ঢাকা ০২:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo রুয়ার কার্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় অধ্যাপক মহিউদ্দীনকে নওগাঁ উন্নয়ন ফোরামের সংবর্ধনা Logo খোকসা থানায় চোরাই ট্রলি গায়েব, ভুয়া স্ট্যাম্পে ধামাচাপা Logo চালকের ঘুমের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে মাইক্রোবাসটি,একই পরিবারের ৭ জন নিহত Logo মেহেরপুরের সড়কে ককটেল ফাটিয়ে গণডাকাতি Logo জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে আনুষ্ঠানিক বিএনপি প্রতিক্রিয়া জানাবে আজ Logo এখন জনগণের ভয়ে সরকার পোস্ট ডিলিট করে Logo বিচারিক হত্যাকাণ্ড ‘শাহবাগ-আওয়ামী যৌথ প্রজেক্টের ফল’: ঢাবি শিবির সেক্রেটারি Logo বেগমগঞ্জে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে মাইক্রোবাস, নিহত ৭ Logo কক্সবাজার নয়, ওয়াশিংটনে আছেন পিটার হাস Logo ভারতে আকস্মিক বন্যায় ৯ সেনাসহ দেড় শতাধিক নিখোঁজ

খোকসা থানায় চোরাই ট্রলি গায়েব, ভুয়া স্ট্যাম্পে ধামাচাপা

কুষ্টিয়া জেলার খোকসা থানায় প্রায় চার মাস আগে জব্দকৃত চোরাই ট্রলি রফা-দফার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বেকডেটে ভুয়া মালিকানা তৈরীর অভিযোগ উঠেছে।

গত ২৯ জুলাইখোকসার রঘুনাথপুর এলাকার মঞ্জিল ও তার পুত্র লাল্টু জব্দকৃত ট্রলিটি থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে পুলিশের সাথে রফা-দফা করেন। পরে গভীর রাতে খোকসা থানা পুলিশ ৪৫ হাজার টাকার বিনিময়ে গাড়িটি বের করে দেন।
এক পর্যায় বিষয়টি জানাজানি হলে ৩১ জুলাই সকালে খোকসা থানা পুলিশ মঞ্জিল ও লাল্টুকে থানায় নিয়ে যান এবং তাদেরকে কুষ্টিয়ায় যেয়ে ট্রলি গাড়ির ক্রেতা বিক্রেতার স্ট্যাম্প তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এদিকে খোকসা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মঈনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি জানাজানি হলে জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুরু হয়েছে তদন্ত।

জানা যায়, চার মাস আগে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খোকসা থানার পুলিশ রঘুনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা হাসান (পিতা: ওসমান)-এর বাড়ি থেকে একটি চোরাই স্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলি (টলি) উদ্ধার করে। ট্রলিটি দীর্ঘদিন থানার হেফাজতে থাকলেও গত ২৯ জুলাই (মঙ্গলবার) রাতে মাত্র ৪৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ওসি শেখ মঈনুল ইসলামের সঙ্গে এসআই তরিকুল ইসলামের মধ্যস্থতায় গোপনে সমঝোতা করে ট্রলিটি ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই ট্রলিটি থানার চত্বর থেকে গভীর রাতে নিয়ে যান রঘুনাথপুর গ্রামের লালটু (পিতা: মঞ্জিল)। মঞ্জিল চোর চক্রের পরিচিত সদস্য হাসানের চাচা এবং লালটু তার চাচাতো ভাই। অভিযোগে বলা হয়েছে, হাসান গাড়িটি চুরি করে এনে তার চাচা মঞ্জিলের কাছে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। বর্তমানে হাসান একটি মামলায় কারাগারে রয়েছেন। ট্রলিটি নিজের নামে বৈধভাবে নিতে স্থানীয় সাবেক মহিলা মেম্বার নাসিমা খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে থানায় দেন- দরবারে লিপ্ত হন লালটু।

নাসিমা খাতুন অভিযোগ করেন, “ওসি আমাকে থানায় ডেকে ৬০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে ৫০ হাজার টাকায় সমঝোতা হয়। এরপর ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে রাত তিনটার দিকে গাড়িটি নিয়ে যাওয়া হয়।” ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর কুষ্টিয়া জেলা
পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান তাৎক্ষণিকভাবে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) শিকদার মো. হাসান ইমামকে।

কুষ্টিয়া আদালত চত্বরে মঞ্জিলের ছেলে লাল্টুর সাথে কথা হলে, তিনি ৪৫ হাজারে পুলিশের সাথে রফা দফার বিষয়টি জানেন না। তবে ৩১ জুলাই সকালে খোকসা থানা পুলিশ তাকে পরামর্শ দিয়ে কুষ্টিয়া কোর্টে পাঠিয়েছে। গত ২৯ জুলাই গভীর রাতে থানা থেকে একটি ট্রলি নিয়ে যান, সেই ট্রলির কাগজ নিজের নামে করতে তিনি কুষ্টিয়া কোর্টে এসেছেন।

কুষ্টিয়া কোর্টের মৃত অ্যাড. নুরুল ইসলাম দুলালের মেয়ে সুবশা ইসলাম মৌ’র চেম্বারে গেলে তিনি ব্যাক ডেটে স্ট্যাম্প তৈরী করেন। ঘটনার সত্যতাও পাওয়া যায়। কোর্ট এভিডেভিড স্ট্যাম্পের নোটারী পাবলিকদাতা অ্যাড. মকছেদ আলী সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিক্রেতা আঃ রাজ্জাক মোল্লা ও ক্রেতা মঞ্জিল প্রামানিক এর বিক্রয় চুক্তি হলফনামায় তিনি ব্যাক ডেটে স্বাক্ষর করেছেন। তবে ভূলবসত করেছেন বলে জানান। ভূয়া চুক্তিনামায় ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা দেখানো হলেও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গাড়িটি পুলিশের কাছ থেকে ৪৫ হাজারে রফা দফা হয়েছে।

