শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ‘নব্য রাজাকার’ আখ্যা দেওয়া বিতর্কিত কর্মকর্তা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নাজমী নেওয়াজসহ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের (বিআইএম) ২৯ কর্মকর্তার অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ বাতিল করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের একান্ত সচিব (উপসচিব) জাহাঙ্গীর আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব বলেন, সম্প্রতি একটি দৈনিক পত্রিকায় ২৯ জনের বিশাল বহর নিয়ে বিআইমএ’র কর্মকর্তাদের অস্ট্রেলিয়া সফর নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পরই মন্ত্রণালয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
যেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশ ভ্রমণে এই মুহুর্তে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে, সেখানে এই ধরণের আবেদন কিভাবে আসে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কাদের ইন্ধনে, বা কাউকে খুশি করার জন্য এটি করা হয়েছে কি-না সেটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, গত বৃহস্পতিবারই শিল্প উপদেষ্টা বিআইএম’র প্রমোদ সফরের আবেদনটি বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আবেদনটির সাথে যে আমন্ত্রণপত্র দেয়া হয়েছে, সেটি নিয়ে যে সন্দেহ-সংশয়ের অভিযাগ উঠেছে সেটিও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সরকারী তহবিল হতে বিশাল অর্থ ব্যয় করে অস্ট্রেলিয়াতে ভ্রমণের আবেদন শুধুমাত্র দ্বৈত নাগরিক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নাজমী নেওয়াজকে পুনর্বাসনের জন্য করা হয়েছিল। তিনি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। অভিযোগ উঠেছে, কিছুদিনের মধ্যে তিনি যদি অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে না পারেন, তাহলে পরবর্তীতে বড় ধরনের সমস্যায় পড়ে যাবেন। তাই এক ঢিলে দুই পাখি মারায় তার উদ্দেশ্য ছিল।
সূত্রমতে, এই নাজমী নেওয়াজ ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ বিআইএম এর অফিসিয়াল গ্রুপে মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নব্য রাজাকার বলে উল্লেখ করেছেন। সেখানে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের চেতনাকে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেন। এছাড়া জামায়াতের সাবেক আমীর ও শিল্প মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায়ের আদর্শে থাকাদের ধ্বংস অনিবার্য বলে মন্তব্য করেন।
অভিযোগ উঠেছে, প্রমোদ ভ্রমণের জন্য যেসব কাগজপত্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হযেছে সেগুলো ভুয়া। সেখানে গাম্মা কলেজের প্যাড ব্যবহার করা হলেও আমন্ত্রণকারী ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অব বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এর একাডেমিক ম্যানেজার জেমস মেটক্যালফ। এই আমন্ত্রণপত্র কখন পাঠানো হয়েছে তার কোনো তারিখ উল্লেখ নেই। এছাড়া এসডিজি এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাসেটেইনেবিলিটি ইন বংলাদেশ পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, গাম্মা কলেজ অস্ট্রেলিয়া শুধুমাত্র ভোকেশনাল এডুকেশন সংক্রান্ত প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করে। গাম্মা কলেজ অস্ট্রেলিয়া এর সাথে বিআইএম এর কার্যক্রমের সাথে কোনরকম সাদৃশ্য নেই।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিআইএম এর মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব ড. খন্দকার আজিজুল ইসলাম বলেন, তিনি মাত্র দেড় মাস হলো এখানে জয়েন করেছেন। তিনি বিষয়টির বিস্তারিত জানেন না। তার কাছে ফাইল এনে দেয়ার পর তিনি সাক্ষর করে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে জানান। আমন্ত্রণের কাগজপত্র পর্যালোচনা করারও সুযোগ তার হয়নি বলে তিনি এ প্রতিবেদকের কাছে নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের একান্ত সচিব (উপসচিব) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিআইএম’র বিদেশ ভ্রমণের আবেদন স্থগিত করার নির্দেশ দেয়া হযেছে। সরকার এই মুহূর্তে বিশেষ প্রয়োজন না হলে বিদেশ ভ্রমণে আগ্রহী নয় বলেও মন্তব্য করেন।