ঢাকা ০২:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ঢাকা কলেজে অনুষ্ঠিত হলো বেসিক মানবাধিকার বিষয়ক কর্মশালা Logo ছাত্রদলের সমাবেশ ঘিরে নেতাকর্মীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ৬ নির্দেশনা Logo আমীরে জামায়াতের  হার্টে ৪ ব্লক, শনিবার বাইপাস সার্জারি Logo শাহবাগ মোড়ে জুলাই যোদ্ধাদের ২ গ্রুপের সংঘর্ষ Logo আওয়ামি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠন Logo জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের বাইপাস সার্জারি আগামীকাল Logo রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করলো ভারত Logo যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঐতিহাসিক চুক্তি কূটনৈতিক বিজয়: প্রধান উপদেষ্টা Logo জকসু নিয়ে কথা বলতে গেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে জবি রেজিস্ট্রারের দূর্ব্যবহার Logo বাংলাদেশের জন্য পালটা শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র

জুলাই অভ্যুত্থানে ৯ দফার আদ্যপ্রান্ত জানালেন সাংবাদিক অন্তু মুজাহিদ

সাংবাদিক অন্তু মুজাহিদ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে আলোচনায় এসেছে ছাত্র-জনতার ৯ দফা দাবি। এই ৯ দফার ড্রাফট কিভাবে তৈরি হলো, কোন পরিস্থিতিতে কাদের হাত ধরে তা ছড়িয়ে দেওয়া হলো, সেই সব অন্তরালের গল্প তুলে ধরেছেন সাংবাদিক অন্তু মুজাহিদ।

কালবেলার সাবেক সহকর্মী ইসরাফিল ফরাজীর সঙ্গে কাঁটাবনের একটি বহুতল ভবনের রুম নম্বর ১২০৪-এ ঢুকে অন্তু মুজাহিদ দেখেন, ভেতরে বেশ কয়েকজন ছাত্র প্রতিনিধি ছোটাছুটি করছেন, কেউ ফোনে কথা বলছেন, কেউ ল্যাপটপে কিছু লিখছেন। পাশের রুমে উঁকি দিয়ে দেখা যায় ৪-৫ জন একসঙ্গে ৯ দফার ড্রাফট তৈরি করছেন। পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন, সেখানে উপস্থিত ছিলেন আবু সাদিক কায়েম, সিবগাতুল্লাহ সিবগা, মু’তাসিম বিল্লাহ শাহেদী, এস এম ফারহাদ, মোসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদসহ আরও কয়েকজন।

কারও ফোনে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে কোথায় পানি পৌঁছাতে হবে, কোথাও গুলিবিদ্ধ কেউ, কারো জন্য অ্যাম্বুলেন্স দরকার—এমন নানান সমন্বয়ের কাজ চলছিল। অন্তু মুজাহিদ নিজে তার ব্যাগে থাকা পেয়ারা কেটে দিতে বলেন, যেন কিছুটা প্রশান্তি আনে সবার মধ্যে।

৯ দফার খসড়া তৈরি হলে ইসরাফিল ফরাজী অন্তু মুজাহিদকে বলেন বানান ভুল দেখে দিতে। এরপর শুরু হয় আলোচনার পর্ব—ড্রাফট কার নামে যাবে। সিদ্ধান্ত হয় আব্দুল কাদেরের নামে তা প্রকাশ করা হবে, কারণ তিনি ‘সেফ জোনে’ আছেন। ফোনে তাকে ড্রাফট পড়ে শোনানো হয়। কিছু বিষয়ে তার মতামত নিয়ে তা সংশোধন করে চূড়ান্ত করা হয়।

তবে চ্যালেঞ্জ ছিল—এই ৯ দফা মিডিয়ায় কীভাবে পৌঁছানো হবে? এদিকে রুমে বিদ্যুৎ নেই, প্রিন্ট করতে হবে, বাইরে গুলি চলছে। তখন সিদ্ধান্ত হয়—বাটন ফোন থেকে ম্যাসেজ পাঠানো হবে, আবার প্রিন্ট করে মিডিয়াতে পাঠাতে হবে। তবে ভবনের মেইন গেট বন্ধ, বাইরে পুলিশ অ্যাকশন মুডে। বহু কষ্টে দারোয়ানকে রাজি করিয়ে তারা বের হন। কালবেলার আইডি কার্ড হাতে পুলিশকে দেখিয়ে অন্তু মুজাহিদ এবং তার সহযাত্রীরা নিরাপদে ভবন ত্যাগ করেন।

