ওয়ানডে বিশ্বকাপের সুর বাজলেই ভেসে আসে অস্ট্রেলিয়ার জয়গানের উল্লাস। এই আসরের সর্বোচ্চ পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন তাসমান সাগরপাড়ের দেশটি। সবশেষ ২০১৫ সালে পঞ্চমবারের মত শিরোপা জিতেছিল রিকি পন্টিংয়ের উত্তরসূরীরা। এবার আরেকটি শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে উপস্থিত অজিরা। যে মঞ্চে তাদের প্রতিপক্ষ তৃতীয় শিরোপার খোঁজে থাকা স্বাগতিক ভারত।
ভারতে দীপাবলির ছুটি শেষ হওয়ার পথে। তবে এই উৎসব শেষ হওয়ার আগেই আরেকটি উৎসবের দেড়গোড়ায় দেড়শ কোটি মানুষ। যে উৎসবকে কেন্দ্র করে সেজেছে ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাঠ নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম। আহমেদাবাদে সাবারমাতি নদীর তীরে সেই উচ্ছ্বাসের ঢেউ এখন গোটা ভারতে বয়ে যাওয়ার অপেক্ষা। সেই অপেক্ষার অবসান ঘটাতেই আজ বেলা দুপুর আড়াইটায় পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে মাঠে নামবে উৎসবের অপেক্ষায় থাকা ভারত।
ফাইনালের মঞ্চে ফেভারিট বলতে কিছু থাকে না। দীর্ঘ ৪৫ দিনের লড়াই শেষে দশটি দল থেকে দুটি দল যখন সোনালি ট্রফি ছিনিয়ে নেওয়ার লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়। তখন লড়াইটা হয়ে যায় দুর্মর। কেউ কাউকে নাহি ছাড়ি অবস্থা! তবে নিজেদের মাঠ বলে চূড়ান্ত হিসেবনিকেশ শেষে ভারতই খানিকটা এগিয়ে থাকবে। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ম্যাচের আগের দিনই বলে দিয়েছেন, ১ লাখ ৩০ হাজার দর্শকই গলা ফাটাবেন ভারতের পক্ষে। প্রতিপক্ষকে ভড়কে দিতে আর কী লাগে!
কিন্তু ফাইনালের দলটা অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালের মঞ্চে এলেই যাদের ক্রিকেটীয় ঐতিহ্য ঠিকরে বেরোয়। একবার জয়ের স্রোতে পড়ে গেলে সমুদ্র দখল না করে যে জোয়ার থামে না। গ্রুপ পর্বে সেটাই দেখালো প্যাট কামিন্সের দল। পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তারা। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের চিরায়ত রক্ত প্রবাহিত হয় তাদের শিরায়। কামিন্স সেটাই আওড়ে গেলেন, ‘দর্শক সমর্থন অবশ্যই ভীষণ রকমের একতরফা থাকবে। বিশাল সংখ্যক দর্শককে চুপ করিয়ে দিতে পারার চেয়ে তৃপ্তিদায়ক কিছু খেলাধুলায় আর নেই!’
শক্তিমত্তায় দুই প্রতিপক্ষের কাউকে এগিয়ে রাখার সুযোগ নেই। ভারতের ব্যাটিং লাইন আপের প্রথম পাঁচজনই আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। ২০০৭ বিশ্বকাপের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন রোহিত, শুভমান গিল, শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুল ও বিরাট কোহলিরা। নিজেদের ভূমিকা তারা পালন করে চলেছেন সুনিপুণভাবে। প্রতি ম্যাচেই উড়ন্ত সূচনা এনে দিচ্ছেন রোহিত, পরিস্থিতি বুঝে খেলছেন গিল। উত্তাল সমুদ্রে নির্ভীক নাবিক হয়ে আছেন কোহলি। আইয়ার ও রাহুল ঝড় তুলছেন শেষের দিকটায়।
বোলিংয়ে জাসপ্রিত বুমরাহ ও মোহাম্মদ সিরাজ রান আটকাচ্ছেন, উইকেট তুলে নিচ্ছেন। মোহাম্মদ শামি এসে পাল্টা আক্রমণে প্রতিপক্ষ শিবিরে ছড়াচ্ছেন আতঙ্ক। রবীন্দ্র জাদেজা ও কুলদিপ যাদব সুযোগ পেলেই দেখাচ্ছেন ঘূর্ণির মায়াবি জাদু। তাতে ফাঁদে পা দিয়ে আটকে যাচ্ছে প্রতিপক্ষ।
অস্ট্রেলিয়াও পিছিয়ে নেই। ওয়ার্নারের অভিজ্ঞতা ঠিকরে বেরুচ্ছে হিরের মতো। মিচেল মার্শ পেশী শক্তিতে ছয় আউন্সের চেরিটাকে চোখের পলকে আছড়ে ফেলছেন উত্তাল গ্যালারিতে। স্মিথ দেখাচ্ছেন নিজের অভিজ্ঞতা। মার্নাস লাবুশেন রান করে যাচ্ছেন বুঝেশুনে। ভারত যাকে থামানোর জন্য সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে, সেই গ্লেন ম্যাক্সওয়েল একবার দাঁড়িয়ে গেলে তার ব্যাটের বিষাক্ত আচড়ে নীল সমুদ্রে নীলাভ হয়ে উঠতে পারেন ভারতীয় দর্শকরা।
তবে ট্রফির স্বপ্নে বিভোর থাকা গোটা দেশের আঁচ যে গায়ে লাগছে, সেটা স্বীকার করলেন রোহিত। তাতে ভালো কিছু উপহার দিতে চান, ‘ইমোশনালি, অবশ্যই এটা বড় ব্যাপার, বড় উপলক্ষ্য। কোনো সংশয় নেই। যতটা কঠোর পরিশ্রম, যত স্বপ্ন, সব এই দিনকে ঘিরেই। কালকে সেই দিনটি আমাদের সামনে আসছে। তবে পেশাদার অ্যাথলেটদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জই তো এটা যে, কীভাবে সবকিছু এক পাশে সরিয়ে মূল কাজে মনোযোগ দিতে পারে। আমার সঙ্গে আরও ১০ ক্রিকেটার কাল তাই মাঠে নামবে নিজেদের কাজে মন দিতে, জীবনের সেরা মুহূর্ত হিসেবে তারা ভাববে না।’
বিশ্বকাপে লড়াইয়ের হিসেব আসলেও এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। সব মিলিয়ে পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপে ১৩ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। তাতে অস্ট্রেলিয়ার ৮ জয়ের বিপরীতে ভারতের জয় ৫টিতে।তবে শেষ দুটি ম্যাচ কথা বলছে ভারতের পক্ষে। ২০১৯ সালে ও চলতি আসরের গ্রুপ পর্বে অজিদের হারিয়েছে ভারত।