ঢাকা ০২:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ডিপ্লোম্যাটিক ক্যারিয়ার ; বৈশ্বিক নেতৃত্বের যাত্রা- মুশিউর রহমান নাদিব Logo বাংলাদেশ মাদরাসা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন Logo আইকনিক মসজিদ নির্মাণে ২৪৪ কোটি টাকা দেবে সৌদি সরকার Logo বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর জন্য ক্ষমা চাইলেন এনসিপির মাহিন Logo জামায়াত নেতার প্রশংসা করে যা বললেন পরিবেশ উপদেষ্টা Logo ঢাকাস্থ হাতিয়া ফোরাম এর নতুন কমিটি ঘোষণা Logo জবিতে ‘জুলাই বিপ্লব ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত Logo হরিরামপুরে বর্ষা মৌসুমেও পানিশূন্যতায় ইছামতী নদী Logo জুলাই সনদের খসড়া কালকের মধ্যে দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে: আলী রীয়াজ Logo ৬ তলা থেকে পড়ে স্কুলছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু

ডিপ্লোম্যাটিক ক্যারিয়ার ; বৈশ্বিক নেতৃত্বের যাত্রা- মুশিউর রহমান নাদিব

ডিপ্লোম্যাটিক ক্যারিয়ার ; বৈশ্বিক নেতৃত্বের যাত্রা

মুশিউর রহমান নাদিব

১৯১৪ সালের গ্রীষ্মে, ইউরোপ আগুনের মুখে দাঁড়িয়ে ছিল। অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির যুবরাজ ফ্রান্স ফার্দিনান্দের হত্যাকাণ্ডের পর যুদ্ধের গন্ধ পুরো মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কি জানেন? যুদ্ধের আগুন এমনকি এক ছোট হারানো চিঠিরও ফল হতে পারত। একটি গোপন কূটনৈতিক বার্তা ছিল, যা বিশ্বযুদ্ধ এড়াতে পারে। সেই চিঠিতে শান্তি বজায় রাখার জন্য অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি অন্য শক্তিগুলোর কাছে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু রহস্যময় কারণে, চিঠিটি কখনো গন্তব্যে পৌঁছায়নি। কোথাও ভ্রান্ত পথে হারিয়ে গিয়েছিল, কিংবা কারো ইচ্ছাকৃত ষড়যন্ত্রে আটকে পড়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে ইউরোপ অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে, আর কোটি কোটি মানুষের জীবন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়।

১৯৩৯ সালের আগস্টে, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিকারক দুই শাসক—নাৎসি জার্মানি ও সোভিয়েত ইউনিয়ন—হঠাৎ করেই এক মঞ্চে দাঁড়ায়। এক অ আক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা দেখে সবাই হতবাক। দুই শত্রু পক্ষ কিভাবে একসাথে বসল? এই প্রশ্ন আজও ইতিহাসবিদদের কৌতূহল জাগায়। চুক্তির গোপন প্রটোকলে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো ভাগাভাগির সুক্ষ্ম পরিকল্পনা ছিল, যা ভবিষ্যতের যুদ্ধের রূপরেখা ঠিক করেছিল। পোল্যান্ড, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া—সবাই যেন কুটিল কৌশলে খেলার পিয়ন হয়ে যায়।

১৯৬২ সালের অক্টোবর মাসে, পৃথিবী যেন এক পদক্ষেপ দূরে দাঁড়িয়েছিল সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক পারমাণবিক যুদ্ধের থেকে। কিউবা দ্বীপে সোভিয়েত পারমাণবিক মিসাইলের গোপন স্থাপনা আবিষ্কার করল আমেরিকা। দুই সুপারপাওয়ার — আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন—র মধ্যে উত্তেজনা আকাশ ছুঁইছুঁই করে। তবে এই সংকট রহস্যময় আর নাটকীয় কূটনৈতিক চ্যানেল ও গোপন আলোচনার মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত বন্ধন খোঁজে। সোভিয়েত নেতা নিকিতা খ্রুশ্চেভ মিসাইল সরানোর ঘোষণা দিলেন, এবং আমেরিকা গোপনে তুর্কির মিসাইল সরানোর প্রতিশ্রুতি দিলো।