এরপর বাংলামোটরের আরেকটি অফিস থেকে ড্রাফট প্রিন্ট করে দুইটি মোটরসাইকেলে ৪ জনকে ভাগ করে মিডিয়ায় পাঠানো হয়। একটি বাইকে সময় টিভি, এনটিভি, বাংলাভিশন, এটিএন বাংলা, মানবজমিন, ইত্তেফাক, প্রথম আলোসহ বিভিন্ন মিডিয়াতে পৌঁছানো হয়। অপর বাইকে যাত্রা হয় ডিবিসি, চ্যানেল ২৪, যুগান্তর, বসুন্ধরা মিডিয়াতে।

ভবনে থাকতেই সাংবাদিকদের ফোন নম্বর তালিকা করে তাদের এসএমএস পাঠানো হয়। আবার কেউ কেউ নিশ্চিত করার জন্য ফোনেও কথা বলেন। বাংলা ভিশনের সাংবাদিক কেফায়েত শাকিলকেও জানানো হয় ৯ দফা পৌঁছেছে কিনা।

বৃষ্টির মধ্যেই ইসরাফিল ফরাজীকে সঙ্গে নিয়ে রওনা হন টিভি চ্যানেলগুলোর কার্যালয়ে। পথে পথে সংঘর্ষ, সেনা চেকপোস্ট—সব বাধা পেরিয়ে এখন টিভির সামনে পৌঁছান। মাহমুদ রাকিবের সঙ্গে কথা বলে ৯ দফা তার মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এরপর নিজের কর্মস্থল কালবেলাতে পৌঁছে সফটকপি ও হার্ডকপি তুলে দেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হাতে।

সাংবাদিক অন্তু মুজাহিদ বলেন, এই ৯ দফা তার চোখের সামনে তৈরি হয়েছে, তিনি নিজ হাতে বানান ঠিক করেছেন এবং নিজের ডিসকভার ১০০ সিসি বাইকে করে তা মিডিয়ায় পৌঁছে দিয়েছেন। এরপরও কেউ কেউ ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন, মিথ্যাচার করছেন। কিন্তু তারা চুপ করে থাকা মানে এই নয় যে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ নিয়ে তামাশা করতে দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, এই আন্দোলন শুধু ছাত্রদের নয়—মজুর, রেমিট্যান্স যোদ্ধা, কৃষক, শ্রমিক, সরকারি চাকরিজীবী, পুলিশ, সবাই যার যার জায়গা থেকে এর অংশ। তাই এই জুলাই কারও একক মালিকানায় নয়। তিনি আহ্বান জানান—জুলাইকে বেচাবিক্রি না করে, একে সম্মান আর ভালোবাসা দিক সকলে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ঢাকা কলেজে অনুষ্ঠিত হলো বেসিক মানবাধিকার বিষয়ক কর্মশালা

জুলাই অভ্যুত্থানে ৯ দফার আদ্যপ্রান্ত জানালেন সাংবাদিক অন্তু মুজাহিদ

আপডেট সময় ০৭:০৩:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ অগাস্ট ২০২৫

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে আলোচনায় এসেছে ছাত্র-জনতার ৯ দফা দাবি। এই ৯ দফার ড্রাফট কিভাবে তৈরি হলো, কোন পরিস্থিতিতে কাদের হাত ধরে তা ছড়িয়ে দেওয়া হলো, সেই সব অন্তরালের গল্প তুলে ধরেছেন সাংবাদিক অন্তু মুজাহিদ।

কালবেলার সাবেক সহকর্মী ইসরাফিল ফরাজীর সঙ্গে কাঁটাবনের একটি বহুতল ভবনের রুম নম্বর ১২০৪-এ ঢুকে অন্তু মুজাহিদ দেখেন, ভেতরে বেশ কয়েকজন ছাত্র প্রতিনিধি ছোটাছুটি করছেন, কেউ ফোনে কথা বলছেন, কেউ ল্যাপটপে কিছু লিখছেন। পাশের রুমে উঁকি দিয়ে দেখা যায় ৪-৫ জন একসঙ্গে ৯ দফার ড্রাফট তৈরি করছেন। পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন, সেখানে উপস্থিত ছিলেন আবু সাদিক কায়েম, সিবগাতুল্লাহ সিবগা, মু’তাসিম বিল্লাহ শাহেদী, এস এম ফারহাদ, মোসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদসহ আরও কয়েকজন।

