ঢাকা ১০:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সরকারি বাঙলা কলেজে ‘শহীদ সাগর ছাত্রাবাস’ উদ্বোধন

সরকারি বাঙলা কলেজে ‘শহীদ সাগর ছাত্রাবাস’ উদ্বোধন

রাজধানীর মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের নবনির্মিত ছাত্রাবাসের নামকরণ করা হয়েছে ‘শহীদ সাগর ছাত্রাবাস’। আজ (১৪ আগস্ট) সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠানিক ভাবে নামফলক উন্মোচন করেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ কামরুল হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শহীদ সাগরের পিতা জনাব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

গত বছর, ১৯ জুলাই রাজধানীর মিরপুর-১০ গোলচত্বরে বৈষম্যবিরোধী  ছাত্র আন্দোলনে স্বৈরাচারী পুলিশের গুলিতে নিহত হন মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাগর আহমেদ। সাগরের রাজনৈতিক কোন যুগসূত্র না থাকলেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিতে রাজপথে নেমে আসে সাগর। ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়েই তিনি আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন। রাজবাড়ী জেলার  বালিয়াকান্দি উপজেলার বিলটাকাপোড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক তোফাজ্জল হোসেনের একমাত্র সন্তান সাগরের অকাল মৃত্যুতে পরিবার এখনও শোকে স্তব্ধ।

প্রসঙ্গত, সাগরের সহপাঠী ও কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে একাডেমিক কাউন্সিলে প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং পরে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পায়। ২৮ জুলাই ২০২৫ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সরকারি কলেজ-৪ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই নামকরণ আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়।

নবনির্মিত এই ছাত্রাবাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন,অধ্যক্ষ প্রফেসর কামরুল হাসান। এ-সময় তিনি বলেন, “সাগর শুধু সরকারি বাঙলা কলেজের নয়, পুরো বাংলাদেশের একজন মহানায়ক। সে আমাদের গর্ব, জাতির গর্ব। দেশের সংকটময় সময়ে সে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। সাগর আমাদের দেখিয়ে গেছে, দেশের জন্য কিভাবে লড়তে হয়, প্রয়োজন হলে প্রাণও দিতে হয়। এই ছাত্রাবাসের নামকরণ তার আত্মত্যাগকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম স্মরণ করিয়ে দেবে।”

অনুষ্ঠানে সাগরের আত্বার মাগফেরাত কামনায় সকলের নিকট দোয়া প্রার্থনা করে তার পিতা জনাব তোফাজ্জল হোসেন আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন,

“আমার একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে আমরা ভেঙে পড়েছি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আল্লাহ যেন আমার সাগরকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। সবাই আমার সন্তানের জন্য দোয়া করবেন।”

উদ্বোধনী আয়োজনে উপস্থিত ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সরকারি বাঙলা কলেজ শাখার আহ্বায়ক মো.মোখলেছুর রহমান, সদস্য সচিব (ভারপ্রাপ্ত) মো.হাফিজুর রহমান হাফিজ। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ বাঙলা কলেজ শাখার আহ্বায়ক মো.আশরাফুল ইসলাম রাব্বি। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সরকারি বাঙলা কলেজ শাখার সভাপতি আবির মাহমুদ সোহাগ এবং সেক্রেটারি সাইফুর রহমান সাকিব সহ তাদের প্রতিনিধি দল উপস্থিত থেকে শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতে, এই নামকরণ শুধু একটি ভবনের নাম নয়—এটি ন্যায়ের পথে দাঁড়ানো এক তরুণের আত্মত্যাগকে প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে স্মরণীয় করে রাখার অঙ্গীকার।

জনপ্রিয় সংবাদ

সরকারি বাঙলা কলেজে ‘শহীদ সাগর ছাত্রাবাস’ উদ্বোধন

সরকারি বাঙলা কলেজে ‘শহীদ সাগর ছাত্রাবাস’ উদ্বোধন

আপডেট সময় ০৮:৩৪:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫

রাজধানীর মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের নবনির্মিত ছাত্রাবাসের নামকরণ করা হয়েছে ‘শহীদ সাগর ছাত্রাবাস’। আজ (১৪ আগস্ট) সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠানিক ভাবে নামফলক উন্মোচন করেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ কামরুল হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শহীদ সাগরের পিতা জনাব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

গত বছর, ১৯ জুলাই রাজধানীর মিরপুর-১০ গোলচত্বরে বৈষম্যবিরোধী  ছাত্র আন্দোলনে স্বৈরাচারী পুলিশের গুলিতে নিহত হন মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাগর আহমেদ। সাগরের রাজনৈতিক কোন যুগসূত্র না থাকলেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিতে রাজপথে নেমে আসে সাগর। ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়েই তিনি আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন। রাজবাড়ী জেলার  বালিয়াকান্দি উপজেলার বিলটাকাপোড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক তোফাজ্জল হোসেনের একমাত্র সন্তান সাগরের অকাল মৃত্যুতে পরিবার এখনও শোকে স্তব্ধ।

প্রসঙ্গত, সাগরের সহপাঠী ও কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে একাডেমিক কাউন্সিলে প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং পরে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পায়। ২৮ জুলাই ২০২৫ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সরকারি কলেজ-৪ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই নামকরণ আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়।

নবনির্মিত এই ছাত্রাবাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন,অধ্যক্ষ প্রফেসর কামরুল হাসান। এ-সময় তিনি বলেন, “সাগর শুধু সরকারি বাঙলা কলেজের নয়, পুরো বাংলাদেশের একজন মহানায়ক। সে আমাদের গর্ব, জাতির গর্ব। দেশের সংকটময় সময়ে সে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। সাগর আমাদের দেখিয়ে গেছে, দেশের জন্য কিভাবে লড়তে হয়, প্রয়োজন হলে প্রাণও দিতে হয়। এই ছাত্রাবাসের নামকরণ তার আত্মত্যাগকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম স্মরণ করিয়ে দেবে।”

অনুষ্ঠানে সাগরের আত্বার মাগফেরাত কামনায় সকলের নিকট দোয়া প্রার্থনা করে তার পিতা জনাব তোফাজ্জল হোসেন আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন,

“আমার একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে আমরা ভেঙে পড়েছি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আল্লাহ যেন আমার সাগরকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। সবাই আমার সন্তানের জন্য দোয়া করবেন।”

উদ্বোধনী আয়োজনে উপস্থিত ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সরকারি বাঙলা কলেজ শাখার আহ্বায়ক মো.মোখলেছুর রহমান, সদস্য সচিব (ভারপ্রাপ্ত) মো.হাফিজুর রহমান হাফিজ। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ বাঙলা কলেজ শাখার আহ্বায়ক মো.আশরাফুল ইসলাম রাব্বি। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সরকারি বাঙলা কলেজ শাখার সভাপতি আবির মাহমুদ সোহাগ এবং সেক্রেটারি সাইফুর রহমান সাকিব সহ তাদের প্রতিনিধি দল উপস্থিত থেকে শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতে, এই নামকরণ শুধু একটি ভবনের নাম নয়—এটি ন্যায়ের পথে দাঁড়ানো এক তরুণের আত্মত্যাগকে প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে স্মরণীয় করে রাখার অঙ্গীকার।