ঢাকা ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৩২ বছরের ‘রাজনীতি মুক্ত’ ক্যাম্পাসে কমিটি দিচ্ছে ছাত্রদল

১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ছাত্ররাজনীতির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞায় থাকা ফেনীর ঐতিহ্যবাহী জয়নাল হাজারী কলেজে ৩২ বছর পর শুরু হয়েছে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। গত সোমবার (১১ আগস্ট) প্রার্থীতা ফরম বিতরণের মধ্য দিয়ে কলেজে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। জেলার রাজনীতি মুক্ত ও নিয়মশৃঙ্খলার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত এ শিক্ষাঙ্গনে এমন কাণ্ডের জন্য কলেজ প্রশাসনের নিরবতাকে দুষছেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

নূর হোসেন নামে কলেজের সাবেক এক শিক্ষার্থী বলেন, আওয়ামী লীগের মতো দল যে কাজ করেননি, এখন একটি সংগঠনের নেতারা তা করে দেখালেন। বিষয়টি কোনোভাবেই ভালো কিছু বয়ে আনবে না। প্রিয় আঙিনায় এমন কাণ্ড দেখে দূর থেকে খুবই আফসোস হচ্ছে। আশা করি সকলে এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন।

ওসমান বিন নবী নামে আরেকজন বলেন, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যেখানে অভিভাবকদের টাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান হয়, সেখানে রাজনীতি মুক্ত রাখা উচিত। আজকের এমন পরিস্থিতির জন্য কলেজ প্রশাসনের নিরবতা ও মেরুদণ্ডহীনতাই দায়ী। কারণ অতীতে এ কলেজ কমিটিতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা থাকলেও শুধু কলেজ প্রশাসনের কঠোরতার জন্য কোনো ধরনের কমিটি দিতে পারেনি। এখনই সকলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত।

কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ বলেন, বিষয়টি আমি অবগত না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরে এসেছে। দীর্ঘ সময় পর্যন্ত এ কলেজ রাজনীতি মুক্ত ছিল। এসব বিষয় কলেজের অধ্যক্ষ দেখভাল করবেন। আমরা উনার নিয়ন্ত্রণেই কাজ করি। এটির জবাবও উনি দেবেন। শিক্ষকদের ভালো-মন্দের বিষয়গুলো তুলে ধরাই শিক্ষক পরিষদের প্রতিনিধি হিসেবে আমার কাজ। এর বাইরে আমাদের কিছু করার নেই।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ এনামুল হক বলেন, রোববার (১০ আগস্ট) ছাত্রদলের একজন ছেলে আমাকে মুঠোফোনে কল দিয়ে কলেজে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি করার কথা জানিয়েছিল। আবার সোমবারও কলেজে এসে আমাকে কল দিলে তাদের কর্মসূচি শেষ করে ফেলতে বলি। তখন পরিবারসহ আমি ফেনী ক্যাডেট কলেজে অবস্থান করছিলাম। এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আমি আগে থেকে অবগত ছিলাম না।

কলেজ প্রশাসনের নীরবতার অভিযোগ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ বলেন, বিষয়গুলো কলেজ গভর্নিং বডিকে অবগত করা হবে। কারণ কমিটির সভাপতি থেকে শুরু করে সকলে চান কলেজটি রাজনীতি মুক্ত থাকুক। মূলত এমন কিছুর বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। আশাকরি আমরা কলেজটি রাজনীতি মুক্ত রাখতে পারব।

জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম মিলন বলেন, ছাত্র আন্দোলনের কারণে দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। এ দেশে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্ররা অসামান্য অবদান রেখেছেন। সেই হিসেবে জয়নাল হাজারী কলেজ কেন পিছিয়ে থাকবে?

এ বিষয়ে জয়নাল হাজারী কলেজের সভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক এমএ খালেক বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে জেলার মধ্যে কলেজটি রাজনীতি মুক্ত ছিল। শিক্ষার্থীদের ফলাফল ভালো ছিল। কোনো ধরনের হানাহানি বা বিশৃঙ্খলা ছিল না। শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগই কলেজ ও লেখাপড়ামুখী ছিল। রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে অনেকে মনে করছেন এটি আমার ইচ্ছেতে হচ্ছে। জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম মিলন ও যুগ্ম সম্পাদক সম্পাদক শওকত আলী জুয়েল পাটোয়ারীকে যেকোনো প্রোগ্রাম কলেজের বাইরে করতে বলেছিলাম। কারণ রাজনীতিতে ঢুকলে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বাধাগ্রস্ত হবে, রাজনীতিমুখী হয়ে পড়বে। সর্বশেষ কলেজে ছাত্রদলের ফরম বিতরণের বিষয়টি আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি। বিষয়গুলো নিয়ে কলেজ গভর্নিং বডির পাশাপাশি জেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ ফরিদ বাহার ও সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলালের সঙ্গে কথা বলব।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

