ডিসেম্বরের নির্ধারিত নির্বাচনকে সামনে রেখে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বৃহস্পতিবার একটি বেসামরিক নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে নামমাত্রভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। তবে বাস্তবিক অর্থে দেশের নিয়ন্ত্রণ এখনো সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের হাতেই রয়ে গেছে, যিনি বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক ঘোষণায় জানানো হয়, ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর সামরিক বাহিনীকে যে ডিক্রির মাধ্যমে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল তা বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে গঠিত হয়েছে একটি তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসন এবং নির্বাচনের জন্য একটি বিশেষ নির্বাচন কমিশন।
এ ছড়া সরকারি মুখপাত্র জাও মিন তুন জানিয়েছেন, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে সাতবার বাড়ানো জরুরি অবস্থার মেয়াদ বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে এবং এখন তা তুলে নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান বলেছেন, সামনের ছয় মাস হলো নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতির সময়।
তবে এই পদক্ষেপের ফলে মায়ানমারে বাস্তব পরিস্থিতিতে কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। সেনা অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া মিন অং হ্লাইং এখনো ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ও সামরিক বাহিনীর প্রধান হিসেবে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন।
২০২১ সালে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে মায়ানমার গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
সামরিক বাহিনী দেশজুড়ে বিদ্রোহ দমনে লড়াই করছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে, যদিও তারা তা অস্বীকার করে। এদিকে পশ্চিমা দেশগুলো আসন্ন নির্বাচনকে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার কৌশল হিসেবে ‘প্রহসন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই নির্বাচনে সেনা সমর্থিত দলগুলোর আধিপত্য থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ বিরোধী দলগুলো হয় নিষিদ্ধ, নয়তো অংশগ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
মায়ানমারবিষয়ক বিশ্লেষক ডেভিড ম্যাথিসন বলেছেন, এই ক্ষমতা হস্তান্তর কেবলমাত্র কাগজে-কলমে এবং প্রকৃতপক্ষে নিপীড়ন ও দমন চালিয়ে যাওয়া শাসকগোষ্ঠীই ক্ষমতায় থাকবে। তিনি আরো বলেন, ‘এটা কেবল পুরোনো গুটিগুলো নতুনভাবে সাজিয়ে, পুরোনো শাসনকে নতুন নামে ডাকা। অদূর ভবিষ্যতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। তবে এটা সেই নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ, যেটা সম্পর্কে এখনো পরিষ্কার কিছু জানা যায় না।’