ব্যাক ডেটে স্ট্যাম্প তৈরির বিষয়ে মৃত অ্যাড. দুলালের কণ্যা মৌ’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনাকে কইফিয়ত
দিতে আমি বাধ্য নয়।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

রুয়ার কার্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় অধ্যাপক মহিউদ্দীনকে নওগাঁ উন্নয়ন ফোরামের সংবর্ধনা

খোকসা থানায় চোরাই ট্রলি গায়েব, ভুয়া স্ট্যাম্পে ধামাচাপা

আপডেট সময় ১২:২২:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ অগাস্ট ২০২৫

কুষ্টিয়া জেলার খোকসা থানায় প্রায় চার মাস আগে জব্দকৃত চোরাই ট্রলি রফা-দফার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বেকডেটে ভুয়া মালিকানা তৈরীর অভিযোগ উঠেছে।

গত ২৯ জুলাইখোকসার রঘুনাথপুর এলাকার মঞ্জিল ও তার পুত্র লাল্টু জব্দকৃত ট্রলিটি থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে পুলিশের সাথে রফা-দফা করেন। পরে গভীর রাতে খোকসা থানা পুলিশ ৪৫ হাজার টাকার বিনিময়ে গাড়িটি বের করে দেন।
এক পর্যায় বিষয়টি জানাজানি হলে ৩১ জুলাই সকালে খোকসা থানা পুলিশ মঞ্জিল ও লাল্টুকে থানায় নিয়ে যান এবং তাদেরকে কুষ্টিয়ায় যেয়ে ট্রলি গাড়ির ক্রেতা বিক্রেতার স্ট্যাম্প তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এদিকে খোকসা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মঈনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি জানাজানি হলে জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুরু হয়েছে তদন্ত।

জানা যায়, চার মাস আগে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খোকসা থানার পুলিশ রঘুনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা হাসান (পিতা: ওসমান)-এর বাড়ি থেকে একটি চোরাই স্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলি (টলি) উদ্ধার করে। ট্রলিটি দীর্ঘদিন থানার হেফাজতে থাকলেও গত ২৯ জুলাই (মঙ্গলবার) রাতে মাত্র ৪৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ওসি শেখ মঈনুল ইসলামের সঙ্গে এসআই তরিকুল ইসলামের মধ্যস্থতায় গোপনে সমঝোতা করে ট্রলিটি ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই ট্রলিটি থানার চত্বর থেকে গভীর রাতে নিয়ে যান রঘুনাথপুর গ্রামের লালটু (পিতা: মঞ্জিল)। মঞ্জিল চোর চক্রের পরিচিত সদস্য হাসানের চাচা এবং লালটু তার চাচাতো ভাই। অভিযোগে বলা হয়েছে, হাসান গাড়িটি চুরি করে এনে তার চাচা মঞ্জিলের কাছে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। বর্তমানে হাসান একটি মামলায় কারাগারে রয়েছেন। ট্রলিটি নিজের নামে বৈধভাবে নিতে স্থানীয় সাবেক মহিলা মেম্বার নাসিমা খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে থানায় দেন- দরবারে লিপ্ত হন লালটু।

নাসিমা খাতুন অভিযোগ করেন, “ওসি আমাকে থানায় ডেকে ৬০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে ৫০ হাজার টাকায় সমঝোতা হয়। এরপর ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে রাত তিনটার দিকে গাড়িটি নিয়ে যাওয়া হয়।” ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর কুষ্টিয়া জেলা
পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান তাৎক্ষণিকভাবে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) শিকদার মো. হাসান ইমামকে।

কুষ্টিয়া আদালত চত্বরে মঞ্জিলের ছেলে লাল্টুর সাথে কথা হলে, তিনি ৪৫ হাজারে পুলিশের সাথে রফা দফার বিষয়টি জানেন না। তবে ৩১ জুলাই সকালে খোকসা থানা পুলিশ তাকে পরামর্শ দিয়ে কুষ্টিয়া কোর্টে পাঠিয়েছে। গত ২৯ জুলাই গভীর রাতে থানা থেকে একটি ট্রলি নিয়ে যান, সেই ট্রলির কাগজ নিজের নামে করতে তিনি কুষ্টিয়া কোর্টে এসেছেন।

কুষ্টিয়া কোর্টের মৃত অ্যাড. নুরুল ইসলাম দুলালের মেয়ে সুবশা ইসলাম মৌ’র চেম্বারে গেলে তিনি ব্যাক ডেটে স্ট্যাম্প তৈরী করেন। ঘটনার সত্যতাও পাওয়া যায়। কোর্ট এভিডেভিড স্ট্যাম্পের নোটারী পাবলিকদাতা অ্যাড. মকছেদ আলী সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিক্রেতা আঃ রাজ্জাক মোল্লা ও ক্রেতা মঞ্জিল প্রামানিক এর বিক্রয় চুক্তি হলফনামায় তিনি ব্যাক ডেটে স্বাক্ষর করেছেন। তবে ভূলবসত করেছেন বলে জানান। ভূয়া চুক্তিনামায় ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা দেখানো হলেও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গাড়িটি পুলিশের কাছ থেকে ৪৫ হাজারে রফা দফা হয়েছে।

ব্যাক ডেটে স্ট্যাম্প তৈরির বিষয়ে মৃত অ্যাড. দুলালের কণ্যা মৌ’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনাকে কইফিয়ত
দিতে আমি বাধ্য নয়।