বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন, খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দ্বিতীয় শাহাদৎ বার্ষিকী আজ
২০২৩ সালে (১৪ আগস্ট) আজকের এই দিনে রাত ৮টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (সাবেক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে- বিএসএসএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
২০২৩ সালের ১৩ আগস্ট বিকালে বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়লে আল্লামা সাঈদীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে কাশিমপুর কারাগার থেকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাকে বিএসএসএমইউতে পাঠানো হয়। সেখানেই মৃত্যু বরণ করেন আল্লামা সাঈদী।
তবে তার মৃত্যুর পর থেকে পরিবার এবং জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন স্তর থেকে অভিযোগ করা হয়েছে ষড়যন্ত্র করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আল্লামা সাঈদীর মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে সাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ জমিয়তে মুফাসসিরিন, বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরিন, আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ মুফাসসির পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র কল্যাণ পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের উদ্যোগে কর্মসূচি পালন করা হবে।
যে মামলায় কারাগারে ছিলেন মাওলানা সাঈদী
২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে সাজানো মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ হাসিনার তৈরি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর আগে, ২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার হন আল্লামা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী। পরে একই বছরের ২ আগস্ট কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী একজন বাংলাদেশি ইসলামী পণ্ডিত, বক্তা এবং রাজনীতিবিদ ও প্রাক্তন সংসদ সদস্য, যিনি ১২ জুন ১৯৯৬ থেকে ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত একজন সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সংসদীয় দলের উপনেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
সংক্ষিপ্ত জিবনী:
১৯৪০ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী গ্রামে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা ইউসুফ সাঈদী যিনি একজন স্বনামধন্য ইসলামী পণ্ডিত ছিলেন। তার মায়ের নাম গুলনাহার বেগম।
১৯৬৭ সাল থেকে তিনি নিজেকে ‘দায়িইলাল্লাহ’ হিসেবে আত্মনিয়োগ করেন। মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাইদী পৃথিবীর অর্ধশতেরও বেশি দেশে আমন্ত্রিত হয়ে ইসলামের সু-মহান আদর্শ মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। পবিত্র কাবা শরীফের সম্মানিত ইমাম এ মাহফিলে দু’বার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষা জীবন
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পিতার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করেন। পরে তিনি খুলনা আলিয়া মাদ্রাসায় কিছুদিন এবং পরে ১৯৬২ সালে ছারছিনা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল পাশ করেন। কামিল পাশ করার পর বিভিন্ন ভাষা, ধর্ম, বিজ্ঞান , রাজনীতি, অর্থনীতি, পররাষ্ট্র নীতি ,মনোবিজ্ঞান ও বিভিন্ন তত্তের উপর দীর্ঘ ৫ বছর অধ্যায়ন করেন ।
বাংলাভিশনের গুগল নিউজ ফলো করতে ক্লিক করুন
রাজনৈতিক জীবন
১৯৭৯ সালে সাধারণ সমর্থক হিসেবে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বাংলাদেশ জামায়াত-ই- ইসলামী-তে যোগদান করেন। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ জামায়াত-ই- ইসলামীর মজলিসে শুরার সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশ জামায়াত-ই- ইসলামীর নায়েবে আমীরের দ্বায়িত্ব পালন করেছেন।
বৈশ্বিক পর্যায়ে
১৯৭৬ সাল থেকে সৌদি বাদশাহর আমন্ত্রণে রাজকীয় মেহমান হিসেবে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হজ্জব্রত পালন করে আসছেন। ১৯৯০ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর রমজান মাস মক্কা মদীনায় যেতেন।