এই তিনটি ঘটনা—হারানো একটি চিঠি, শত্রুদের অপ্রত্যাশিত জোট, আর পারমাণবিক আগুনের মুখে বেঁচে যাওয়া বিশ্ব—সবাই একসাথে প্রমাণ করে কূটনীতির জগত কতটা রহস্যময় ও গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধ ঠেকানো কিংবা যুদ্ধের শুরু, দুটো ক্ষেত্রেই কূটনীতি নিঃসন্দেহে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। এই ইতিহাসের ছায়া আমাদের শেখায় যে, কূটনীতির প্রতিটি পদক্ষেপে সচেতনতা, সতর্কতা এবং কৌশল অপরিহার্য। কারণ কখনো কখনো একটি ছোটো ভুল বা সিদ্ধান্ত পৃথিবীর ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে।

এই কূটনীতিই বিশ্বব্যবস্থাকে এবং বিশ্ব রাজনীতিকে পরিচালনা করে। এখন তুমি যদি এই বিশ্ব ব্যবস্থা পরিচালনার অংশ হতে চাও কিংবা বিশ্বকে লিড করতে চাও তাহলে কূটনীতিবিদ হতে পারে তোমার জন্য অন্যতম সেরা চয়েস। ডিপ্লোমেসি হল কথা ও কৌশলের মাধ্যমে দ্বন্দ্ব না করে সমস্যার সমাধান করা এবং ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা।
ডিপ্লোমেসির মূল উদ্দেশ্য:
১. আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।
২. দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তোলা।
৩. বাণিজ্য, নিরাপত্তা, শিক্ষা, সংস্কৃতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানো।
৪. যুদ্ধ বা সংঘাত এড়িয়ে সমঝোতার পথ খোঁজা।

যদি তুমি সত্যিই কূটনীতিবিদ হতে চাও। তাহলে তোমার মধ্যে অবশ্যই কতিপয় গুণাবলী থাকতে হবে কিংবা সময়ের ব্যবধানে সেগুলো অর্জন করে নিতে হবে। একজন কূটনীতিবিদের প্রয়োজনীয় গুণাবলী:
১. যোগাযোগ দক্ষতা (Communication Skills)
• স্পষ্টভাবে কথা বলা ও লেখা।
• শ্রবণের ক্ষমতা।
• শান্ত ও কৌশলীভাবে মত প্রকাশ করতে পারা।২. বুদ্ধিমত্তা ও কৌশলী চিন্তাভাবনা (Strategic Thinking)
• সমস্যার গভীরে পৌঁছানো।
• পরিস্থিতির মূল্যায়ন করে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া।৩. আন্তর্জাতিক জ্ঞান (Global Awareness)
• বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, রাজনীতি, ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান থাকা।
• আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নীতিমালা সম্পর্কে বোঝাপড়া।
৪. আচার-আচরণ ও ভদ্রতা (Etiquette & Courtesy)
• পেশাদার আচরণ।
• সৌজন্যপূর্ণ মনোভাব।
• কূটনৈতিক শিষ্টাচার জানা।
৫. ধৈর্য ও সহনশীলতা (Patience & Tolerance)
• বিভিন্ন ধরনের মানুষ ও মতের সাথে ধৈর্য ধরে চলা।
• চাপের মধ্যে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা।
৬. সমস্যা সমাধানের দক্ষতা (Problem-Solving Skills)
•জটিল ও স্পর্শকাতর সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা।
৭. ভাষাজ্ঞান (Language Skills)
•ইংরেজি ছাড়াও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ভাষায় দক্ষতা (যেমন: ফ্রেঞ্চ, আরবি, চাইনিজ) থাকলে অতিরিক্ত সুবিধা।
৮. নৈতিকতা ও বিশ্বস্ততা (Integrity & Confidentiality)
•গোপনীয় তথ্য রক্ষা করা।
•দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া।