৩২ বছরের ‘রাজনীতি মুক্ত’ ক্যাম্পাসে কমিটি দিচ্ছে ছাত্রদল

আপডেট সময় ০৭:১৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫
১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ছাত্ররাজনীতির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞায় থাকা ফেনীর ঐতিহ্যবাহী জয়নাল হাজারী কলেজে ৩২ বছর পর শুরু হয়েছে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। গত সোমবার (১১ আগস্ট) প্রার্থীতা ফরম বিতরণের মধ্য দিয়ে কলেজে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। জেলার রাজনীতি মুক্ত ও নিয়মশৃঙ্খলার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত এ শিক্ষাঙ্গনে এমন কাণ্ডের জন্য কলেজ প্রশাসনের নিরবতাকে দুষছেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

নূর হোসেন নামে কলেজের সাবেক এক শিক্ষার্থী বলেন, আওয়ামী লীগের মতো দল যে কাজ করেননি, এখন একটি সংগঠনের নেতারা তা করে দেখালেন। বিষয়টি কোনোভাবেই ভালো কিছু বয়ে আনবে না। প্রিয় আঙিনায় এমন কাণ্ড দেখে দূর থেকে খুবই আফসোস হচ্ছে। আশা করি সকলে এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন।

ওসমান বিন নবী নামে আরেকজন বলেন, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যেখানে অভিভাবকদের টাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান হয়, সেখানে রাজনীতি মুক্ত রাখা উচিত। আজকের এমন পরিস্থিতির জন্য কলেজ প্রশাসনের নিরবতা ও মেরুদণ্ডহীনতাই দায়ী। কারণ অতীতে এ কলেজ কমিটিতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা থাকলেও শুধু কলেজ প্রশাসনের কঠোরতার জন্য কোনো ধরনের কমিটি দিতে পারেনি। এখনই সকলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত।

কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ বলেন, বিষয়টি আমি অবগত না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরে এসেছে। দীর্ঘ সময় পর্যন্ত এ কলেজ রাজনীতি মুক্ত ছিল। এসব বিষয় কলেজের অধ্যক্ষ দেখভাল করবেন। আমরা উনার নিয়ন্ত্রণেই কাজ করি। এটির জবাবও উনি দেবেন। শিক্ষকদের ভালো-মন্দের বিষয়গুলো তুলে ধরাই শিক্ষক পরিষদের প্রতিনিধি হিসেবে আমার কাজ। এর বাইরে আমাদের কিছু করার নেই।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ এনামুল হক বলেন, রোববার (১০ আগস্ট) ছাত্রদলের একজন ছেলে আমাকে মুঠোফোনে কল দিয়ে কলেজে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি করার কথা জানিয়েছিল। আবার সোমবারও কলেজে এসে আমাকে কল দিলে তাদের কর্মসূচি শেষ করে ফেলতে বলি। তখন পরিবারসহ আমি ফেনী ক্যাডেট কলেজে অবস্থান করছিলাম। এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আমি আগে থেকে অবগত ছিলাম না।

কলেজ প্রশাসনের নীরবতার অভিযোগ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ বলেন, বিষয়গুলো কলেজ গভর্নিং বডিকে অবগত করা হবে। কারণ কমিটির সভাপতি থেকে শুরু করে সকলে চান কলেজটি রাজনীতি মুক্ত থাকুক। মূলত এমন কিছুর বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। আশাকরি আমরা কলেজটি রাজনীতি মুক্ত রাখতে পারব।

জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম মিলন বলেন, ছাত্র আন্দোলনের কারণে দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। এ দেশে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্ররা অসামান্য অবদান রেখেছেন। সেই হিসেবে জয়নাল হাজারী কলেজ কেন পিছিয়ে থাকবে?

এ বিষয়ে জয়নাল হাজারী কলেজের সভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক এমএ খালেক বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে জেলার মধ্যে কলেজটি রাজনীতি মুক্ত ছিল। শিক্ষার্থীদের ফলাফল ভালো ছিল। কোনো ধরনের হানাহানি বা বিশৃঙ্খলা ছিল না। শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগই কলেজ ও লেখাপড়ামুখী ছিল। রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে অনেকে মনে করছেন এটি আমার ইচ্ছেতে হচ্ছে। জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম মিলন ও যুগ্ম সম্পাদক সম্পাদক শওকত আলী জুয়েল পাটোয়ারীকে যেকোনো প্রোগ্রাম কলেজের বাইরে করতে বলেছিলাম। কারণ রাজনীতিতে ঢুকলে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বাধাগ্রস্ত হবে, রাজনীতিমুখী হয়ে পড়বে। সর্বশেষ কলেজে ছাত্রদলের ফরম বিতরণের বিষয়টি আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি। বিষয়গুলো নিয়ে কলেজ গভর্নিং বডির পাশাপাশি জেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ ফরিদ বাহার ও সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলালের সঙ্গে কথা বলব।