ঢাকা ০১:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo গাজাকে নিশ্চিহ্ন করার কোনো ন্যায্যতা থাকতে পারে না: গুতেরেস Logo বিএনপি কর্মীকে হত্যা মামলায় কুষ্টিয়ার সাবেক এসপি তানভীর আরাফাত গ্রেপ্তার Logo মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনার সময় ভবনে ছিল ৫৯০ শিক্ষার্থী: অধ্যক্ষ Logo যান্ত্রিক ত্রুটিতে মাঝ আকাশ থেকে দাম্মামগামী বিমান ফিরলো ঢাকায় Logo খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি: ডা. জাহিদ Logo বৈষম্যবিরোধী নেতার অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে কোনো বাধা নেই: দুদক Logo জাতীয় নির্বাচন ঘিরে আগস্ট থেকে পুলিশের প্রশিক্ষণ শুরু: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Logo বিএমডিএ রাজশাহীর কার্যালয়ে রুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ; তিন দফা দাবি উত্থাপন Logo জামায়াতের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি অভিযোগ তুলে মিছিল, রাতেই ডাকাতি করে আটক যুবদল নেতা Logo সর্বশক্তি দিয়ে আমাদের মাটি থেকে সন্ত্রাসীদের উচ্ছেদ করবো: প্রধান উপদেষ্টা

১১ বছরেও শেষ হয়নি তিস্তা সেতুর কাজ, চতুর্থবারের মতো পিছালো উদ্বোধন

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে হরিপুর-চিলমারী তিস্তা সেতুর উদ্বোধন তারিখ আবারও পিছিয়ে ২৫ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি ১১ বছরের নির্মাণকালে চতুর্থবারের মতো উদ্বোধন বিলম্ব। গত ১৩ জুলাই মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ শামীম বেপারীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে ২ আগস্ট উদ্বোধন নিশ্চিত করা হয়েছিল। কিন্তু মাত্র দুই সপ্তাহের মাথায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী তপন কুমার চক্রবর্তী নতুন তারিখ ঘোষণা করেন।

জানা গেছে, বিলম্বের কারণ এখনও অস্পষ্ট। মন্ত্রণালয় এখনও কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি, যদিও গত ৪ জুলাই স্থানীয় সরকার সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী সরেজমিন পরিদর্শন শেষে জুলাই মাসেই উদ্বোধনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এই অসংগতি নিয়ে গাইবান্ধা-কুড়িগ্রামের স্থানীয় নেতা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোজাহারুল ইসলাম প্রশ্ন তোলেন, ‘এভাবে বারবার তারিখ পেছানোর অর্থ কী? সচিব থেকে উপসচিব কেউ নিজেদের কথার মর্যাদা রাখলেন না। ২৫ আগস্টও যে উদ্বোধন হবে, তার নিশ্চয়তা কী?’

এসএএস-এর নির্বাহী পরিচালক এ বি এম নূরুল আকতার মঞ্জুর মতে, ২০১৪ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর থেকে চার বার উদ্বোধন তারিখ পিছিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রথমে ২০১৮, পরে ২০২১, এরপর ২০২৪ এবং সর্বশেষ ২০২৫ সালের জুলাই-আগস্টে উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল।

তিস্তা নদীর উপরে ১,৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৭৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, যার অর্থায়ন করছে সৌদি ডেভেলপমেন্ট ফান্ড। চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে চলা প্রকল্পটি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের চিলমারীকে সংযুক্ত করবে, যা কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার দূরত্ব ১৩৫ কিলোমিটার কমিয়ে আনবে।

তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন আন্দোলনের নেতা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আ.ব.ম শরীয়তুল্লাহ মাস্টার স্মরণ করিয়ে দেন, ২০০০ সাল থেকে এই সেতুর দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০২০ সালের ৬ জুলাই একনেক প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধিত অনুমোদন দেয়।