আপনাকে কূটনীতিবিদ হতে হলে একাডেমিক ক্যারিয়ার যাত্রা টা কে ঠিক সেভাবে সাজাতে হবে। কূটনীতিবিদ হওয়ার জন্য একাডেমিক ক্যারিয়ারে এই বিষয়গুলোর যেকোনো একটি বা মিল রেখে পড়া উপযুক্ত –
• আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (International Relations)
• রাষ্ট্রবিজ্ঞান (Political Science)
• আইন (Law)
• অর্থনীতি (Economics)
• ইতিহাস বা সমাজবিজ্ঞান (History / Sociology)
• ভাষা ও অনুবাদ (বিশেষত ইংরেজি ও অন্য আন্তর্জাতিক ভাষা)
টিপস: অনার্স/ব্যাচেলর পর্যায়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বেছে নেওয়া ভালো।

বাংলাদেশের জন্য হলে বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডার একমাত্র পথ। সেক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। অথবা দেশের বাহিরে হলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা , আঞ্চলিক সংস্থা কিংবা একাধিক বিদেশি সংস্থার মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারে। বিদেশের ক্ষেত্রে আপনাকে এগিয়ে রাখবে আপনার গবেষণা , আন্তর্জাতিক সেমিনার অংশগ্রহণ, ভাষাগত দক্ষতা , বিশ্লেষণে দক্ষতা এবং লেখালেখির দক্ষতা ইত্যাদি।

এবার যদি নির্দিষ্ট করে চাকরির ক্ষেত্রে গুলো বলি তাহলে আপনার জন্য রয়েছে সুবিশাল সুযোগ। যেমন:-
১. সরকারি কূটনৈতিক চাকরি (Public Diplomacy) :
• পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (Ministry of Foreign Affairs – MOFA)।
• বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডার (BCS Foreign Affairs Cadre)।
• দেশের বিভিন্ন দূতাবাস ও হাইকমিশনে পোস্টিং।
• প্রটোকল অফিসার, দূতাবাস অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, দূতাবাস অনুবাদক।

২. আন্তর্জাতিক সংস্থা (International Organizations):
• জাতিসংঘ (UN) – UNDP, UNESCO, UNICEF, UNHCR।
• ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (EU)।
• OIC (Organisation of Islamic Cooperation)।
• SAARC, ASEAN, AU (African Union) ইত্যাদি।
• World Bank, IMF, WTO, International Court of Justice (ICJ)।

৩. আন্তর্জাতিক এনজিও ও থিংক ট্যাঙ্ক (NGOs & Think Tanks):
• Amnesty International
• International Crisis Group
• Human Rights Watch
• BRAC International
• The Asia Foundation
• Diplomatic think tanks like Chatham House, Carnegie Endowment, etc.

৪. শিক্ষা ও গবেষণা (Academia & Research)
• আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বা রাজনীতি বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা।
• গবেষণা সংস্থা ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক গবেষক।
• পলিসি অ্যানালিস্ট বা পলিসি অ্যাডভাইজার।

৫. পাবলিক ডিপ্লোমেসি ও মিডিয়া:
• আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সাংবাদিকতা বা বিশ্লেষক।
• মিডিয়া হাউজে আন্তর্জাতিক রিপোর্টার বা ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্ট।
• আন্তর্জাতিক প্রচার ও ব্র্যান্ডিং সংস্থা (Public Affairs Officer)।

৬. প্রাইভেট কোম্পানি ও মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেশন (MNCs):
• আন্তর্জাতিক লিয়াজোঁ অফিসার (International Liaison Officer)।
• গ্লোবাল স্ট্রাটেজি, আন্তর্জাতিক নীতি, বা সরকার সম্পর্ক বিভাগে চাকরি।

যদি হতে চাও কূটনীতিবিদ তাহলে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে বিশ্ব নেতৃত্বের এক নতুন জগৎ। সেই জগতের রাজা হতে আজ থেকে শুরু হোক প্রস্তুতি যাত্রা। এক বিশ্ব নেতৃত্বের।।

 

লেখক: শিক্ষার্থী এবং প্রাবন্ধিক

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ডিপ্লোম্যাটিক ক্যারিয়ার ; বৈশ্বিক নেতৃত্বের যাত্রা- মুশিউর রহমান নাদিব

ডিপ্লোম্যাটিক ক্যারিয়ার ; বৈশ্বিক নেতৃত্বের যাত্রা- মুশিউর রহমান নাদিব

আপডেট সময় ১১:৫৪:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

ডিপ্লোম্যাটিক ক্যারিয়ার ; বৈশ্বিক নেতৃত্বের যাত্রা

মুশিউর রহমান নাদিব

১৯১৪ সালের গ্রীষ্মে, ইউরোপ আগুনের মুখে দাঁড়িয়ে ছিল। অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির যুবরাজ ফ্রান্স ফার্দিনান্দের হত্যাকাণ্ডের পর যুদ্ধের গন্ধ পুরো মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কি জানেন? যুদ্ধের আগুন এমনকি এক ছোট হারানো চিঠিরও ফল হতে পারত। একটি গোপন কূটনৈতিক বার্তা ছিল, যা বিশ্বযুদ্ধ এড়াতে পারে। সেই চিঠিতে শান্তি বজায় রাখার জন্য অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি অন্য শক্তিগুলোর কাছে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু রহস্যময় কারণে, চিঠিটি কখনো গন্তব্যে পৌঁছায়নি। কোথাও ভ্রান্ত পথে হারিয়ে গিয়েছিল, কিংবা কারো ইচ্ছাকৃত ষড়যন্ত্রে আটকে পড়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে ইউরোপ অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে, আর কোটি কোটি মানুষের জীবন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়।

১৯৩৯ সালের আগস্টে, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিকারক দুই শাসক—নাৎসি জার্মানি ও সোভিয়েত ইউনিয়ন—হঠাৎ করেই এক মঞ্চে দাঁড়ায়। এক অ আক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা দেখে সবাই হতবাক। দুই শত্রু পক্ষ কিভাবে একসাথে বসল? এই প্রশ্ন আজও ইতিহাসবিদদের কৌতূহল জাগায়। চুক্তির গোপন প্রটোকলে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো ভাগাভাগির সুক্ষ্ম পরিকল্পনা ছিল, যা ভবিষ্যতের যুদ্ধের রূপরেখা ঠিক করেছিল। পোল্যান্ড, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া—সবাই যেন কুটিল কৌশলে খেলার পিয়ন হয়ে যায়।

১৯৬২ সালের অক্টোবর মাসে, পৃথিবী যেন এক পদক্ষেপ দূরে দাঁড়িয়েছিল সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক পারমাণবিক যুদ্ধের থেকে। কিউবা দ্বীপে সোভিয়েত পারমাণবিক মিসাইলের গোপন স্থাপনা আবিষ্কার করল আমেরিকা। দুই সুপারপাওয়ার — আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন—র মধ্যে উত্তেজনা আকাশ ছুঁইছুঁই করে। তবে এই সংকট রহস্যময় আর নাটকীয় কূটনৈতিক চ্যানেল ও গোপন আলোচনার মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত বন্ধন খোঁজে। সোভিয়েত নেতা নিকিতা খ্রুশ্চেভ মিসাইল সরানোর ঘোষণা দিলেন, এবং আমেরিকা গোপনে তুর্কির মিসাইল সরানোর প্রতিশ্রুতি দিলো।

এই তিনটি ঘটনা—হারানো একটি চিঠি, শত্রুদের অপ্রত্যাশিত জোট, আর পারমাণবিক আগুনের মুখে বেঁচে যাওয়া বিশ্ব—সবাই একসাথে প্রমাণ করে কূটনীতির জগত কতটা রহস্যময় ও গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধ ঠেকানো কিংবা যুদ্ধের শুরু, দুটো ক্ষেত্রেই কূটনীতি নিঃসন্দেহে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। এই ইতিহাসের ছায়া আমাদের শেখায় যে, কূটনীতির প্রতিটি পদক্ষেপে সচেতনতা, সতর্কতা এবং কৌশল অপরিহার্য। কারণ কখনো কখনো একটি ছোটো ভুল বা সিদ্ধান্ত পৃথিবীর ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে।

এই কূটনীতিই বিশ্বব্যবস্থাকে এবং বিশ্ব রাজনীতিকে পরিচালনা করে। এখন তুমি যদি এই বিশ্ব ব্যবস্থা পরিচালনার অংশ হতে চাও কিংবা বিশ্বকে লিড করতে চাও তাহলে কূটনীতিবিদ হতে পারে তোমার জন্য অন্যতম সেরা চয়েস। ডিপ্লোমেসি হল কথা ও কৌশলের মাধ্যমে দ্বন্দ্ব না করে সমস্যার সমাধান করা এবং ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা।
ডিপ্লোমেসির মূল উদ্দেশ্য:
১. আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।
২. দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তোলা।
৩. বাণিজ্য, নিরাপত্তা, শিক্ষা, সংস্কৃতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানো।
৪. যুদ্ধ বা সংঘাত এড়িয়ে সমঝোতার পথ খোঁজা।

যদি তুমি সত্যিই কূটনীতিবিদ হতে চাও। তাহলে তোমার মধ্যে অবশ্যই কতিপয় গুণাবলী থাকতে হবে কিংবা সময়ের ব্যবধানে সেগুলো অর্জন করে নিতে হবে। একজন কূটনীতিবিদের প্রয়োজনীয় গুণাবলী:
১. যোগাযোগ দক্ষতা (Communication Skills)
• স্পষ্টভাবে কথা বলা ও লেখা।
• শ্রবণের ক্ষমতা।
• শান্ত ও কৌশলীভাবে মত প্রকাশ করতে পারা।২. বুদ্ধিমত্তা ও কৌশলী চিন্তাভাবনা (Strategic Thinking)
• সমস্যার গভীরে পৌঁছানো।
• পরিস্থিতির মূল্যায়ন করে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া।৩. আন্তর্জাতিক জ্ঞান (Global Awareness)
• বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, রাজনীতি, ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান থাকা।
• আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নীতিমালা সম্পর্কে বোঝাপড়া।
৪. আচার-আচরণ ও ভদ্রতা (Etiquette & Courtesy)
• পেশাদার আচরণ।
• সৌজন্যপূর্ণ মনোভাব।
• কূটনৈতিক শিষ্টাচার জানা।
৫. ধৈর্য ও সহনশীলতা (Patience & Tolerance)
• বিভিন্ন ধরনের মানুষ ও মতের সাথে ধৈর্য ধরে চলা।
• চাপের মধ্যে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা।
৬. সমস্যা সমাধানের দক্ষতা (Problem-Solving Skills)
•জটিল ও স্পর্শকাতর সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা।
৭. ভাষাজ্ঞান (Language Skills)
•ইংরেজি ছাড়াও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ভাষায় দক্ষতা (যেমন: ফ্রেঞ্চ, আরবি, চাইনিজ) থাকলে অতিরিক্ত সুবিধা।
৮. নৈতিকতা ও বিশ্বস্ততা (Integrity & Confidentiality)
•গোপনীয় তথ্য রক্ষা করা।
•দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া।

আপনাকে কূটনীতিবিদ হতে হলে একাডেমিক ক্যারিয়ার যাত্রা টা কে ঠিক সেভাবে সাজাতে হবে। কূটনীতিবিদ হওয়ার জন্য একাডেমিক ক্যারিয়ারে এই বিষয়গুলোর যেকোনো একটি বা মিল রেখে পড়া উপযুক্ত –
• আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (International Relations)
• রাষ্ট্রবিজ্ঞান (Political Science)
• আইন (Law)
• অর্থনীতি (Economics)
• ইতিহাস বা সমাজবিজ্ঞান (History / Sociology)
• ভাষা ও অনুবাদ (বিশেষত ইংরেজি ও অন্য আন্তর্জাতিক ভাষা)
টিপস: অনার্স/ব্যাচেলর পর্যায়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বেছে নেওয়া ভালো।

বাংলাদেশের জন্য হলে বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডার একমাত্র পথ। সেক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। অথবা দেশের বাহিরে হলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা , আঞ্চলিক সংস্থা কিংবা একাধিক বিদেশি সংস্থার মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারে। বিদেশের ক্ষেত্রে আপনাকে এগিয়ে রাখবে আপনার গবেষণা , আন্তর্জাতিক সেমিনার অংশগ্রহণ, ভাষাগত দক্ষতা , বিশ্লেষণে দক্ষতা এবং লেখালেখির দক্ষতা ইত্যাদি।

এবার যদি নির্দিষ্ট করে চাকরির ক্ষেত্রে গুলো বলি তাহলে আপনার জন্য রয়েছে সুবিশাল সুযোগ। যেমন:-
১. সরকারি কূটনৈতিক চাকরি (Public Diplomacy) :
• পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (Ministry of Foreign Affairs – MOFA)।
• বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডার (BCS Foreign Affairs Cadre)।
• দেশের বিভিন্ন দূতাবাস ও হাইকমিশনে পোস্টিং।
• প্রটোকল অফিসার, দূতাবাস অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, দূতাবাস অনুবাদক।

২. আন্তর্জাতিক সংস্থা (International Organizations):
• জাতিসংঘ (UN) – UNDP, UNESCO, UNICEF, UNHCR।
• ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (EU)।
• OIC (Organisation of Islamic Cooperation)।
• SAARC, ASEAN, AU (African Union) ইত্যাদি।
• World Bank, IMF, WTO, International Court of Justice (ICJ)।

৩. আন্তর্জাতিক এনজিও ও থিংক ট্যাঙ্ক (NGOs & Think Tanks):
• Amnesty International
• International Crisis Group
• Human Rights Watch
• BRAC International
• The Asia Foundation
• Diplomatic think tanks like Chatham House, Carnegie Endowment, etc.

৪. শিক্ষা ও গবেষণা (Academia & Research)
• আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বা রাজনীতি বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা।
• গবেষণা সংস্থা ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক গবেষক।
• পলিসি অ্যানালিস্ট বা পলিসি অ্যাডভাইজার।

৫. পাবলিক ডিপ্লোমেসি ও মিডিয়া:
• আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সাংবাদিকতা বা বিশ্লেষক।
• মিডিয়া হাউজে আন্তর্জাতিক রিপোর্টার বা ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্ট।
• আন্তর্জাতিক প্রচার ও ব্র্যান্ডিং সংস্থা (Public Affairs Officer)।

৬. প্রাইভেট কোম্পানি ও মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেশন (MNCs):
• আন্তর্জাতিক লিয়াজোঁ অফিসার (International Liaison Officer)।
• গ্লোবাল স্ট্রাটেজি, আন্তর্জাতিক নীতি, বা সরকার সম্পর্ক বিভাগে চাকরি।

যদি হতে চাও কূটনীতিবিদ তাহলে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে বিশ্ব নেতৃত্বের এক নতুন জগৎ। সেই জগতের রাজা হতে আজ থেকে শুরু হোক প্রস্তুতি যাত্রা। এক বিশ্ব নেতৃত্বের।।

 

লেখক: শিক্ষার্থী এবং প্রাবন্ধিক