ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি হামলায় একদিনে কমপক্ষে ৫১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদিন গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ হারান ২৪ জন।
অন্যদিকে দুর্ভিক্ষের কারণে অনাহার ও অপুষ্টিতে মৃত্যু হয়েছে আরও ৮ জনের। এছাড়া গাজা শহরে এক হাজারের বেশি ভবন ধ্বংস করেছে ইসরায়েল।
আজ সোমবার (২৫ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী গত ৬ আগস্ট গাজা শহরে সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে জেতুন ও সাবরা মহল্লায় এক হাজারেরও বেশি ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স। সংস্থাটির দাবি, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও শত শত মানুষ চাপা পড়ে আছে।
রোববার দেওয়া এক বিবৃতিতে তারা জানায়, টানা গোলাবর্ষণ ও অবরুদ্ধ সড়কের কারণে অধিকাংশ এলাকায় উদ্ধারকাজ ও ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
তাদের আরও বলা হয়েছে, অসংখ্য মানুষের নিখোঁজের খবর পাচ্ছেন জরুরি কর্মীরা, কিন্তু সাড়া দিতে পারছেন না। এদিকে হাসপাতালে প্রচণ্ড চাপ তৈরি হয়েছে, আহতদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
সিভিল ডিফেন্স বলছে, ইসরায়েলের চলমান অভিযান আরও গভীর উদ্বেগ তৈরি করছে। ময়দানে থাকা দলগুলোর সক্ষমতা এত সীমিত যে, তারা এ ধরনের ভয়াবহ হামলার মোকাবিলা করতে পারছে না।
তারা সতর্ক করে জানিয়েছে, গাজার কোথাও নিরাপদ এলাকা নেই — উত্তর থেকে দক্ষিণ — সবখানেই বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্য করে ঘরবাড়ি, আশ্রয়কেন্দ্র এমনকি ত্রাণ শিবির পর্যন্ত বোমা বর্ষণ চলছে।
গাজা শহর পুরোপুরি দখলে নিতে ইসরায়েলি সেনারা ট্যাংক নিয়ে সাবরা এলাকায় ঢুকে পড়েছে। এতে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণ দিকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।
সিভিল ডিফেন্সের এই তথ্য বহু মানুষের আশঙ্কা সত্যি করছে যে, ইসরায়েল পুরো গাজা শহর ধ্বংস করতে চাইছে— যেমনটি তারা রাফাহ শহরে করেছিল। অধিকারকর্মীরা বলেন, এর লক্ষ্য হতে পারে গাজা থেকে সব ফিলিস্তিনিকে উৎখাত করা।
শহরের আল-জালাআ সড়কে একটি অ্যাপার্টমেন্টে হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন, এর মধ্যে একজন শিশু রয়েছে বলে জরুরি ও অ্যাম্বুলেন্স বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে।
যেখানে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছে, সেই এলাকায় টানা বোমাবর্ষণ চলছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, চারপাশে অবিরাম বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। একই সময়ে ধ্বংস করা হয়েছে উত্তর দিকের জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের একাধিক ভবনও।
রোববার একদিনেই অন্তত ৫১ জন নিহত হয়েছেন ইসরায়েলি হামলায়। এর মধ্যে ২৭ জন গাজা শহরে এবং আরও ২৪ জন ত্রাণের অপেক্ষায় থাকাকালে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে চিকিৎসা সূত্র।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, খাদ্যাভাবজনিত কারণে আরও ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অপুষ্টি ও অনাহারে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৯ জনে, এর মধ্যে ১১৫ জন শিশু।
ইসরায়েলি সেনারা নিয়মিত গুলি চালাচ্ছে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের দিকে। মূলত ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত বিতর্কিত জিএইচএফ কেন্দ্রগুলো থেকে সামান্য সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা করার সময়ও ইসরায়েলের হামলার মুখে পড়ছেন তারা।