কারও ফোনে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে কোথায় পানি পৌঁছাতে হবে, কোথাও গুলিবিদ্ধ কেউ, কারো জন্য অ্যাম্বুলেন্স দরকার—এমন নানান সমন্বয়ের কাজ চলছিল। অন্তু মুজাহিদ নিজে তার ব্যাগে থাকা পেয়ারা কেটে দিতে বলেন, যেন কিছুটা প্রশান্তি আনে সবার মধ্যে।

৯ দফার খসড়া তৈরি হলে ইসরাফিল ফরাজী অন্তু মুজাহিদকে বলেন বানান ভুল দেখে দিতে। এরপর শুরু হয় আলোচনার পর্ব—ড্রাফট কার নামে যাবে। সিদ্ধান্ত হয় আব্দুল কাদেরের নামে তা প্রকাশ করা হবে, কারণ তিনি ‘সেফ জোনে’ আছেন। ফোনে তাকে ড্রাফট পড়ে শোনানো হয়। কিছু বিষয়ে তার মতামত নিয়ে তা সংশোধন করে চূড়ান্ত করা হয়।

তবে চ্যালেঞ্জ ছিল—এই ৯ দফা মিডিয়ায় কীভাবে পৌঁছানো হবে? এদিকে রুমে বিদ্যুৎ নেই, প্রিন্ট করতে হবে, বাইরে গুলি চলছে। তখন সিদ্ধান্ত হয়—বাটন ফোন থেকে ম্যাসেজ পাঠানো হবে, আবার প্রিন্ট করে মিডিয়াতে পাঠাতে হবে। তবে ভবনের মেইন গেট বন্ধ, বাইরে পুলিশ অ্যাকশন মুডে। বহু কষ্টে দারোয়ানকে রাজি করিয়ে তারা বের হন। কালবেলার আইডি কার্ড হাতে পুলিশকে দেখিয়ে অন্তু মুজাহিদ এবং তার সহযাত্রীরা নিরাপদে ভবন ত্যাগ করেন।

এরপর বাংলামোটরের আরেকটি অফিস থেকে ড্রাফট প্রিন্ট করে দুইটি মোটরসাইকেলে ৪ জনকে ভাগ করে মিডিয়ায় পাঠানো হয়। একটি বাইকে সময় টিভি, এনটিভি, বাংলাভিশন, এটিএন বাংলা, মানবজমিন, ইত্তেফাক, প্রথম আলোসহ বিভিন্ন মিডিয়াতে পৌঁছানো হয়। অপর বাইকে যাত্রা হয় ডিবিসি, চ্যানেল ২৪, যুগান্তর, বসুন্ধরা মিডিয়াতে।

ভবনে থাকতেই সাংবাদিকদের ফোন নম্বর তালিকা করে তাদের এসএমএস পাঠানো হয়। আবার কেউ কেউ নিশ্চিত করার জন্য ফোনেও কথা বলেন। বাংলা ভিশনের সাংবাদিক কেফায়েত শাকিলকেও জানানো হয় ৯ দফা পৌঁছেছে কিনা।

বৃষ্টির মধ্যেই ইসরাফিল ফরাজীকে সঙ্গে নিয়ে রওনা হন টিভি চ্যানেলগুলোর কার্যালয়ে। পথে পথে সংঘর্ষ, সেনা চেকপোস্ট—সব বাধা পেরিয়ে এখন টিভির সামনে পৌঁছান। মাহমুদ রাকিবের সঙ্গে কথা বলে ৯ দফা তার মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এরপর নিজের কর্মস্থল কালবেলাতে পৌঁছে সফটকপি ও হার্ডকপি তুলে দেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হাতে।

সাংবাদিক অন্তু মুজাহিদ বলেন, এই ৯ দফা তার চোখের সামনে তৈরি হয়েছে, তিনি নিজ হাতে বানান ঠিক করেছেন এবং নিজের ডিসকভার ১০০ সিসি বাইকে করে তা মিডিয়ায় পৌঁছে দিয়েছেন। এরপরও কেউ কেউ ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন, মিথ্যাচার করছেন। কিন্তু তারা চুপ করে থাকা মানে এই নয় যে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ নিয়ে তামাশা করতে দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, এই আন্দোলন শুধু ছাত্রদের নয়—মজুর, রেমিট্যান্স যোদ্ধা, কৃষক, শ্রমিক, সরকারি চাকরিজীবী, পুলিশ, সবাই যার যার জায়গা থেকে এর অংশ। তাই এই জুলাই কারও একক মালিকানায় নয়। তিনি আহ্বান জানান—জুলাইকে বেচাবিক্রি না করে, একে সম্মান আর ভালোবাসা দিক সকলে।