সেতুটি চালু হলে তিস্তার চরাঞ্চলের ৫০টিরও বেশি গ্রামের মানুষ সরাসরি সড়কপথে যাতায়াত করতে পারবেন, কৃষিপণ্য বিপণন সহজ হবে, এবং নদীভাঙনের সময় জরুরি সেবা নিশ্চিত হবে। কিন্তু ক্রমাগত বিলম্বে দুই জেলার ২০ লাখ মানুষ হতাশা প্রকাশ করছেন। স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, অনির্দিষ্টকালীন এই দেরি উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করবে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সংযোগ সড়ক ও বিদ্যুতায়নের কাজ শেষ না হওয়ায় উদ্বোধন পিছিয়েছে। তবে স্থানীয়রা দাবি করছেন, দীর্ঘ ১১ বছর পরও কাজ শেষ না হওয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্তদের ব্যর্থতা স্পষ্ট।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

গাজাকে নিশ্চিহ্ন করার কোনো ন্যায্যতা থাকতে পারে না: গুতেরেস

১১ বছরেও শেষ হয়নি তিস্তা সেতুর কাজ, চতুর্থবারের মতো পিছালো উদ্বোধন

আপডেট সময় ০৭:০০:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে হরিপুর-চিলমারী তিস্তা সেতুর উদ্বোধন তারিখ আবারও পিছিয়ে ২৫ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি ১১ বছরের নির্মাণকালে চতুর্থবারের মতো উদ্বোধন বিলম্ব। গত ১৩ জুলাই মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ শামীম বেপারীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে ২ আগস্ট উদ্বোধন নিশ্চিত করা হয়েছিল। কিন্তু মাত্র দুই সপ্তাহের মাথায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী তপন কুমার চক্রবর্তী নতুন তারিখ ঘোষণা করেন।

জানা গেছে, বিলম্বের কারণ এখনও অস্পষ্ট। মন্ত্রণালয় এখনও কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি, যদিও গত ৪ জুলাই স্থানীয় সরকার সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী সরেজমিন পরিদর্শন শেষে জুলাই মাসেই উদ্বোধনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এই অসংগতি নিয়ে গাইবান্ধা-কুড়িগ্রামের স্থানীয় নেতা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোজাহারুল ইসলাম প্রশ্ন তোলেন, ‘এভাবে বারবার তারিখ পেছানোর অর্থ কী? সচিব থেকে উপসচিব কেউ নিজেদের কথার মর্যাদা রাখলেন না। ২৫ আগস্টও যে উদ্বোধন হবে, তার নিশ্চয়তা কী?’

এসএএস-এর নির্বাহী পরিচালক এ বি এম নূরুল আকতার মঞ্জুর মতে, ২০১৪ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর থেকে চার বার উদ্বোধন তারিখ পিছিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রথমে ২০১৮, পরে ২০২১, এরপর ২০২৪ এবং সর্বশেষ ২০২৫ সালের জুলাই-আগস্টে উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল।

তিস্তা নদীর উপরে ১,৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৭৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, যার অর্থায়ন করছে সৌদি ডেভেলপমেন্ট ফান্ড। চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে চলা প্রকল্পটি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের চিলমারীকে সংযুক্ত করবে, যা কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার দূরত্ব ১৩৫ কিলোমিটার কমিয়ে আনবে।

তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন আন্দোলনের নেতা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আ.ব.ম শরীয়তুল্লাহ মাস্টার স্মরণ করিয়ে দেন, ২০০০ সাল থেকে এই সেতুর দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০২০ সালের ৬ জুলাই একনেক প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধিত অনুমোদন দেয়।

সেতুটি চালু হলে তিস্তার চরাঞ্চলের ৫০টিরও বেশি গ্রামের মানুষ সরাসরি সড়কপথে যাতায়াত করতে পারবেন, কৃষিপণ্য বিপণন সহজ হবে, এবং নদীভাঙনের সময় জরুরি সেবা নিশ্চিত হবে। কিন্তু ক্রমাগত বিলম্বে দুই জেলার ২০ লাখ মানুষ হতাশা প্রকাশ করছেন। স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, অনির্দিষ্টকালীন এই দেরি উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করবে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সংযোগ সড়ক ও বিদ্যুতায়নের কাজ শেষ না হওয়ায় উদ্বোধন পিছিয়েছে। তবে স্থানীয়রা দাবি করছেন, দীর্ঘ ১১ বছর পরও কাজ শেষ না হওয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্তদের ব্যর্থতা স্পষ্ট।