ঢাকা ০৩:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ধরন পাল্টিয়ে নতুন রূপে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ কর্মী হৃদয়ের বিরুদ্ধে

ধরন পাল্টিয়ে নতুন রূপে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ কর্মী হৃদয়ের বিরুদ্ধে

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) “শহীদ স্মৃতি শর্টপিচ টুর্নামেন্ট” আয়োজনের আড়ালে অমৃত লাল দে কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের কতিপয় শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের কাছ থেকে গণহারে চাঁদা তোলার অভিযোগ উঠেছে। এই কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অমৃত লাল দে কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমন খন্দকার হৃদয়।

হৃদয় পূর্বে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন এবং বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে চাঁদা তোলার অভিযোগও ছিল। তার সহপাঠীদের দাবি, তিনি এখনো ছাত্রলীগের আদর্শ ধারণ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী বলেন, “হৃদয়ের ফেসবুকজুড়ে এখনো আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্ট্যাটাস ভরা।” এ সংক্রান্ত ফেসবুক পোস্ট প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এর আগে চাঁদা দাবি নিয়ে একটি অনলাইন পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হলে হৃদয় প্রতিবেদক ও সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অমৃত লাল দে কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, “হৃদয় তার নিজের ইচ্ছামতো তাদের কলেজের নামে একটি অ্যাসোসিয়েশন খুলে নিজের ইচ্ছামতো কমিটি দিয়েছেন।” বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরে হৃদয়কে চাঁদা তুলতে দেখা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চাঁদা তোলার এই প্রক্রিয়া তাদের জন্য যথেষ্ট বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

তারা আরও জানান, ওই ব্যক্তি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীকে সাথে নিয়ে একটি চিঠি ধরিয়ে দিয়ে গণহারে অ্যাসোসিয়েশনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরে গিয়ে চাঁদা দাবি করছেন।

কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক শিক্ষকের কাছে চাঁদা দাবির সময় ইমন খন্দকার হৃদয়ের অশোভন আচরণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুসারে, ঐ শিক্ষক শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কথা বলায় হৃদয় তার সাথে অশোভন আচরণ করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঐ শিক্ষক বলেন, “এরা তো চরম বেয়াদব। শিক্ষকদের কাছে টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য এভাবে কেউ চাঁদা তোলে? নিজেদের সক্ষমতা না থাকলে টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রয়োজন কী? বিষয়গুলো আমাদের শিক্ষকদের জন্য যথেষ্ট বিব্রতকর।”

অর্থ দপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আয়োজনটি যেহেতু অমৃত লাল দে কলেজ অ্যাসোসিয়েশন থেকে করা হয়েছে, সেহেতু ঐ অ্যাসোসিয়েশনের সাথে যারা যুক্ত, তারা এখানে টাকা দিবে। আমরা বাইরের যারা আছি, তাদের কাছে চিঠি দিয়ে কেন টাকা দাবি করা হচ্ছে? বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা চাকরি করি, এভাবে আমাদের কাছে আসলে তো আমরা ফিরাতে পারি না। বিষয়টি আমাদের জন্য যথেষ্ট বিব্রতকর।”

চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিনহাজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, “এটা আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য অবমাননাকর। এসব চাঁদাবাজি বন্ধে কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকতে হবে।”

অমৃত লাল দে কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমন খন্দকার হৃদয় নিজেকে ‘দৈনিক আজকের সময়ের বার্তা’ নামক একটি পত্রিকার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার দাবি করে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই-আগস্টে শহীদদের স্মরণে আগে কোনো খেলাধুলার আয়োজন করা হয়নি। সেজন্য তারা সকল শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের থেকে স্বেচ্ছায় টাকা তুলছেন। তিনি আরও জানান, তাদের বাজেট ৩০ হাজার টাকার অধিক, যার জন্য তারা গণচাঁদা তুলছেন। তবে তিনি কাউকে কোনো প্রকার টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন না বলেও দাবি করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. রাহাত হোসাইন ফয়সাল বলেন, “টুর্নামেন্টের বিষয়ে লিখিত অনুমতি নিলেও টাকা তোলার বিষয়ে মৌখিক বা লিখিতভাবে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

নওগাঁর চৌদ্দমাইলে ট্রাক সংঘর্ষে নিহত -১

ধরন পাল্টিয়ে নতুন রূপে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ কর্মী হৃদয়ের বিরুদ্ধে

আপডেট সময় ১১:৪৭:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) “শহীদ স্মৃতি শর্টপিচ টুর্নামেন্ট” আয়োজনের আড়ালে অমৃত লাল দে কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের কতিপয় শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের কাছ থেকে গণহারে চাঁদা তোলার অভিযোগ উঠেছে। এই কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অমৃত লাল দে কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমন খন্দকার হৃদয়।

হৃদয় পূর্বে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন এবং বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে চাঁদা তোলার অভিযোগও ছিল। তার সহপাঠীদের দাবি, তিনি এখনো ছাত্রলীগের আদর্শ ধারণ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী বলেন, “হৃদয়ের ফেসবুকজুড়ে এখনো আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্ট্যাটাস ভরা।” এ সংক্রান্ত ফেসবুক পোস্ট প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এর আগে চাঁদা দাবি নিয়ে একটি অনলাইন পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হলে হৃদয় প্রতিবেদক ও সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অমৃত লাল দে কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, “হৃদয় তার নিজের ইচ্ছামতো তাদের কলেজের নামে একটি অ্যাসোসিয়েশন খুলে নিজের ইচ্ছামতো কমিটি দিয়েছেন।” বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরে হৃদয়কে চাঁদা তুলতে দেখা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চাঁদা তোলার এই প্রক্রিয়া তাদের জন্য যথেষ্ট বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

তারা আরও জানান, ওই ব্যক্তি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীকে সাথে নিয়ে একটি চিঠি ধরিয়ে দিয়ে গণহারে অ্যাসোসিয়েশনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরে গিয়ে চাঁদা দাবি করছেন।

কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক শিক্ষকের কাছে চাঁদা দাবির সময় ইমন খন্দকার হৃদয়ের অশোভন আচরণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুসারে, ঐ শিক্ষক শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কথা বলায় হৃদয় তার সাথে অশোভন আচরণ করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঐ শিক্ষক বলেন, “এরা তো চরম বেয়াদব। শিক্ষকদের কাছে টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য এভাবে কেউ চাঁদা তোলে? নিজেদের সক্ষমতা না থাকলে টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রয়োজন কী? বিষয়গুলো আমাদের শিক্ষকদের জন্য যথেষ্ট বিব্রতকর।”

অর্থ দপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আয়োজনটি যেহেতু অমৃত লাল দে কলেজ অ্যাসোসিয়েশন থেকে করা হয়েছে, সেহেতু ঐ অ্যাসোসিয়েশনের সাথে যারা যুক্ত, তারা এখানে টাকা দিবে। আমরা বাইরের যারা আছি, তাদের কাছে চিঠি দিয়ে কেন টাকা দাবি করা হচ্ছে? বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা চাকরি করি, এভাবে আমাদের কাছে আসলে তো আমরা ফিরাতে পারি না। বিষয়টি আমাদের জন্য যথেষ্ট বিব্রতকর।”

চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিনহাজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, “এটা আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য অবমাননাকর। এসব চাঁদাবাজি বন্ধে কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকতে হবে।”

অমৃত লাল দে কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমন খন্দকার হৃদয় নিজেকে ‘দৈনিক আজকের সময়ের বার্তা’ নামক একটি পত্রিকার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার দাবি করে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই-আগস্টে শহীদদের স্মরণে আগে কোনো খেলাধুলার আয়োজন করা হয়নি। সেজন্য তারা সকল শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের থেকে স্বেচ্ছায় টাকা তুলছেন। তিনি আরও জানান, তাদের বাজেট ৩০ হাজার টাকার অধিক, যার জন্য তারা গণচাঁদা তুলছেন। তবে তিনি কাউকে কোনো প্রকার টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন না বলেও দাবি করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. রাহাত হোসাইন ফয়সাল বলেন, “টুর্নামেন্টের বিষয়ে লিখিত অনুমতি নিলেও টাকা তোলার বিষয়ে মৌখিক বা লিখিতভাবে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি।