দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই দেশ থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার মাঝে কয়েক মাস ধরে চলা উত্তেজনা ভয়াবহ সামরিক সংঘাতে রূপ নিয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রতিবেশী দুই দেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা পাল্টাপাল্টি বিমান ও রকেট হামলা চালিয়েছে।
কম্বোডিয়ার সামরিক স্থাপনায় মার্কিন এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে থাইল্যান্ড। জবাবে কম্বোডিয়াও পাল্টা হামলা চালিয়েছে। এতে থাইল্যান্ডে অন্তত ১২ জন নিহত ও আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কম্বোডিয়ারও।
গত কয়েক দশকের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের মাঝে বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) তথ্য অনুযায়ী দুই দেশের সামরিক শক্তি ও অস্ত্রভাণ্ডারের তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো :
বাজেট ও স্থলবাহিনী
গত বছর কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা বাজেটের পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। দেশটির সক্রিয় সেনা সদস্য রয়েছেন ১ লাখ ২৪ হাজার ৩০০ জন। ১৯৯৩ সালে কম্বোডিয়ার সাবেক কমিউনিস্ট সামরিক বাহিনী ও অন্য দুটি প্রতিরোধ বাহিনীর সংমিশ্রণে বর্তমান সশস্ত্র বাহিনী গঠন করা হয়েছিল।
দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সেনাবাহিনীই সবচেয়ে বড়। কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনীতে প্রায় ৭৫ হাজার সৈন্য রয়েছেন। তাদের সহায়তায় আছে ২০০টিরও বেশি যুদ্ধ ট্যাঙ্ক ও ৪৮০টি আর্টিলারি।
থাইল্যান্ডকে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর বাইরের প্রধান মিত্র হিসেবে বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির বৃহৎ ও ব্যাপক অর্থায়নের সামরিক বাহিনী আছে। ২০২৪ সালে থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল ৫ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। দেশটির সশস্ত্র বাহিনীতে সক্রিয় সদস্যের সংখ্যা ৩ লাখ ৬০ হাজারের বেশি।
থাই সেনাবাহিনীতে মোট ২ লাখ ৪৫ হাজার সদস্য রয়েছেন। যার মধ্যে ১ লাখ ১৫ হাজার জন নিয়োগপ্রাপ্ত। দেশটির এই বাহিনীতে প্রায় ৪০০ যুদ্ধ ট্যাঙ্ক, ১ হাজার ২০০টিরও বেশি সাঁজোয়া যান এবং প্রায় ২ হাজার ৬০০ আর্টিলারি অস্ত্র রয়েছে।
থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনীর নিজস্ব বিমানবহরও রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কেনা ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার, মনুষ্যবিহীন ড্রোনের পাশাপাশি যাত্রীবাহী বিমানও রয়েছে।
বিমানবাহিনী
কম্বোডিয়ার বিমানবাহিনীর সদস্য সংখ্যা মাত্র দেড় হাজার। এছাড়া দেশটির বিমানবাহিনীতে ১০টি পরিবহন বিমান ও ১০টি পরিবহন উড়োজাহাজের ছোট একটি বহর আছে। কম্বোডিয়ার বিমানবাহিনীর কাছে কোনও যুদ্ধবিমান নেই। তবে ১৬টি বহুমুখী অভিযান পরিচালনাকারী উড়োজাহাজ আছে। এর মধ্যে ছয়টি সোভিয়েত যুগের এমআই-১৭ এবং ১০টি চীনা জেড-৯এস।
থাইল্যান্ডের বিমানবাহিনীকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম সজ্জিত ও প্রশিক্ষিত বাহিনী হিসেবে মনে করা হয়। এই বাহিনীতে প্রায় ৪৬ হাজার সদস্য, ১১২টি কমব্যাট বিমান রয়েছে। যার মধ্যে ২৮টি এফ-১৬ ও ১১টি সুইডিশ গ্রিপেন যুদ্ধবিমান রয়েছে। এছাড়াও তাদের বহরে আছে প্রায় এক ডজন উড়োজাহাজ।
নৌবাহিনী
কম্বোডিয়ার নৌবাহিনীতে প্রায় ২ হাজার ৮০০ সদস্য রয়েছেন। যার মধ্যে ১ হাজার ৫০০ নৌ পদাতিক সৈন্য রয়েছেন। এছাড়া ১৩টি টহল ও উপকূলীয় যুদ্ধজাহাজের পাশাপাশি একটি উভচর অবতরণ জাহাজ রয়েছে।
থাইল্যান্ডের নৌবাহিনী তুলনামূলক অনেক বড়। এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। এতে নৌ-বিমান ইউনিট, মেরিন, উপকূলরক্ষী বাহিনী ও নিয়োগপ্রাপ্ত সদস্যরা রয়েছেন।
থাই নৌবহরে একটি বিমানবাহী রণতরী, সাতটি ফ্রিগেট, ৬৮টি টহল ও উপকূলীয় যুদ্ধজাহাজ আছে। এছাড়া থাই নৌবহরে কয়েকটি উভচর এবং অবতরণকারী জাহাজ রয়েছে। এসব জাহাজে শত শত সৈন্য ও ১৪টি ছোট অবতরণকারী বিমান রাখার ব্যবস্থা রয়েছে।
দেশটির নৌবিমান ইউনিটের উড়োজাহাজ ও ড্রোনের নিজস্ব বহর রয়েছে। মেরিন কোরে ২৩ হাজার সদস্য আছেন। এই কোরের নিয়ন্ত্রণে আছে প্রায় এক ডজন সশস্ত্র যুদ্ধযান।