ঢাকা ১২:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫, ১১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo হিজাব পরায় ছাত্রীদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ, শিক্ষিকা বরখাস্ত Logo পাঁচ মাসে ১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে বাংলাদেশ: বিডা Logo বুধবার থেকে ভারতের পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ, নোটিশ জারি করল যুক্তরাষ্ট্র Logo প্রকৌশলী রোকন হত্যার হুমকির প্রতিবাদে রুয়েটিয়ানদের স্মারকলিপি প্রদান ও আল্টিমেটাম Logo আমি বিবাহিত, সেটা ফেসবুকে প্রমাণ করার কিছু নেই: অপু বিশ্বাস Logo বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শরিফুল হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল Logo আইআইইউসিতে ক্লাসরুম সংকট নিরসন, ল্যাব স্থাপন সহ ৭ দফা দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্বারক লিপি প্রদান Logo ৪০ দেশের প্রতিনিধি দলের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন Logo ফজলুর রহমানের দলীয় পদ ৩ মাসের জন্য স্থগিত করলো বিএনপি Logo শোকজের জবাবে যা লিখলেন ফজলুর রহমান
ফিরে দেখা জুলাই

দেশ থেকে পালিয়েছে হাসিনা—কারাগারে মিষ্টি বিক্রেতার মুখে খবর, বাঁধে উল্লাস – উদযাপন

গত বছরের , ২০২৪ সালের ২৮ জুলাই গভীর রাতে রাজধানীর তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী তাওহীদ ইবনুল বদর সাফওয়ানকে তার গুলশানের বাসা থেকে তুলে নেয় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল। সাফওয়ানের ভাষ্য অনুযায়ী, রাত সাড়ে এগারোটার দিকে অন্তত ৩০ জন ডিবি কর্মকর্তা বাসায় হানা দিয়ে দীর্ঘ প্রায় দুই ঘণ্টা তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ চালান। আলোচিত জুলাইয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সময়কার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাফওয়ানের সক্রিয়তা তখন খতিয়ে দেখেন ডিবির সদস্যরা।

সাফওয়ান জানায়, রাত দেড়টার দিকে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই সাফওয়ানকে তার বাসা থেকে মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর দীর্ঘ ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত তাকে ‘নিখোঁজ’বা কার্যত গুম করে রাখা হয়। অবশেষে ৩০ জুলাই সেতু ভবনে হামলার অভিযোগে একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয় এবং ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয় সাফওয়ানকে। তখনকার রিমান্ডের বিষয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, “রিমান্ডের চারটি দিন ছিল ভয়ংকর। এমন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে, যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।”

তিনি আরও বলেন, “সেতু ভবনের ঘটনাস্থল ছিল মহাখালী, অথচ ওই সময় আমি বৈষম্য বিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সময় আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম শাহবাগ, বাড্ডা আর উত্তরা বিএনএস এলাকাতেই। মিথ্যা মামলারও একটা সীমা থাকা উচিত ছিল।”

কারাগারে ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট) একটি ব্যতিক্রমী ঘটনার কথা জানান সাফওয়ান। তার ভাষায়, “দুপুরে মিষ্টিওয়ালার কাছ থেকে মিষ্টি কিনতে গিয়েছিলাম, মিষ্টি বিক্রেতা জানালেন, ‘হাসিনা পালিয়ে গেছে দেশ থেকে।’ এরপর পুরো কারাগারে গান বাজিয়ে উদযাপন শুরু হয়। যেন এক নতুন স্বাধীনতার স্পর্শ। সারা রাত কারাগারের ভেতরে গান বাজনা চলে আনন্দ উল্লাস চলেছিলো।

পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও জুলাই মামলার অন্যান্য ছাত্রদের মুক্তি দেওয়া হয়। সাফওয়ান মুক্তি পান ৬ আগস্ট। মুক্তিকামী মানুষের আনন্দ দেখে তখন রিমান্ডের ভয়াবহ স্মৃতিগুলো কিছুটা মুছে যেতে শুরু করে।

তাওহীদ ইবনুল বদর সাফওয়ান ছিলেন ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সামনের সারির একজন সংগঠক। সরকারের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষা, চাকরি ও মৌলিক অধিকার নিয়ে ছাত্রদের ক্ষোভ থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন দমন করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় ও নিপীড়নের অভিযোগ উঠে। সাফওয়ানের অভিজ্ঞতা তারই একটি উদাহরণ। এক বছরের মাথায় আজও এসব ঘটনার বিচার বা তদন্ত হয়নি।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

হিজাব পরায় ছাত্রীদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ, শিক্ষিকা বরখাস্ত

ফিরে দেখা জুলাই

দেশ থেকে পালিয়েছে হাসিনা—কারাগারে মিষ্টি বিক্রেতার মুখে খবর, বাঁধে উল্লাস – উদযাপন

আপডেট সময় ১১:৫২:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫

গত বছরের , ২০২৪ সালের ২৮ জুলাই গভীর রাতে রাজধানীর তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী তাওহীদ ইবনুল বদর সাফওয়ানকে তার গুলশানের বাসা থেকে তুলে নেয় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল। সাফওয়ানের ভাষ্য অনুযায়ী, রাত সাড়ে এগারোটার দিকে অন্তত ৩০ জন ডিবি কর্মকর্তা বাসায় হানা দিয়ে দীর্ঘ প্রায় দুই ঘণ্টা তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ চালান। আলোচিত জুলাইয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সময়কার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাফওয়ানের সক্রিয়তা তখন খতিয়ে দেখেন ডিবির সদস্যরা।

সাফওয়ান জানায়, রাত দেড়টার দিকে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই সাফওয়ানকে তার বাসা থেকে মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর দীর্ঘ ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত তাকে ‘নিখোঁজ’বা কার্যত গুম করে রাখা হয়। অবশেষে ৩০ জুলাই সেতু ভবনে হামলার অভিযোগে একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয় এবং ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয় সাফওয়ানকে। তখনকার রিমান্ডের বিষয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, “রিমান্ডের চারটি দিন ছিল ভয়ংকর। এমন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে, যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।”

তিনি আরও বলেন, “সেতু ভবনের ঘটনাস্থল ছিল মহাখালী, অথচ ওই সময় আমি বৈষম্য বিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সময় আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম শাহবাগ, বাড্ডা আর উত্তরা বিএনএস এলাকাতেই। মিথ্যা মামলারও একটা সীমা থাকা উচিত ছিল।”

কারাগারে ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট) একটি ব্যতিক্রমী ঘটনার কথা জানান সাফওয়ান। তার ভাষায়, “দুপুরে মিষ্টিওয়ালার কাছ থেকে মিষ্টি কিনতে গিয়েছিলাম, মিষ্টি বিক্রেতা জানালেন, ‘হাসিনা পালিয়ে গেছে দেশ থেকে।’ এরপর পুরো কারাগারে গান বাজিয়ে উদযাপন শুরু হয়। যেন এক নতুন স্বাধীনতার স্পর্শ। সারা রাত কারাগারের ভেতরে গান বাজনা চলে আনন্দ উল্লাস চলেছিলো।

পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও জুলাই মামলার অন্যান্য ছাত্রদের মুক্তি দেওয়া হয়। সাফওয়ান মুক্তি পান ৬ আগস্ট। মুক্তিকামী মানুষের আনন্দ দেখে তখন রিমান্ডের ভয়াবহ স্মৃতিগুলো কিছুটা মুছে যেতে শুরু করে।

তাওহীদ ইবনুল বদর সাফওয়ান ছিলেন ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সামনের সারির একজন সংগঠক। সরকারের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষা, চাকরি ও মৌলিক অধিকার নিয়ে ছাত্রদের ক্ষোভ থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন দমন করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় ও নিপীড়নের অভিযোগ উঠে। সাফওয়ানের অভিজ্ঞতা তারই একটি উদাহরণ। এক বছরের মাথায় আজও এসব ঘটনার বিচার বা তদন্ত হয়নি।