১৯৮২ সালে ইমাম সৈয়দ আলী হোসেনী খমিনির আমন্ত্রণে ইরানের প্রথম বিপ্লব বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী তেহরান সফর করেন। ১৯৯১ সালে সৌদি বাদশার আমন্ত্রণে কুয়েত – ইরাক যুদ্ধের মিমাংসা বৈঠকে তিনি যোগদান করেন। ১৯৯১ সালে ইসলামী সার্কেল অফ নর্থ আমেরিকা তাকে “আল্লামা” খেতাবে ভূষিত করে।
১৯৯৩ সালে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সামনে আমেরিকান মুসলিম ডে প্যারেড সম্মেলনে মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীকে ‘গ্র্যান্ডমার্শাল’ পদক দেয়া হয়। দুবাই সরকারের আমন্ত্রণে ২০০০ সালের ৮ই ডিসেম্বর আরব আমিরাতে ৫০,০০০ হাজারেরও বেশি শ্রোতার সামনে তিনি কোরআনের তাফসির পেশ করেন ।
লন্ডন মুসলিম সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কাবা শরিফের সম্মানিত ইমাম ‘শায়েখ আব্দুর রাহমান আস সুদাইসির’ সাথে মাওলানা সাঈদী ও আমন্ত্রিত হন। মাওলানা সাঈদীর হাতে হাত রেখে ছয় শতাধিক অমুসলিম ভাই-বোন ইসলামের সুমহান আদর্শে দীক্ষিত হন।
১ম কারাবরণ: মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৭৫ সালে প্রথম কারাবরণ করেন।
দ্বিতীয়বার গ্রেফতার হন ২৮ জুন ২০১০ সালে। যুদ্ধাপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করেন। তার রায়কে কেন্দ্র করে আন্দোলন ও প্রতিবাদ মিছিল করতে গিয়ে প্রায় ১৫০-এরও বেশি মানুষ মারা যান।
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৪০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সুবহে সাদিকের সময় পিরোজপুর জেলার জিয়ানগর উপজেলার সাঈদখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা ইউসুফ সাঈদী ইসলামী চিন্তাবিদ ও বক্তা ছিলেন। ‘সাঈদী’ তার পারিবারিক উপাধি। ১৯৫৭ সালে দাখিল পাসের সার্টিফিকেটে তার নাম ‘দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী’। সেখানে তার পিতার নামেও ‘সাঈদী’ রয়েছে। এ ছাড়া ১৯৬৪ সালে যশোরের একটি তাফসীর মাহফিলের লিফলেটে নাম রয়েছে ‘দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী’।
মাওলানা সাঈদীর পিতা ইউসুফ সাঈদী স্বনামধন্য ইসলামী পণ্ডিত বা আলেম ছিলেন। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মায়ের নাম গুলনাহার বেগম। তার চার ছেলে হলেন মরহুম রফিক সাঈদী, শামীম সাঈদী, মাসুদ সাঈদী ও নাসিম সাঈদী।
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পিতার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করেন। পরে তিনি খুলনা আলিয়া মাদ্রাসায় কিছুদিন এবং পরে ১৯৬২ সালে ছারছিনা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করেন। কামিল পাস করার পর বিভিন্ন ভাষা, ধর্ম, বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি, পররাষ্ট্র নীতি, মনোবিজ্ঞান ও বিভিন্ন তত্ত্বের উপর দীর্ঘ ৫ বছর অধ্যয়ন করেন। জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান
১৯৭৯ সালে সাধারণ সমর্থক হিসেবে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বাংলাদেশ জামায়াত-ই-ইসলামীতে যোগদান করেন। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মজলিসে শূরার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমিরের দায়িত্ব পালন করেন।
রচনা
মাওলানা সাঈদী পবিত্র কোরআনের তাফসির করেছেন। তার এ তাফসির ‘তাফসিরে সাঈদী’ নামে পরিচিত। ইতোমধ্যেই এ তাফসিরের ৫ খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তাফসিরের বাকি কাজ চলমান রয়েছে। তিনি ৫৮৪ পৃষ্ঠায় মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.) এর জীবনীমূলক গ্রন্থ ‘সীরাতে সাইয়্যেদুল মুরসালিন’ রচনা করেছেন। এ ছাড়াও ফিকহুল হাদিস, কুরআন এবং বিজ্ঞান, ইসলামে নারীর অধিকার, ইসলামে শ্রমিকের অধিকার, ইসলামের রাজনৈতিক দৃষ্টি ভঙ্গি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে ইসলামসহ নানা বিষয়ে এ পর্যন্ত তার ৭৭টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আমেরিকা ও লন্ডন থেকে তার ৪টি বই ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে।