২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় মানিকগঞ্জ জেলায় মোট ১৫ হাজার ৩৪৬ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এই পরীক্ষায় পাস করেছে ৮ হাজার ৪৫৫ জন শিক্ষার্থী। অন্যদিকে, ফেল করেছে ৬ হাজার ৮৯১ জন, যা জেলার মোট পরীক্ষার্থীর প্রায় ৪৫ শতাংশ। পাসের হার ৫৫.০৯ শতাংশ—যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম বলেই অভিমত স্থানীয় শিক্ষাবিদদের।
জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী পাস করেছে সিংগাইর উপজেলা থেকে। এই উপজেলায় মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬১.৭৭ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। অন্যদিকে, জেলার মধ্যে সবচেয়ে কম পাসের হার রেকর্ড হয়েছে দৌলতপুর উপজেলায়, যেখানে পাশ করেছে মাত্র ৪২.৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী।
শুধু পাস নয়, সর্বোচ্চ ফলাফল জিপিএ-৫ অর্জনের ক্ষেত্রেও রয়েছে উপজেলাভিত্তিক বড় ধরনের পার্থক্য। জেলার সদর উপজেলা এই দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে। এখানকার ২১৯ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করেছে, যা জেলার অন্য যেকোনো উপজেলার তুলনায় অনেক বেশি।
দৌলতপুর উপজেলা এখানে আবারও পিছিয়ে পড়েছে। এই উপজেলায় জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ১৩ জন শিক্ষার্থী। ফলে পাসের হার এবং সর্বোচ্চ গ্রেড অর্জন—দুই ক্ষেত্রেই সবচেয়ে পিছিয়ে দৌলতপুর।
জেলার বাকি অন্যান্য উপজেলার ফলাফল তুলনামূলকভাবে মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে। তবে সিংগাইরের ধারাবাহিক ভালো ফলাফল এবং সদরের শিক্ষার্থীদের জিপিএ-৫ অর্জন অনেকটাই জেলার সম্মান বাঁচিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ফলাফলের এই বৈষম্যের পেছনে রয়েছে শিক্ষকদের অভাব, অবকাঠামোগত দুর্বলতা, এবং শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার ঘাটতি। বিশেষ করে দৌলতপুর ও হরিরামপুরের মতো কিছু উপজেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা কম, পাশাপাশি পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার মানে ব্যত্যয় ঘটছে।
এদিকে অভিভাবকদের অনেকেই সন্তোষ প্রকাশ করলেও পাশের হার কমে যাওয়ায় উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করছেন, জেলার শিক্ষা ব্যবস্থায় আরও মনোযোগ ও বিনিয়োগ প্রয়োজন, বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া উপজেলাগুলোর দিকে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, “আমরা উপজেলাভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণ করছি। যেসব উপজেলায় ফলাফল খারাপ হয়েছে, সেখানে বিশেষ একাডেমিক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে। এছাড়া, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং বিদ্যালয়ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ জোরদার করার পরিকল্পনা রয়েছে।”
সব মিলিয়ে, মানিকগঞ্জ জেলার এবারের এসএসসি ফলাফল জেলায় শিক্ষা ব্যবস্থার ভারসাম্যহীন চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। সিংগাইর ও সদর উপজেলার অগ্রগতি যেমন আশার আলো দেখায়, তেমনি দৌলতপুর ও কিছু পিছিয়ে থাকা এলাকার ফলাফল ভবিষ্যতের জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আবিদ/ঢাকাভয়েস২৪