসঙ্গে অনিয়মে জড়িত জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক, উপজেলা আহ্বায়ক বাবুল আহমেদ, সদস্যসচিব মাহমুদুল ইসলাম প্রামাণিক, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়া নিপন এবং সদস্যসচিব মিজানুর রহমান লিপুকে অপসারণ ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানান।

প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম, উপদেষ্টা এমএ মালেক, সদস্য ও কঞ্চিবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোয়ার আলম সরকার, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজমুল হুদা, যুগ্ন আহবায়ক সুন্দরগঞ্জ পৌর বিএনপি, এসএম নুরে আলম রাব্বি লিংকন, বিএনপি নেতা আরেফিন আজিজ সরদার সিন্টু, পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নাহমুদুল হক রাসেলসহ অনেকে।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মাহমুদুল ইসলাম প্রামাণিক। তিনি দাবি করেন, নিয়ম ও নীতিমালা মেনেই সদস্য সংগ্রহ ও কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিকের বক্তব্য জানতে একাধিকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তার মোবাইলে বারবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে, বিভিন্ন ইউনিয়নের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রেখে সদস্য সংগ্রহ ও কমিটি গঠনের আয়োজন করায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

এরপর জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক তার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবহার না করার নির্দেশনা দেন। বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তিনি লেখেন, ‘সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সদস্য সংগ্রহ নবায়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনে স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত না করে স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে মাঠ বা পার্শ্ববর্তী এলাকা ব্যবহার করতে হবে। কেবলমাত্র বোঝার সুবিধার জন্য স্কুলের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে।’